• কুৎসা-গুজবে কড়া লালবাজার, নির্যাতিতার ছবি পোস্ট, ১৫ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর
    বর্তমান | ১৮ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ধর্ষিতা চিকিৎসকের ছবি, নাম-পরিচয় সোশ্যাল মিডিয়ায় ফাঁস করায় মোট ১৫টি এফআইআর দায়ের করল কলকাতা পুলিস। ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি, পকসো মামলায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত নির্দেশিকা রয়েছে, কোনও অবস্থায় নির্যাতিতার নাম-পরিচয় প্রকাশ্যে আনা যাবে না। নিজেকে ‘প্রতিবাদী’ হিসেবে মেলে ধরতে সেই নির্দেশিকাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এখনও ‘চেতনা’র পরিচয় দিয়ে চলেছেন বাংলার এক শ্রেণির নেটিজেন। আর জি কর ইস্যুতে গুজবের ডানায় ভর করে মিথ্যাচার এখন পৌঁছেছে বাংলার সীমানা ছাড়িয়ে ভিন দেশেও।  

    ধর্ষিতার দেহে মিলেছে ১৫০ গ্রাম সিমেন—অবাস্তব ও অবৈজ্ঞানিক এই তত্ত্ব সমাজমাধ্যমে ছেড়েছেন উত্তর শহরতলির বাসিন্দা এক নামী চিকিৎসক।  বাংলা সিনেমা-সিরিয়াল থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ভেসে থাকার চেষ্টা করা মাঝবয়সি এক অভিনেত্রী এখন প্রতিবাদে মুখর। ধর্ষিতার নাম পরিচয় প্রকাশ করে ‘কর্তব্য’ পালন করা এমন বেশ কয়েকজন রয়েছেন এফআইআর তালিকায়। এহেন গুজবের ডানায় ভর করেই পূর্ব বর্ধমানের এক আদিবাসী কন্যাকে ‘ধর্ষণ এবং খুনে’র শিকার বানিয়েছিল ফেসবুক ইউনিভার্সিটির পড়ুয়াদের একটা অংশ। প্রতিবাদে বিক্ষোভও করেছিল পদ্মপার্টি। শনিবার পূর্ব বর্ধমান পুলিস জানিয়ে দেয়, এমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি সেখানে।     

    দিল্লিতে নির্ভয়া কাণ্ডে দেশজোড়া শত বিতর্কের মধ্যেও নির্যাতিতার নাম- পরিচয় ফাঁস করেনি দায়িত্বশীল সংবাদমাধ্যম। কিন্তু আর জি কর কাণ্ডে ইউটিউবার, চিকিৎসক, রাজনৈতিক কর্মী, অতি উৎসাহী জনতা ধর্ষণ-খুনের শিকার হওয়া তরুণী চিকিৎসকের ছবি, বাবা-মায়ের ছবি, এমনকী লেটারহেড সহ তাঁর লেখা প্রেসক্রিপশনও দেদার পোস্ট করে চলেছে। অবাস্তব, গাঁজাখুরি গল্প, গুজব ও ভিত্তিহীন তথ্য পোস্ট করার অভিযোগে এখনও পর্যন্ত প্রায় ১০০ জনকে ৪১ ধারায় নোটিস পাঠিয়েছে লালবাজার। সূত্রের খবর, এই নোটিসের ভিত্তিতে শনিবার ২০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। সমাজমাধ্যমে গুজব ছড়ানোয় আরও ১৬৮ জনকে নোটিস পাঠিয়েছে লালবাজার। নোটিস প্রাপকদের মধ্যে রয়েছেন বামনেত্রী মীনাক্ষী  মুখোপাধ্যায়ও। তাঁর কথায়, আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করেই লালবাজারে যাব।  পুলিসকে বিশ্বাস করতে পারছি না।’

    আর জি কর ইস্যুতে শুক্রবারও লালবাজারে সাংবাদিক সম্মেলনে গুজব, ভিত্তিহীন খবর ছড়ানো নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন পুলিস কমিশনার বিনীত গোয়েল।  তখনই বোঝা গিয়েছিল, ‘ধর্ষিতার শরীরে ১৫০ গ্রাম সিমেন’ পাওয়ার মতো গুজব ঠেকাতে মরিয়া হয়ে আসরে নামছে লালবাজার। এরই পাশাপাশি  কলকাতা পুলিসের এক  সূত্র জানাচ্ছে, বেশ কিছু ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে বেশ কিছু ভুল ও বিকৃত খবর পরিবেশন করছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রেস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া এবং দ্য ব্রডকাস্টিং কনটেন্ট কমপ্লেইনস কাউন্সিলের (বিসিসিসি) কাছে লিখিত অভিযোগ জানাতে চলেছে লালবাজার।
  • Link to this news (বর্তমান)