• ‘দাদা, আমাদের ছবি তুলবেন না’, ভয়ে কাঁপলেন আউটপোস্টের পুলিসকর্মীরাই
    বর্তমান | ১৭ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা। ইমার্জেন্সির গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকে হাঁটতে হচ্ছে এক পা এক পা করে। ঘরজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে গত রাতের তাণ্ডবের চিহ্ন। জানালার ভাঙা কাচ, টিউবলাইট, ভাঙা প্লাই, ভাঙা টেবিল-চেয়ার। ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছে ওষুধপত্র, স্যালাইনের বোতল। ভাঙা কল থেকে অনর্গল জল পড়ে যাচ্ছে। বিদ্যুতের ছেঁড়া তার পড়ে রয়েছে যত্রতত্র। ইমার্জেন্সির টিকিট কাউন্টার, নতুন এইচডিইউ সিস্টার স্টেশন, টিচিং রুম, টেলিনিউরো মেডিসিনের ঘরগুলি দেখে মনে হচ্ছিল, কোনও দানব যেন বাড়িটা ধরে ঝাঁকিয়ে দিয়ে গিয়েছে! কয়েক কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম একটিও আস্ত নেই। কিন্তু যাঁদের উপর এসব রক্ষার ভার ছিল, তাঁরা কোথায়? 

    হাসপাতালের পুলিস আউটপোস্টের পাশেই পুলিস বারাক। সেখানে এক জায়গায় দেখা গেল, হামলাকারীরা পুলিসের ইউনিফর্ম পর্যন্ত ডাঁই করে পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করেছে। বারাকে গাদাগাদি করে বসে আছেন বিধ্বস্ত কয়েকজন পুলিসকর্মী। তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে একজন আগেভাগে বলে দিলেন, ‘চারপাশে যা ছবি করার করুন। কিন্তু দয়া করে আমাদের ছবি তুলবেন না। কাগজে বেরলে ওরা চিনে ফেলবে। ওরা আবার আসবে… প্রাণে মেরে ফেলবে এবার।’ আরেক পুলিসকর্মী বারাকের একদিকের একটি দরজা দেখিয়ে বললেন, ‘এই দরজাটার জন্য প্রাণ বেঁচেছে। না হলে কেউ থাকতাম না।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কনস্টেবল বলেন, ‘রাতে কত লোক ঢুকেছিল, বলতে পারব না। তবে হাজারের বেশি হবে। বারাকের ভিতরে ঢুকে ওরা ইউনিফর্ম পুড়িয়ে দিল। তখন আমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছে ওই দরজাটা। আমাদের ঘরে আশ্রয় নিয়েছিলেন ভীত সন্ত্রস্ত নার্সরাও।’ দরজা খুলে পুলিসকর্মী দেখালেন, ঠিক বাইরেই বাঁদিকে একটি সরু প্যাসেজ দিয়ে গেলে একটি ছোট গেট। তার বাইরেই আর জি কর রোড। এক-একজন করে নার্সকে তাঁরা ওই পথ দিয়ে বেরিয়ে যেতে সাহায্য করেন বলে জানালেন তিনি। আরও বললেন, ‘আমরাও যে ক’জন পেরেছি, ওই রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছি। পরে ফিরে এসে দেখেছি, সব তছনছ করে দিয়ে গিয়েছে।’ 

    ইমার্জেন্সি থেকে বেরলে সামনেই একটি খাবারের দোকান। সেখানকার দুই কর্মী নকুল সাউ এবং রূপকুমার প্রামাণিক তাঁদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরলেন। নকুলবাবু বলেন, ‘দোকানের দোতলায় আমরা ঘুমোই। রাত ১টার দিকে প্রচণ্ড চিৎকারে আমাদের ঘুম ভেঙে গেল। হঠাৎ দেখি, ইমার্জেন্সি দিয়ে পিলপিল করে লোক ঢুকছে। হাতের কাছে যা পাচ্ছে, তাই ভেঙে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। যেসব জিনিস ওরা ভাঙছে, সেগুলিই ছুড়ে মারছে অন্য কোনও যন্ত্রপাতি বা কাচের দরজা-জানালায়। আমরা সঙ্গে সঙ্গে দোকানের শাটার নামিয়ে দিলাম। দোতলায় আমরা যেখানে ঘুমোই, তার পাশের একটি দরজা দিয়ে নীচে কী হচ্ছে দেখছিলাম। হামলাকারীরা বেশিরভাগই কমবয়সি। কয়েকজন মহিলাও ছিলেন। তাঁদের অবশ্য ভাঙচুর করতে দেখিনি। কিছুক্ষণের মধ্যে হামলা শুরু হল আমাদের দোকানেই। সিসিটিভিগুলো ভেঙে ফেলল। সামনে টব রাখা ছিল। তা ছুড়ে আমাদের দোকানের কাচ ভেঙে দিল। ঘর অন্ধকার করে ভিতরে বসে তখন আমরা ঠাকুরকে ডাকছি।’
  • Link to this news (বর্তমান)