• আরজি কর-কাণ্ডের এক সপ্তাহ পার, যা যা জানা গেল, যা এখনও অজানা
    আজ তক | ১৭ আগস্ট ২০২৪
  • আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে একজন স্নাতকোত্তর শিক্ষানবিশকে ধর্ষণ ও হত্যার এক সপ্তাহ পার। এখনও পর্যন্ত যা জানা গেছে তা সামান্যই। প্রচুর প্রশ্ন রয়েছে, যার কোনও সঠিক উত্তর নেই।

    প্রথম তদন্ত কখন এবং কার দ্বারা শুরু হয়েছিল?
    ৯ অগাস্ট সকাল ১০.১০টার দিকে হাসপাতালের সেমিনার হলে ওই তরুণী ডাক্তারের লাশ পাওয়া যায়। টালা থানায় খবর দেওয়া হয়। প্রথমে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। তারপর লালবাজারের হোমিসাইড বিভাগের একটি দল পৌঁছয়। পুলিশ জানায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্ত শুরু হয়েছে।

    পুলিশ কি আত্মহত্যা মনে করে তদন্ত শুরু করেছিল?
    পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল জানিয়েছিলেন, অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা শুরু হয়। পরিবারের একজন সদস্যের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত শুরু হয়।

    পুলিশ কি একটি মামলাটিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল?
    এর উত্তরে পুলিশ না বলেছে। পুলিশের ভাবমূর্তি খারাপ করতে অপপ্রচার চলছে বলে জানান হয়েছে।

    পুলিশ কি পরিবারকে বলেছে এটা আত্মহত্যা?
    গোয়েল বলেছেন, “কেন এই ধারণা তৈরি করা হচ্ছে যে ইউডি মামলার অর্থ হল এটি আত্মহত্যার মামলা? এটা সত্য নয়। সমগ্র জনগণকে বোঝানো হচ্ছে। UD কেস মানে আত্মহত্যা, (যে) আমরা এটাকে আত্মহত্যার মামলা করতে চেয়েছিলাম। এটা সত্য নয়। আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। আইনের ধারা দিয়ে যান। দয়া করে ছড়াবেন না অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (আই), মুরলিধর বলেছেন, "পুলিশের পক্ষ থেকে পরিবারের কাছে এ ধরনের কোনও বার্তা যায়নি"।

    কখন প্রকাশিত হয় যে এটি একটি ধর্ষণ ও খুনের মামলা, কে করেছিল?
    পুলিশ জানিয়েছে, শরীরে আঘাতের চিহ্ন নির্যাতনের ইঙ্গিত দিয়েছে। ফরেনসিক পরীক্ষা এবং লাশ থেকে সংগ্রহ করা নমুনায় নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া গেছে। সন্ধে নাগাদ (৯ আগস্ট) স্পষ্ট হয়ে যায় যে মহিলাকে খুন করা হয়েছে। পরে রাতে (৯ আগস্ট) ময়নাতদন্তে মৃত্যু ও ধর্ষণের কারণ বেরিয়ে আসে। ওই রাতেই ধর্ষণ ও খুনের ধারায় মামলা দায়ের করে কলকাতা পুলিশ।

    মামলা/তদন্ত সিবিআই-এর কাছে হস্তান্তর করার আগে কতজন পুলিশ কর্মীকে বদলি/সরানো হয়েছিল?
    কলকাতা পুলিশের একজন সহকারী কমিশনার (এসিপি) যার আওতাধীন আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, তাঁকে অপসারণ করা হয়েছে। জুনিয়র ডাক্তারদের দাবিতে বদলির সূত্রপাত হয়।

    যেখানে অপরাধ হয়েছে, সেই জায়গাটি দেখতে ছিল?
    যে সেমিনার হলে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে, সেটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। রুমে একটি সাদা বোর্ড এবং ক্লাসের জন্য সাজানো চেয়ার রয়েছে। কিছু চেয়ার ছিল কাঠের আর কিছুতে লাল কুশন ছিল। এছাড়াও একটি কাঠের পোডিয়াম রয়েছে যা একটি মঞ্চ হিসাবে ব্যবহৃত হয় যখন ঘরে ইভেন্টগুলি সংগঠিত হয়। রুমে একটি মেডিকেল বেড ছিল। মহিলার মৃতদেহ কাঠের পডিয়ামের একটি গদিতে পড়ে থাকতে দেখা যায়। লাশের কাছে একটি প্লাস্টিকের জলের বোতল, একটি ভাঙা চশমা, একটি সার্জিক্যাল মাস্ক, একটি ল্যাপটপ, একটি নোটবুক ও একটি মোবাইল ফোন পাওয়া গেছে।

