• আচার্য-বৈঠকে ডাক পেলেন না ৫ ভিসি!
    এই সময় | ১৮ আগস্ট ২০২৪
  • আরজি করের ঘটনার পর রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নিয়ে রাজভবনের ডাকা বৈঠকে ডাকই পেলেন না ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যরা! উঠল ‘আমরা-ওরা’ বিভাজনের অভিযোগ।রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ভিসি-দের মঙ্গলবার অনলাইন বৈঠক ডেকেছিল রাজভবন। সেখানে মূল আলোচ্য ছিল--রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস এবং হস্টেলে ছাত্রী, শিক্ষিকা ও মহিলা শিক্ষাকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। কিন্তু সেই বৈঠকে ডাক পাননি যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি, গৌড়বঙ্গ, পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় (বারাসত) বিশ্ববিদ্যালয় এবং গ্রিন ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত ভিসি-রা।

    উচ্চশিক্ষা দপ্তরের কর্তাদের পর্যবেক্ষণ, রাজ্যে সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের পদ্ধতি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য-রাজ্যপাল মামলা চলছে। তার মধ্যেই গত ১৬ এপ্রিল অন্তর্বর্তী নির্দেশে শীর্ষ আদালত জানায়, রাজ্যের পাঠানো তালিকা থেকেই ছ’জন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য নিয়োগ করতে হবে আচার্যকে।

    তার পরেই যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি, গৌড়বঙ্গ, পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় (বারাসত) বিশ্ববিদ্যালয় এবং গ্রিন ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত ভিসি-দের নিয়োগপত্র দেন আচার্য। তাই হয়তো এই পাঁচ জন মঙ্গলবারের বৈঠকে ডাক পাননি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ১৩ অগস্ট রাত আটটা ২২ মিনিটে রাজভবনের মিডিয়া সেলের পোস্ট দেখে একাধিক উপাচার্য রাজভবনের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন।

    তাঁদের জানানো হয়, সদ্য নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত ভিসি-দের নামের তালিকা নাকি এখনও আপডেট হয়নি! তাই তাঁদের কাছে আমন্ত্রণ নাও গিয়ে থাকতে পারে। জরুরি ভিত্তিতে ডাকা মঙ্গলবারের ভার্চুয়াল বৈঠকে আচার্য-রাজ্যপাল ভারপ্রাপ্ত ভিসি-দের জানান, মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভিসি-রা যখন-যেখানে প্রয়োজন পুলিশি সুরক্ষা চাইতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও হস্টেলে পর্যাপ্ত সিসিটিভি ইনস্টল করার উপরেও জোর দেওয়া হয়।

    রাজ্যজুড়ে ক্যাম্পাসে ও হস্টেলে হাজারে হাজার ছাত্রী, শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মী থাকেন। সেই বৈঠকে যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি, গৌড়বঙ্গ, রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা কেন ডাক পেলেন না? প্রেসিডেন্সির ভারপ্রাপ্ত ভিসি নির্মাল্যনারায়ণ চক্রবর্তী বলেন, ‘এমন কোনও বৈঠকের খবরই আমি জানি না।’

    গৌড়বঙ্গের ভারপ্রাপ্ত ভিসি পবিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘আমি এই সময় সংবাদপত্র থেকেই বৈঠকের খবর প্রথম শুনলাম। আমাকে কেউ কিছুই জানায়নি।’ যাদবপুরের ভারপ্রাপ্ত ভিসি ভাস্কর গুপ্ত কোনও মন্তব্য করতে চাননি। গ্রিন ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত ভিসি আশুতোষ ঘোষ বলেন, ‘আমাকে যখন বৈঠকে ডাকাই হয়নি, তখন আর কী বলব!’

    রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ভিসি সৌরীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অবশ্য ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। শিক্ষাবিদ তথা উচ্চশিক্ষা সংসদের প্রাক্তন ভাইস চেয়ারপার্সন পবিত্র সরকার মনে করেন, ‘রাজ্যপালের অনেক অধিকার ও ক্ষমতা রয়েছে। বিশেষত আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে। কিন্তু তিনি স্বাধীন উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও হস্টেলে মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে বৈঠক করছেন, সেখানেও উপাচার্যদের ডাকায় এই বাছ-বিচার খুব দৃষ্টিকটু।’

    তাঁর সংযোজন, ‘আমি এই সরকারকে পছন্দ করি বা না করি, তাও বলব, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা রক্ষায় সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা জেনে সরকারের মাধ্যমে বৈঠক ডাকলেই ভালো হতো। কারণ, এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারকে রাজ্যপালের সাহায্য করাই উচিত।’
  • Link to this news (এই সময়)