মুর্শিদাবাদের হস্টেলে ফার্মাসি পড়ুয়ার রহস্য ঘিরে তৈরি হয়েছে সন্দে। হস্টেল কর্তৃপক্ষ এবং ছেলের রুমমেটদের বক্তব্যে বেশ কিছু অসঙ্গতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাবা।মৃতের বাবার প্রশ্ন —
হস্টেলের নিয়ম অনুযায়ী, বাইরে গেলে রেজিস্টারে সই করতে হয়। সেই খাতায় তৌহিদের সই ছিল না। এমনকী, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজেও তাঁর বাইরে যাওয়ার ছবি নেই।কোনও ছেলে সকাল থেকে নিখোঁজ, অথচ হস্টেলের কমন রুমে তাঁর দেহ ঝুলছে, এটা কেউ দেখল না? সকাল থেকে সারা দিন কেউ কমন রুমে যায়নি, এটা আদৌ বিশ্বাসযোগ্য?পুলিশ পৌঁছনোর আগেই মৃতদেহ নামিয়ে অন্য ঘরে কেন রাখা হলো, কেনই বা সেই ঘরটা বাড়ির লোকেদের দেখতে দেওয়া হয়নি?তৌহিদের মৃতদেহের বিভিন্ন অংশের ছবি তুলেছেন তাঁর কাকা বদিরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘ডান পা এবং বাঁ চোখে ভালো রকম আঘাতের চিহ্ন ছিল। গলায় যে দাগ ছিল, সেটা গামছা দিয়ে ফাঁসের হতেই পারে না। আর হাসপাতালে যখন দেহটা নিয়ে যাওয়া হয়, ততক্ষণে দেহে পচন শুরু হয়ে গিয়েছে। সে দিনই সকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে আত্মহত্যা করলে, এমনটা হওয়ার কথা নয়। মৃত্যুটা নিশ্চয়ই আগে হয়েছে।’কলেজের প্রিন্সিপাল তুহিন সরকার বলেন, ‘১৫ অগস্টের প্রস্তুতি নিয়ে সকলেই ব্যস্ত ছিল। সেই সুযোগে তৌহিদ হস্টেলের একটি অব্যবহৃত ঘরে গিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। তৌহিদের হদিশ মিলছে না জানতে পেরেই খোঁজাখুঁজি শুরু করি। তখনই ওই ঘর থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার হয়। পুলিশেও খবর দেওয়া হয়। দীর্ঘক্ষণ তৌহিদের খোঁজ না করাটাই আমাদের ভুল হয়ে গিয়েছে। আত্মহত্যা ছাড়া ওই ছাত্রের মৃত্যুর পিছনে অন্য কোনও কারণ নেই। তবে পুলিশ ওর মোবাইলটি বাজেয়াপ্ত করেছে। সেই মোবাইল থেকেও তারা অনেক তথ্য পেয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।’রিবারের অভিযোগ, সে রাতে তাঁরা রঘুনাথগঞ্জ থানায় গেলেও পুলিশ অভিযোগ নেয়নি। রেজাউল বলেন, ‘থানায় অনেকক্ষণ বসিয়ে রেখে প্রচুর সমবেদনা দেখান এক অফিসার। কিন্তু লিখিত অভিযোগ নেননি। বলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলেই থানা থেকে ডেকে পাঠিয়ে অভিযোগ নেওয়া হবে। কিন্তু আর খবর দেওয়া হয়নি।’থানা থেকে ডাক না পেয়ে শনিবার রঘুনাথগঞ্জ থানার এক অফিসারকে ফোন করেন রেজাউল। তিনি বলেন, ‘অভিযোগও দায়ের করতে না পারায় ছেলের মৃত্যুর কোনও প্রমাণ আমার কাছে নেই। তাই ওই অফিসারের কাছে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য অনুরোধ করি। তিনি উল্টে আমায় গালাগালি করেন।’জেলার পুলিশ সুপার আনন্দ রায় বলেন, ‘যে দিন ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়, সে দিনই তার বাবা ও আরও দু’জন রঘুনাথগঞ্জ থানায় এসেছিলেন। সে সময়ে তিনি কোনও অভিযোগ করেননি। সেই তথ্য আমাদের কাছে ভিডিয়ো করা রয়েছে। শনিবার মৃতের বাবার রঘুনাথগঞ্জ থানায় অভিযোগ জানাতে আসার কথা ছিল। সে জন্য এসডিপিও-কে থানায় পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু মৃত ছাত্রের বাবা আসেননি। 'আমের আচার আর কিছু টাকা আনতে বলেছিল...', হস্টেলে ছেলের নিথর দেহে দেখে ভেঙে পড়লেন ফার্মেসি পড়ুয়ার বাবাওই ফার্মাসি কলেজের মালিক ও জঙ্গিপুরের বিধায়ক জ়াকির হোসেন বলেন, ‘মৃত্যু দুর্ভাগ্যজনক। কলেজ কর্তৃপক্ষ এই ঘটনা নিয়ে রঘুনাথগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশকে তদন্ত করে আসল তথ্য উন্মোচন করার জন্য আবেদন জানিয়েছি।’