    ঘটনাস্থল কখন সিল করা হয়েছিল?
    শুক্রবার সকালে তদন্ত শুরু হয়। পুলিশ আসার পরপরই ক্রাইম সিন ঘিরে ফেলা হয়। সন্ধেয় লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠানোর পর ঘরটি সিলগালা করে দেওয়া হয়।

    অপরাধের ঘটনাস্থল থেকে কী কী প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়?
    কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, তারা মৃতদেহের কাছে থেকে একটি ইয়ারফোন উদ্ধার করেছে। পুলিশ বলেছে যে, সিসিটিভি ফুটেজ খুঁটিয়ে দেখার পর সময় তাঁরা দেখতে পেয়েছে যে, অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে ঢুকতে। তাকে ১০ অগাস্ট গ্রেফতার করা হয়। এবং দেখা গেছে সেমিনার হলে ঢোকার সময় তার ইয়ারফোনের প্লাগগুলি ছিল। কিন্তু বেরোনোর সময় ছিল না। এবং ঘটনার দিন সকালেও সঞ্জয় রায়কে সেমিনার হলের কাছে দেখা গেছে।
    ঘটনাস্থলে চিকিৎসকের ভাঙা চশমা উদ্ধার হয়।
    মহিলার পোশাক এবং বিছানার চাদর যেটিতে তাঁকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে (সেগুলি সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে)।
    শরীরের তরল এবং সন্দেহভাজন মানব কোষগুলি হার্নেলের মধ্যে পাওয়া গেছে (ফরেন্সিক্লাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে)।
    ফরেনসিক পরীক্ষা এখনও শেষ হয়নি।

    মৃত্যুর কারণ কি?
    গলাটিলে শ্বাসরোধ করে হত্যা বলে জানাচ্ছে পুলিশ।

    অপরাধের ঘটনাস্থল ও এখন কার হেফাজতে আছে?
    কলকাতা পুলিশ তাদের সংগ্রহ করা সমস্ত প্রমাণ সিবিআইকে দিয়েছে। ক্রাইম সিন- ভবনের তৃতীয় তলায় একটি কক্ষ যেখানে জরুরি বিভাগ রয়েছে - পুলিশ সিল করে দিয়েছে। কলকাতা পুলিশ বাইরে পাহারায় রয়েছে। শুধু সিবিআইয়েরই সেখানে প্রবেশাধিকার রয়েছে।

    সিবিআই কি আরও প্রমাণ পেয়েছে?
    শুক্রবার সন্ধে পর্যন্ত সিবিআই অফিসাররা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেননি।
    কেস ফাইল/ডায়েরি কাদের হেফাজতে আছে?
    সিবিআই।

    সন্দেহভাজন কার হেফাজতে? তাকে কোথায় রাখা হচ্ছে?
    সিবিআইয়ের হেফাজতে রয়েছে ধৃত সঞ্জয় রায়। এখন সল্টলেকের সিজিও (কেন্দ্রীয় সরকারী অফিস) কমপ্লেক্সে সিবিআই লক-আপে রয়েছে।

    অপরাধে একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে?
    কলকাতা পুলিশ বলেছে যে, ওই নারীর শরীরে পাওয়া সেমিনাল ফ্লুইডের মতো প্রমাণের মাধ্যমেই জড়িতদের সংখ্যা নিশ্চিত করা যাবে। একজন অফিসার বলেন, “রিপোর্ট এখনো আসেনি।

    একাধিক ব্যক্তি অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে?
    একজন পুরুষের পক্ষে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাকে এভাবে খুন করা সহজ নয়। বিশেষ করে তাঁর কর্মক্ষেত্রে, কারণ সেখানে অনেকেই থাকতে পারে। তাই একজনের পক্ষে এই জঘন্য অপরাধ করা সম্ভব নয় বলেই প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। তবে কেউ এখনও চিৎকার বা ঝগড়ার ইঙ্গিত করে এমন কোনও শব্দ শোনার কথা জানায়নি।

    সবথেকে ছড়িয়েছে সে সব তথ্যগুলো। যার ভিত্তি এখনও মেলেনি:
    সেমিনাল ফ্লুইডের অন্তত ২টি নমুনা পাওয়া গেছে, যাতে একাধিক অপরাধীর উপস্থিতি প্রমাণিত হয়। 
    পুলিশের প্রতিক্রিয়া: ফরেন্সিক রিপোর্ট, ডিএনএ স্যাম্পলিং, সবকিছুই করা হয়েছে। সিএফএসএলে (সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি) পাঠান হয়েছে।

