এই সময়: ক্ষত সারাতে কোচিং সেন্টার? এই প্রশ্নই জোরালো হয়ে উঠছে কেন্দ্রের একটি পদক্ষেপ নিয়ে। সম্প্রতি লোকসভায় কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার জানিয়েছেন, নিট, জেইই, এসএসসি, ইউপিএসসি-র মতো জাতীয় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য একটি ফ্রি-কোচিং ক্লাসের ব্যবস্থা করছে কেন্দ্র। একটি ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে এই ফ্রি-কোচিং দেওয়া হবে পড়ুয়াদের।‘সাথী’ নামে ওই পোর্টালের যাবতীয় প্রযুক্তি ডেভেলপ করেছে আইআইটি কানপুর। সম্প্রতি নিট কেলেঙ্কারি নিয়ে তোলপাড় হয়েছে গোটা দেশ। ইউজিসি-নেট পরীক্ষাতেও প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। তা নিয়ে বিতর্কের রেশ চাপা পড়তে না-পড়তেই দিল্লির রাজেন্দ্রনগরে একটি কোচিং সেন্টারে জল ঢুকে সেখানেই বেঘোরে মৃত্যু হয়েছে তিন পড়ুয়ার। যা নিয়ে রাজধানীর বুকে আছড়ে পড়েছে ছাত্র আন্দোলন।
বিরোধীদের দাবি, ছাত্র সমাজের বাড়তে থাকা ক্ষোভ আন্দাজ করেই ফ্রি-কোচিংয়ের এই মলম লাগানো চেষ্টা করছে কেন্দ্র। যদিও অনলাইনে এই ফ্রি-কোচিং ক্লাসের সাফল্য নিয়েও সন্দিহান শিক্ষা মহল। সুকান্ত জানিয়েছেন, এই অনলাইন পোর্টালে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য বিনামূল্যে নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন পড়ুয়ারা। এই অনলাইন কোচিংয়ের মডিউল তৈরি করেছেন দেশের আইআইটি, এনআইটি, এইমস-এর মতো প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপকেরা।
শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর দাবি, ইতিমধ্যে প্রায় ৬০ হাজার স্টাডি মেটিরিয়াল আপলোড করা হয়েছে ওই সাইটে। সুযোগ থাকবে লাইভ ক্লাসেরও। এআই চ্যাট-বক্সের মাধ্যমে পড়ুয়ারা নিজেদের সমস্যার কথাও জানাতে পারবেন। ‘সলভ উইথ মি’ পরিষেবার মাধ্যমে বিশেষজ্ঞদের থেকে না-বোঝা টপিক বুঝে নিতেও পারবেন পড়ুয়ারা।
কেন্দ্রের বক্তব্য, এই ধরনের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য প্রাইভেট কোচিং ক্লাসে পড়তে গিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয় পড়ুয়াদের। যাতে অন্য পড়ুয়ারা এই সুযোগ থেকে পিছিয়ে না-যান, সেই জন্যই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই উদ্যোগ নিয়ে অবশ্য নানা প্রশ্ন রয়েছে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও।
এসএফআই-এর রাজ্য সহ সম্পাদক শুভজিৎ সরকারের বক্তব্য, ‘এই ধরনের কোচিং ক্লাসের সাফল্য তখনই নিশ্চিত করা যাবে, যখন প্রশ্নফাঁস হবে না। দুর্নীতি বন্ধ হবে। ছেলেমেয়েরা কোচিং নেবে আর প্রশ্ন ফাঁস হবে— দুটো এক সঙ্গে চলতে পারে না।’ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সহ সভাপতি সুদীপ রাহা এর বাস্তবতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন।
সুদীপের বক্তব্য, ‘নিট-নেট কেলেঙ্কারি, দিল্লিতে কোচিং সেন্টারে পড়ুয়াদের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর ছাত্র সমাজের ক্ষোভে বিপর্যস্ত কেন্দ্রীয় সরকার এক ধরনের ললিপপ ধরাতে চাইছে। কিন্তু ছাত্ররাও জানেন, এগুলো ছেলে ভোলানো ঘোষণা মাত্র। বাস্তবে এর কোনও কার্যকারিতা আদৌ থাকবে না।’
শিক্ষামহলেরও অনেকে সন্দিহান এই অনলাইন কোচিং নিয়ে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক রাজ্যেশ্বর সিনহার বক্তব্য, ‘যদি সত্যিই পড়ুয়াদের সাহায্য করতে হতো, তা হলে অনলাইনে এই ব্যবস্থা না করে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে নোডাল সেন্টার করে যথাযথ ফান্ডিং দিয়ে এই ধরনের ট্রেনিং সেন্টার তৈরি করা যেত। সেটা না করে অনলাইন কোচিংয়ের মাধ্যমে আদতে কত শতাংশ পড়ুয়া উপকৃত হবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।’
শিক্ষাবিদদের আরও প্রশ্ন, বিশেষ করে যখন আজও বহু এলাকায় ভালো ইন্টারনেট পরিষেবা নেই, অনেকের কাছে স্মার্টফোনেরও অভাব রয়েছে, সম্প্রতি একাধিক সার্ভিস প্রোভাইডার রিচার্জের মাশুলও বাড়িয়েছে, সেখানে প্রত্যন্ত এলাকার পড়ুয়ারা কী ভাবে এই সুবিধা পাবেন?