আরজি করের ঘটনার পর মেয়েদের রাত দখলের অভূতপূর্ব কর্মসূচি দেখেছে কলকাতা, গোটা রাজ্য এবং দেশ। এ বার মেয়েদের নিজস্ব রাজনৈতিক দল তৈরির দাবিও উঠল। সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে ক্যাম্পেন। যাঁরা সেই ক্যাম্পেন চালাচ্ছেন, তাঁরা মনে করছেন, আরজি করের তরুণী চিকিৎসককে খুন-ধর্ষণে যে বা যারাই জড়িত হোক না কেন, এটা আসলে পুরুষতন্ত্রেরই পরিণতি।সমাজে পুরুষদের আধিপত্য থাকায় নারীদের বার বার লাঞ্ছিত হতে হচ্ছে। এর মোকাবিলায় মেয়েদের নিজস্ব রাজনৈতিক দল থাকা দরকার। লেখিকা সংগীতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘পুরুষতন্ত্র হিংসার জন্ম দেয়। আর সে জন্যেই আরজি করের মতো ঘটনা ঘটে। ভায়োলেন্সের মধ্যে দিয়ে পুরুষতন্ত্র সমাজকে কন্ট্রোল করতে শেখায়। হিংসা বন্ধে পুরুষতন্ত্রের বিনাশ ঘটাতে হবে। এর জন্যে মেয়েদের নিজস্ব রাজনৈতিক দল থাকা দরকার।’
এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন তিনি। তিনি লিখেছেন, ‘একটা কঠোর ভাবে রেজিমেন্টাল ওনলি উইম্যান পলিটিক্যাল পার্টি গঠনের ডাক দেওয়ার সময় এসেছে।’ তাঁর সেই বক্তব্যকে সমর্থনও জানিয়েছেন বহু মহিলা। পুরুষতন্ত্রের প্রভাব স্বীকার করেও মেয়েদের নিজস্ব রাজনৈতিক দল তৈরির ভাবনার সঙ্গে সহমত নন লেখিকা সম্রাজ্ঞী বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি বলেন, ‘আমি জেন্ডার ভিত্তিক রাজনৈতিক দলের পক্ষে নই। এটা ঠিকই, একটি রাজনৈতিক দলে নারীরা থাকলেও সেখানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মুখ্য ভূমিকা নেন পুরুষরা। কিন্তু নারীদের রাজনৈতিক দল থাকলে সেখানেও তো পক্ষপাতিত্ব তৈরি হতে পারে। পুরুষতন্ত্রের মোকাবিলা করতে গিয়ে নারীতন্ত্র তৈরি হতে পারে। লড়াইটা তো পুরুষদের বিরুদ্ধে নয়, পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে।’
রাজনৈতিক দলে পুরুষদের আধিপত্য কমাতে বরং মহিলা ও ট্রান্সজেন্ডারদের জন্যে ৫০ শতাংশ আসন ছাড়ার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।
নারী আন্দোলনের কর্মী শাশ্বতী ঘোষ বলেন, ‘আমরা দেখলাম, সাধারণ মহিলারা যখন রাত দখলের ডাক দিলেন, তার পর রাজনৈতিক দলগুলিও রাস্তায় নেমে পড়ল। মেয়েদের নিজস্ব রাজনৈতিক দল থাকলে ভালোই হবে। তবে একটা আশঙ্কার জায়গাও আছে। পুরুষরা ভেবে নিতে পারেন, মহিলাদের ব্যাপারে তাঁদের কোনও দায় নেই।’
আরজি করের নৃশংস ঘটনার প্রতিবাদে স্বাধীনতা দিবসের আগের রাতের দখল নিয়েছিলেন মেয়েরা। স্লোগান উঠেছিল ‘রিক্লেইম দ্য নাইট’। যার সূচনাটা হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট থেকে। সেটাই দাবানলের মতো গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এই সাফল্য ধরে রাখতে মেয়েদের নিয়ে একটা নেটওয়ার্ক তৈরির কাজে হাত দিয়েছেন উদ্যোক্তারা। গার্হস্থ্য হিংসা থেকে কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থা--মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই নেটওয়ার্ক কাজ করবে।
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী রিমঝিম সিনহা প্রথম সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘রিক্লেইম দ্য নাইট’-এর ডাক দিয়েছিলেন। রিমঝিম বলছেন, ‘এই লড়াইটা একটা রাতের দখলের জন্যে ছিল না। এই লড়াইটা মেয়েদের প্রতিদিনের, প্রতি রাতের। পুরুষতন্ত্রের গ্রাস থেকে মেয়েদের বেরিয়ে আসতেই হবে। আর সেই কারণেই আমরা আহ্বান দিচ্ছি এই নেটওয়ার্ক তৈরির।’
অভিনেত্রী সোহিনী সেনগুপ্ত মনে করেন, ‘কোনও রাজনৈতিক দল বা সরকার এটা গ্যারান্টি দিতে পারে যে নারী নির্যাতন বা ধর্ষণ হবে না। এই মানসিকতাকে সমাজ থেকে উপড়ে ফেলতে হবে। একটা রাতের আন্দোলনে এটা যেন থেমে না যায়। তার জন্যে প্রয়োজন স্কুলস্তর থেকে লিঙ্গ-সমতার শিক্ষা। থিয়েটার, সিনেমা, সোশ্যাল মিডিয়া, রিলস ব্যবহার করেও এই সচেতনতার বোধ তৈরি করা যায়।’