    ভুক্তভোগীর কলার বোন এবং পেলভিক হাড় ভেঙ্গে গেছে, যা ব্যাপক নির্মমতা প্রমাণ করে। যা আবার একাধিক আক্রমণকারী যুক্ত থাকার দিকে ইঙ্গিত দেয়।

    পুলিশের প্রতিক্রিয়া: পুলিশের একজন অতিরিক্ত কমিশনার বলেছেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে কোনও হাড় ভাঙার প্রমাণ মেলেনি।

    পুলিশ তড়িঘড়ি করে লাশ দাহের জন্য পাঠিয়েছিল? 
    পুলিশের প্রতিক্রিয়া: বিনীত গোয়েল বলেছেন, “একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে তদন্ত করা হয়েছিল। সেটির ভিডিও করা হয়েছে। এফএসএল (ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি) টিম এসেছিল, বাবা-মা, পরিবারের সদস্য এবং ছাত্রদের উপস্থিতিতে ভিডিওগ্রাফির অধীনে সমস্ত প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছিল। পুরো ভিডিওগ্রাফি সিবিআই-এর কাছে রয়েছে।”

    যে সেমিনার হলে ওই চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছিল, সেটি আচমকা সংস্কার করার কাজ শুরু হয়েছিল। সেটি কি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

    পুলিশের প্রতিক্রিয়া: রুমটি অক্ষত এবং সিলগালা করে রাখা হয়েছে। যেখানে পুলিশ পাহারা দিচ্ছে।
    ১৫০ গ্রাম সেমিনাল ফ্লুইড পাওয়া গেছে। যা একাধিক ব্যক্তির জড়িত থাকার ইঙ্গিত দেয়।
    পুলিশের প্রতিক্রিয়া: কমিশনার বলেছেন, “কেউ বলেছে ১৫০ গ্রাম বীর্য পাওয়া গেছে। আমি জানি না তারা এই ধরনের তথ্য কোথা থেকে পেয়েছে। আর তা সব ধরনের মিডিয়ায় প্রচার হচ্ছে। লোকেরা এখন এটি বিশ্বাস করার চেষ্টা করছে, তারা জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করার চেষ্টা করছে।”

    তৃণমূল কংগ্রেস নেতার ছেলেকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে পুলিশ?
    পুলিশের জবাব: বিনীত গোয়েল বলেছেন, 'এরা অল্পবয়সী ছেলে মেধাবী ছেলে। আমি তাদের গ্রেফতার করতে পারি না। কারণ তিনি ডিউটির নির্দিষ্ট স্থানে উপস্থিত ছিলেন। কিছু লোক মহাপাত্র হিসাবে উপাধি ব্যবহার করছে, এটিকে কিছু রাজনৈতিক মহাপাত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করছে। এবং এই বিষয়গুলিকে গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। গুজব ছড়াচ্ছে যে, তারা খুব প্রভাবশালী লোক বলেই তাদের রক্ষা করা হচ্ছে। তা সত্য নয়। আমাদের কাউকে রক্ষা করার কোনও উদ্দেশ্য ছিল না।'

    পুলিশ প্রমাণ নষ্ট করার চেষ্টা করেছে?
    পুলিশের জবাব: একজন অফিসার বলেছেন, “অভিযোগ ভিত্তিহীন। সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা বজায় রাখা হয়েছে। লুকোনোর কিছু নেই।” 

    মহিলার বাবা-মাকে ৩ ঘন্টার জন্য লাশ দেখতে দেওয়া হয়নি?
    আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের দাখিল অনুযায়ী, ভুক্তভোগীর বাবা-মা ৯ আগস্ট দুপুর ১টার দিকে হাসপাতালে আসেন। যেহেতু ঘটনাটি সেমিনার কক্ষে ঘটেছে, ফরেনসিক দল সেমিনার কক্ষে পরীক্ষা করছিল। এটা স্বীকার করা হয় যে, ভুক্তভোগীর বাবা-মাকে তাদের মেয়ের মৃতদেহ দেখতে দেওয়া হয়নি এবং দুপুর ১.১০টায় বাবা-মাকে সেমিনার হলে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছিল।

     
  • Link to this news (আজ তক)