• উচ্চশিক্ষার সুযোগ নেই বৃত্তিমূলকে, রাজ্যে বাড়ছে ড্রপ আউট
    বর্তমান | ১৮ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বৃত্তিমূলক বিষয় নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর এ রাজ্যে উচ্চশিক্ষার সুযোগ খুব কম। এই কারণে পড়াশোনার পাট চুকিয়ে পরিযায়ী শ্রমিক হওয়ার ঘটনা বাড়ছে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট মহলের। সাধারণ বিষয়ে স্নাতকে ভর্তির চাহিদা একেবারেই তলানিতে। কিন্তু বিপুল চাহিদা থাকা সত্ত্বেও কলেজে ভর্তির কেন্দ্রীয় পোর্টালের মাধ্যমে ভর্তির সুযোগ নেই বৃত্তিমূলক বিষয়েক স্নাতক কোর্স বি ভোক-এ। এর ফলে দিন দিন এই বিষয়ের চাহিদা কমবে বলেই জানাচ্ছেন শিক্ষকরা।

    একটি হিসেব বলছে, বৃত্তিমূলক বিষয় নিয়ে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৯০ হাজার ছাত্রছাত্রী উত্তীর্ণ হন। মোট বিষয়ের সংখ্যা ১৬টি। অথচ, গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া মাত্র ১২টি কলেজে বি-ভোক কোর্স পড়ানো হয়। মোট আসন সংখ্যা ১২০০। আর্থিক সঙ্গতিসম্পন্ন কিছু ছাত্রছাত্রী বেসরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে ভর্তি হতে পারেন। বাকিরা বৃত্তিমূলক শিক্ষায় সেখানেই ইতি টেনে অন্য বিষয়ে চলে যান। নাহলে ‘ড্রপ আউট’ হয়ে যান।

    জাঙ্গিপাড়া বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী মনীষা সাউ বলেন, ‘চার বছর ধরে বৃত্তিমূলক বিষয় পড়ছি। কাছাকাছি কোনও কলেজে বি-ভোক কোর্সটি নেই। রোজ দূরের কলেজে যাতায়াত করে বা হস্টেলে থেকে পড়াও সম্ভব নয়।’ অ্যাপারেল টেকনোলজির ছাত্রী মনীষা প্রায় হাল ছেড়েই দিয়েছেন। একই অবস্থা পশ্চিম মেদিনীপুরের ‘সিকিওরিটি’ বিষয়ের ছাত্র লোকেশ ঘোষেরও। তিনিও তাঁর বিষয় নিয়ে আর উচ্চশিক্ষায় যেতে পারছেন না। কোন্নগর নবগ্রামের হীরালাল পাল কলেজের এক শিক্ষক তথা পরিচালন সমিতির সদস্য বলেন, ‘এই কোর্সে ভর্তি পোর্টালের মাধ্যমে হয় না। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ও এই কোর্সের সিএসআর তৈরি করেনি। কলেজই সিলেবাস তৈরি করে পড়ায়। ভর্তিও হয় কলেজের পোর্টাল থেকে। শুধু পরীক্ষা গ্রহণ, মার্কশিট এবং সার্টিফিকেট দেয় বিশ্ববিদ্যালয়।’

    হুগলির এই কলেজ ছাড়াও শ্রীরামপুর কলেজে চালু রয়েছে বি-ভোক কোর্সটি। ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি এবং রিটেল ম্যানেজমেন্ট পড়ানো হয় কলেজগুলিতে। বঙ্গবাসী কলেজের সান্ধ্য বিভাগেও চালু রয়েছে কোর্স দু’টি। আশুতোষ কলেজে রয়েছে আরও কয়েকটি বিষয়। তবে প্রবল চাহিদা থাকায় মোট পড়ুয়ার সামান্য অংশই সুযোগ পায় সেগুলিতে। বৃত্তিমূলক শিক্ষক সংগঠন এনএসকিউএফ শিক্ষক পরিবারের রাজ্য সম্পাদক শুভদীপ প্রামাণিক বলেন, ‘ভোকেশনালাইজেশন অব স্কুল এডুকেশনের আসল উদ্দেশ্যই এখানে ব্যর্থ হচ্ছে। উচ্চশিক্ষা এবং চাকরির সুযোগ না থাকায় আমাদের বহু ছাত্রছাত্রী পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে যাচ্ছে। এটা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কাছেও দরবার করেছি।’ এ রাজ্যে এম-ভোকের কোনও সুযোগ নেই। সমস্ত বৃত্তিমূলক বিষয় এ রাজ্যে চালুও নেই। তাছাড়া, অন্য রাজ্যের মতো উচ্চ মাধ্যমিকের কম্পালসারি বিষয় হিসেবে ভোকেশনাল পড়ার সুযোগ নেই। এগুলি অন্যতম প্রধান সমস্যা বলে মত তাঁর। 
  • Link to this news (বর্তমান)