নিজস্ব প্রতিনিধি, কোচবিহার: রাজ আমলের প্রাচীন রীতি ও ঐতিহ্য মেনে শনিবার কোচবিহার মদনমোহন মন্দিরে হল মনসাপুজো। শুক্রবারই পুজোর ঘট বসেছে। তিনদিন ধরে পুজো চলবে। এই পুজোকে কেন্দ্র করে মন্দির চত্বরে চলছে বিষহরির পালাগান। এই উপলক্ষ্যে রাত পর্যন্ত মন্দিরের প্রধান দরজা খোলা রাখা হচ্ছে। পুণ্যার্থীরা পুজো দেওয়ার পাশাপাশি সন্ধ্যার পর বিষহরির পালাগান শুনছেন। প্রাচীন এই পুজোয় মা মনসাকে দুধ, কলা দেওয়ার পাশাপাশি হাঁসের ডিম দেওয়ার প্রচলন রয়েছে। সেসঙ্গে এখানে তিনদিনই জোড়া পায়রা বলি দেওয়ার রীতিও রয়েছে।
রাজ আমলে শুরু হওয়া এই পুজোয় বংশ পরম্পরায় একই পরিবারের সদস্যরা শোলার মন্ডুষ তৈরি করেন। তাতেই হয় পুজো। পাশাপাশি চাঁদ সদাগরের মতেও এখানে বংশ পরম্পরায় পুজোর রীতি রয়েছে বলে দেবোত্তর ট্রাস্ট সূত্রে জানা গিয়েছে। এবার মনসাপুজোর বাজেট ৮২ হাজার টাকা। মদনমোহন মন্দিরের কর্মী জয়ন্ত চক্রবর্তী বলেন, কোচবিহার রাজ আমলের প্রাচীন রীতি মেনে শুক্রবার মনসাপুজোর ঘট বসানো হয়েছে। শনিবার মনসাপুজো হল। টানা তিনদিন এই পুজো চলবে। বিষহরির পালাগান চলছে।
মদনমোহন মন্দির সূত্রে জানা গিয়েছে, বংশ পরম্পরায় দেওয়ানহাটের বাসিন্দা ধীরেন্দ্র মালাকার মন্ডুষ তৈরি করেন। এবারও মালাকার পরিবার মন্ডুষ বানিয়ে মন্দিরে নিয়ে এসেছেন। সেই মন্ডুষটি কাঠামিয়া মন্দিরে বসিয়ে পুজো হয়েছে। শুক্রবার ঘট বসানোর পর প্রথমে চাঁদ সদাগরের পুজো করা হয়। এদিনই হাঁসের ডিম দেওয়া হয়েছে। বাকি দু’দিন হাঁসের ডিম দেওয়া হয় না।
মদনমোহন মন্দিরের এই প্রাচীন মনসাপুজোর বিসর্জন পদ্ধতিও বেশ কিছুটা আলাদা। রবিবার দিনে এবং সন্ধ্যায় পুজোর শেষে রাত পার করে সোমবার সূর্যোদয়ের আগেই তোর্সায় বিসর্জন দেওয়া হবে মন্ডুষ। মনসাপুজো উপলক্ষ্যে সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত বিষহরির পালাগান চলছে। এজন্য ১৮-২০ জনের একটি দল এসেছে। প্রতিবছরই ঐতিহ্যবাহী এই পালাগান শুনতে সন্ধ্যা থেকেই বহু মানুষ মন্দির চত্বরে ভিড় জমান। এবারও ভিড় হচ্ছে। প্রাচীনতা, ঐতিহ্যকে ঘিরে মদনমোহন মন্দিরের এই মনসাপুজোর তাই আলাদা একটা আকর্ষণ বরাবরই রয়েছে। যা কোচবিহারবাসীর ভাবাবেগ ও সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে। নিজস্ব চিত্র।