বহির্বিভাগে পরিষেবা কার্যত শিকেয় উঠেছে বলে অভিযোগ। অন্তর্বিভাগেও চিকিৎসা পরিষেবা ঢিমেতালে চলছে। হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা যেখানে ডাক্তারি পড়ুয়াদের উপরে অনেকাংশে নির্ভরশীল, সেখানে তাঁদের কর্মবিরতিতে প্রভাব পড়াই স্বাভাবিক। এর জেরে টানা ভোগান্তির শিকার বাঁকুড়া মেডিক্যালে আসা রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা। তবে শুক্রবার পুরুলিয়া মেডিক্যালে চিকিৎসা পরিষেবা স্বাভাবিক ছিল।
আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে বাঁকুড়া মেডিক্যালের ডাক্তারি পড়ুয়া ও জুনিয়র ডাক্তারেরা লাগাতার কর্মবিরতি চালাচ্ছেন। এর জেরে বাঁকুড়া মেডিক্যালে চিকিৎসা পরিষেবা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। হাসপাতালে প্রায় ৫৫০ জন শিক্ষানবীশ চিকিৎসক রয়েছেন। শিক্ষক-চিকিৎসক রয়েছেন প্রায় ২০৪ জন। শিক্ষানবীশ চিকিৎসকেরা কর্মবিরতিতে চলে যাওয়ায় শিক্ষক-চিকিৎসকদের দিয়েই পরিষেবা সচল রাখতে চেষ্টা চালাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
রোগীদের একাংশের দাবি, তাঁরাও আর জি কর কাণ্ডে দোষীদের কড়া সাজা চান। কিন্তু সরকারি হাসপাতালের উপরে নির্ভরশীলদের অধিকাংশই দুঃস্থ। মেডিক্যালের বহির্বিভাগ বন্ধ থাকায় তাঁদের অনেকের পক্ষে টাকা দিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে যাওয়া সম্ভব নয়। ফলে একপ্রকার বিনা চিকিৎসায় থাকতে হচ্ছে। কর্মবিরতির প্রথম দিন সন্ধ্যায় বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি রোগীর আত্মীয়েরা অন্তর্বিভাগে পরিষেবা না পাওয়ার অভিযোগে পথ অবরোধ করেছিলেন।
রোগীর আত্মীয়দের ক্ষোভ প্রকাশের পরে বার বার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরিষেবা সচল রাখার দাবি করলেও বাস্তবে তা যে হচ্ছে না, সেটা প্রকাশ্যে এসেছে। বহির্বিভাগে নিয়মিত চিকিৎসক মিলছে না। জরুরি অস্ত্রোপচার ছাড়া অন্যান্য অস্ত্রোপচারও বন্ধ। ভর্তি থাকা রোগীদের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেই (পুরোপুরি সুস্থ নয়) ছুটি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।
বাঁকুড়া মেডিক্যালের চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, যা পরিস্থিতি তাতে রোগীদের স্বাভাবিক পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয়। জরুরি নয় (কোল্ড অপারেশন) এমন অস্ত্রোপচারের জন্য আসা রোগীদের এখন ভর্তি না করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। হাইড্রোসিল, হার্নিয়া, গলব্লাডারে পাথর, ছানি অস্ত্রোপচারের জন্য আসা রোগীদের হাসপাতালের পরিষেবা স্বাভাবিক হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে বলে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
গঙ্গাজলঘাটি থেকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে আসা রোগী সঞ্জিৎ মাজি বলেন, “পেট ব্যথা, বমির উপসর্গ ছিলই। সদ্য পরীক্ষা করিয়ে গলব্লাডারে পাথর রয়েছে বলে ধরা পড়েছে। বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি হতে গিয়েছিলাম অস্ত্রোপচার করানোর জন্য। বর্তমান পরিস্থিতিতে হাসপাতালের পরিষেবা বেহাল থাকায় পরে ভর্তি হতে বলা হয়েছে।’’
হাসপাতালে ভর্তি সদ্য অস্ত্রোপচার হওয়া রোগীরাও সঠিক চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ উঠছে। সারেঙ্গার বাসিন্দা সদানন্দ মাইতির অভিযোগ, “দিন দশেক আগে মায়ের শ্বাসনালীতে অস্ত্রোপচার হয়েছে বাঁকুড়া মেডিক্যালে। কর্মবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকেই ওয়ার্ডে চিকিৎসক বিশেষ আসছেন না। মায়ের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তায় রয়েছি।”
অভিযোগ পুরোপুরি উড়িয়ে দিতে পারছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বাঁকুড়া মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পঞ্চানন কুন্ডু বলেন, “এটা ঠিকই যে স্বাভাবিক সময়ে যেমন পরিষেবা দেওয়া যায়, এখন ততটা দেওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু রোগীরা জরুরি পরিষেবা পাচ্ছেন। শিক্ষক-চিকিৎসকেরা সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁদের সাহায্যের জন্য গবেষণায় যুক্ত চিকিৎসকদেরও ওয়ার্ডে পাঠানো হচ্ছে। আমাদের পরিকাঠামো অনুযায়ী যতটা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব, দিচ্ছি।”
পুরুলিয়া মেডিক্যালে বহির্বিভাগ খোলা থাকায় স্বস্তিতে রোগীরা। বরাবাজারের অম্বুজ মাহাতো বলেন, ‘‘এ দিন ডাক্তার দেখাতে পারব কি না, সংশয়ে ছিলাম। চর্মরোগ বিভাগে ডাক্তার পেয়েছি।’’ আড়শার সটরা গ্রামের প্রতিমা কুমার জানান, কপাল ঠুকে এসেছিলেন। আগের দিন এসে কোনও বিভাগেই ডাক্তার পাননি। হাসপাতালের সুপার সুকমল বিষই বলেন, ‘‘এ দিন বহির্বিভাগের পরিষেবা সচল ছিল।’’
তবে ডাক্তারি পড়ুয়ারা জানিয়েছেন, আন্দোলন জারি রয়েছে। এ দিনও তাঁরা ক্লাস করেননি। আর জি করে বহিরাগতদের হামলার প্রতিবাদে তাঁরা পুলিশকে নিরাপত্তার দাবিতে স্মারকলিপি দেন।
চিকিৎসকদের সংগঠন আইএমএ-র পুরুলিয়া জেলা শাখা জানিয়েছে, আজ, শনিবার দেশ জুড়ে যে কর্মবিরতির ডাকা হয়েছে, পুরুলিয়া তাতে সাড়া দেবে।
সুবিচার চেয়ে সরব হন বান্দোয়ান ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। এ দিন বিএমওএইচ কাজিরাম মুর্মু-সহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা প্ল্যাকার্ড হাতে স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে বিক্ষোভ দেখান। পাত্রসায়র ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিক্ষোভ দেখান নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।