• আমার মেয়েটাও তো ‘মহিলা’, ওকে কেন মারা হল? প্রশ্ন শম্পার বাবার
    বর্তমান | ১৮ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: মহিলাদের ‘রাত দখল’। দাবি, আর জি কর কাণ্ডের বিচার এবং মহিলা নিরাপত্তা। কলকাতার রাজপথে সেদিন নেমেছিল হাজার হাজার নারী। অথচ সেই রাতেই কি না ডিউটিতে গিয়ে আক্রান্ত হতে হল ‘মহিলা’ পুলিসকর্মী শম্পাকে! স্রেফ উর্দি পরে ছিলেন বলেই এই রাত তাঁদের ছিল না? বিধাননগর সিটি পুলিসের কর্মী কনস্টেবল শম্পা প্রামাণিক আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় এই প্রশ্নই তুলেছিল পশ্চিমবঙ্গ পুলিসের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট। এবার সেই সুরেই নিজের প্রতিবাদ ব্যক্ত করলেন শম্পার বাবা বাসুদেব প্রমাণিক। 


    নারী নিরাপত্তা এবং আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে ‘মেয়েদের রাত দখল’ অভিযানে আক্রান্ত হতে হয়েছে একাধিক পুলিসকর্মীকে। তাঁদের মধ্যেই গুরুতর জখম হয়েছেন মহিলা পুলিসকর্মী শম্পা। বছর ২৮-এর শম্পার বাড়ি শান্তিপুরের লক্ষ্মীনাথপুর এলাকায়। ‘প্রাচীন’ জীর্ণ বাড়িটা দেখলেই বোঝা যায়, জীবনের লড়াইটা মোটেও সহজ ছিল না তাঁর। চাষের কাজে অল্প রোজগার থেকেই বাবা বাসুদেববাবু মানুষ করেছেন শম্পা সহ তিন মেয়ে এবং এক ছেলেকে। এক বছর দু’মাস আগে চাকরি পেয়ে যেদিন শম্পা কলকাতায় পাড়ি দিয়েছিলেন, একরাশ চিন্তায় ডুব দিয়েছিলেন বাবা-মা। আপাতত সংসারে নির্ভরযোগ্য রোজগেরে একাই। জীর্ণ বাড়িটা ঠিক করা, বাবা মায়ের চিকিৎসা করানো, ভাইয়ের পড়ার খরচের মতো অনেক দায় দায়িত্ব রয়েছে তাঁর কাঁধে। বর্তমানে শম্পা বিধাননগর পুলিসের এয়ারপোর্ট জোনের ডিসিপি অফিসে কর্মরতা।


    আর জি কর কাণ্ডের বিচার চেয়ে ১৪ আগস্ট কেষ্টপুরে আন্দোলনে নেমেছিলেন কয়েকশো মানুষ। নিরাপত্তার স্বার্থে তাই অতিরিক্ত পুলিস মোতায়েন করতে হয়। সেই বিশেষ দলেই ছিলেন শম্পা। কিন্তু শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্যে থেকে কেউ বা কারা হঠাৎ পুলিসকে লক্ষ্য করে ইট ছুড়তে শুরু করে। মুহূর্তের মধ্যেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে উত্তেজনার ছিটে লাগে। যেহেতু আন্দোলনকারীরা মহিলা তাই নিরাপত্তা বেষ্টনীর ফ্রন্টফুটে তখন ‘মহিলা’ পুলিসকর্মীরাই। উড়ে আসা ইটের ঘায়ে জখম হন একাধিক পুরুষ ও মহিলা পুলিসকর্মী। তাঁদের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি জখম হয়েছেন শান্তিপুরের এই মেয়ে। ডান চোখে তাঁর গুরুতর আঘাত লাগে। রক্ত ঝরতে থাকায় কার্যত মাটিতেই লুটিয়ে পড়েন শম্পা। পরে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অল্পের জন্য দৃষ্টিশক্তি হারাতে হারাতে বেঁচেছেন। তাঁর ছবি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিস। নারীদের নিরাপত্তার দাবিতে মিছিলে একজন মহিলা পুলিসকর্মী আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় পাল্টা সমালোচনার ঝড় উঠেছে। আক্রান্ত অবস্থায় ওই মহিলা পুলিসকর্মী শুক্রবার শান্তিপুরের বাড়িতে ফেরেন। কার্যত শয্যাশায়ী অবস্থা তাঁর। আঘাতের কারণে চোখ খুলতেই পারছেন না।


    বিছানায় শুয়ে তিনি বলেন, হঠাৎ করেই ছুটে যেতে হয়েছিল। তাই প্রয়োজনীয় প্রটেকশন নেওয়ার সময় হয়নি। হঠাৎই একটি অরাজনৈতিক আন্দোলন থেকে ইট ছোড়া শুরু হয়। সার্বিকভাবে আমিও তো একজন মহিলা। সেদিন পুলিসের উর্দিতে অনেক মহিলা কর্মী ছিলেন। নিরাপত্তার দাবিদার তো আমরাও। আমার ডিপার্টমেন্টকে আমি সর্বতভাবে পাশে পেয়েছি। সবরকম সহযোগিতা পেয়েছি। আশা করব মহিলা পুলিসকর্মীরা আর কেউ যেন আক্রান্ত না হন। 


    ঘটনার নিন্দা করেছেন শম্পার বাবা বাসুদেববাবুও। তিনি বলেন, আমরা গ্রামের গরিব মানুষ। সেই সঙ্গে আমিও একজন মেয়ের বাবা। একজন মেয়ের সঙ্গে অন্যায় হয়েছে। তার জন্য প্রতিবাদ হবেই। কিন্তু, সেই প্রতিবাদ থেকে অন্য একজন মহিলা আক্রান্ত হবেন? এটা ঠিক নয়। পুলিস হলেও তারও তো একটা নিরাপত্তা আছে!
  • Link to this news (বর্তমান)