• আরও সক্রিয় অভিষেককে চাইছে তৃণমূল
    এই সময় | ১৮ আগস্ট ২০২৪
  • মণিপুস্পক সেনগুপ্ত

    আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। এই ইস্যুতে প্রতিবাদের সুর চড়াচ্ছেন বিরোধীরা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাম-বাম চক্রান্তের অভিযোগ তুলে পাল্টা পথে নেমেছে তৃণমূলও। বিরোধীদের ‘চক্রান্ত’ ফাঁস করতে দলীয় নেতা-কর্মীদের লাগাতার প্রচার চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।কিন্তু আরজি কর পর্বের গোড়াতেই কি কিছু ভুল পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল প্রশাসনের তরফে, যার খেসারত এখনও চোকাতে হচ্ছে রাজ্যের শাসক দলকে? এই প্রশ্নগুলি উঠতে শুরু করেছে তৃণমূলের অন্দরে। একই সঙ্গে আরজি কর ইস্যুতে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আরও সক্রিয়ভাবে বিরোধীদের বিরুদ্ধে মাঠে দেখতে চাইছে জোড়াফুল শিবিরের একাংশ।

    রাজ্যসভার প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ শনিবার কোনও রাখঢাক না করেই এ বিষয়গুলি প্রকাশ্যে উত্থাপন করেছেন। অন্যদিকে, বিরোধীরা বিষয়টিকে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব হিসেবে অভিহিত করছে। আরজি করের ঘটনায় তৃণমূলের অবস্থান ফের একবার স্পষ্ট করে শনিবার দুপুরে কুণাল সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেন।

    সেখানে তিনি লেখেন, ‘আমরাও প্রতিবাদী। দোষীদের ফাঁসি চাই। কিন্তু বাংলা ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে বামরামের শকুনের রাজনীতি মানব না।’ এ জন্য গোটা দলের যে ঐক্যবদ্ধভাবে পথে নামা প্রয়োজন, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই তৃণমূলের অন্দরে। সেই প্রেক্ষিতেই কুণালের সংযোজন, ‘জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ সব রুখতে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সেনাপতি অভিষেককেও সক্রিয়ভাবে সামনে চাই।’

    এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য, ‘অভিষেক সামনেই আছেন। সক্রিয়ও আছেন। এই নয় যে, মুখ দেখিয়ে সক্রিয় থাকতে হবে।’ তৃণমূল সুপ্রিমোর মতো রাজপথে নামতে না দেখা গেলেও অভিষেকও যে আরজি করের ঘটনা আগাগোড়া নজরে রেখেছেন, তার ইঙ্গিত মিলেছিল বুধবার হাসপাতাল ভাঙচুরের রাতেই।

    ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি নিজের এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘আরজি করে আজ রাতে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব সব সীমা অতিক্রম করে গিয়েছে। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি কলকাতা পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। রাজনীতির রঙ না দেখে অপরাধীদের চিহ্নিত করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনের আওতায় আনতে বলছি।’

    তবে কুণালের মতো তৃণমূলের আরও অনেকেই চাইছেন, অতীতে অভিষেকের নেতৃত্বে সন্দেশখালি ইস্যুতে যেভাবে বিরোধীদের প্রচার রুখে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল, আরজি করের ক্ষেত্রেও সেভাবেই দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে ময়দানে নামুন তিনি। তৃণমূলের অন্দরে অভিষেকের ‘সক্রিয়’ হওয়ার দাবি জোরালো হওয়ার আরও একটি কারণ আছে বলেও মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

    যার ইঙ্গিত মিলেছে কুণালের ওই সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের শেষ লাইনে। যেখানে তিনি লিখেছেন, ‘আমাদেরও কিছু ভুল শুধরে সঠিক পদক্ষেপে সব চক্রান্ত ভাঙতেই হবে।’ অর্থাৎ, আরজি কর ইস্যুতে কিছু ‘ভুল’ যে হয়েছিল তা কুণালের পোস্টে-ই স্পষ্ট। এরকম ‘ভুল’ যাতে ভবিষ্যতে আর না ঘটে সে জন্যই কি অভিষেককে সক্রিয় হওয়ার আর্জি জানালেন কুণাল? এমন প্রশ্ন ভাসছে তৃণমূল শিবিরে।

    সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে ‘ভুলগুলি’ ঠিক কী তা খোলসা না করলেও পরে সংবাদমাধ্যমে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেছেন তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ। তাঁর আক্ষেপ, ‘সন্দীপ ঘোষকে আরজি কর থেকে সরিয়ে কয়েকঘণ্টার মধ্যেই অন্য একটি হাসপাতালের অধ্যক্ষ পদে বসানো ঠিক হয়নি। এতে জনমানসে ভুল বার্তা গিয়েছে।’

    কুণালের ব্যাখ্যা, ‘দ্বিতীয় ভুল—তড়িঘড়ি আরজি করের ওই সেমিনার হলের পাশের একটি ঘর মেরামতি করার পদক্ষেপ।’ তাঁর কথায়, ‘আরজি করের যে সেমিনার হলে ঘটনাটি ঘটেছিল, তা পুরোপুরি অক্ষত রয়েছে। সেখানে আঁচ পর্যন্ত লাগেনি। কিন্তু আমি জানি না, কোন নির্বোধের নির্দেশে সেমিনার হলের পাশের একটি ঘর এখনই মেরামত করার প্রয়োজন পড়ল। এই ভুল পদক্ষেপের জন্য তৃণমূলকে এখন জবাবদিহি করতে হচ্ছে। বিরোধীরাও হাতে অস্ত্র পেয়ে গিয়েছে।’

    যদিও বিরোধীরা মনে করছে, এ সবই রাজ্যের শাসক দলের অন্দরে ক্ষমতার ভরকেন্দ্রে থাকার লড়াই। রাজ্যসভার বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যর কথায়, ‘সব তৃণমূলের ভিতরের দ্বন্দ্ব। তবে সাধারণ মানুষের তা নিয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই। তারা এই দলের খপ্পর থেকে মুক্তি চাইছে।’
  • Link to this news (এই সময়)