চঞ্চল প্রধান, হলদিয়া: বিজেপির ‘অত্যাচারে’ জখম নন্দীগ্রামের মহিলা তৃণমূল কর্মীকে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় নিয়ে এলেন কুণাল ঘোষ ও তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। রবিবার তাঁকে দেখতে নন্দীগ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে গিয়েছিলেন মুখপাত্র কুণাল ঘোষ, সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা, দোলা সেন, সায়নী ঘোষ, মমতাবালা ঠাকুর, উত্তরা সিং, শিউলি সাহা, দেবাংশু ভট্টাচার্য। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ভিড়ে ঠাসা হাসপাতালে পৌঁছন তাঁরা। আহত মহিলার স্বামী তাঁদের কাছে গোটা ঘটনার বিবরণ দেন। স্থানীয় তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা দোষীদের কড়া শাস্তির দাবিতে সরব হন। মহিলাও অত্যাচারের বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। এর পর নন্দীগ্রাম হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে নিয়ে আসা হয়েছে কলকাতার এসএসকেএম (SSKM)হাসপাতালে।
ঘটনা ঠিক কী ঘটেছিল? তৃণমূলের (TMC) অভিযোগ, নন্দীগ্রাম ১ নং ব্লকের গোকুলনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের পঞ্চাননতলা এলাকায় এক বধূকে রাস্তায় বিবস্ত্র করে হাঁটানো হয়। ওই বধূ তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী বলে পরিচিত। শুক্রবার রাতে তাঁর বাড়িতে চড়াও হয় কয়েকজন দুষ্কৃতী। ওই মহিলাকে বাড়ি থেকে বের করার পর নগ্ন করে প্রায় ৩০০ মিটার পথ হাঁটানো হয় বলে অভিযোগ। দুষ্কৃতী দলে ২০ থেকে ৩০ জন ছিল বলেও দাবি তৃণমূলের। এই ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর বিজেপির বুথ সভাপতি তাপস দাস-সহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে নন্দীগ্রাম (Nandigram) থানার পুলিশ।
শনিবার ঘটনার কথা শুনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee) নন্দীগ্রামে ৯ সদস্যের প্রতিনিধিদলকে পাঠান। নেতৃত্বে ছিলেন কুণাল ঘোষ। তাঁরা নন্দীগ্রাম হাসপাতালে গিয়ে অত্যাচারিত মহিলা কর্মীর সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে কথা বলেন। কিন্তু তিনি ভালোভাবে কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না। চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। কেঁদে ফেললেন কথা বলতে গিয়ে। তাঁর উপর সংঘবদ্ধভাবে যে পাশবিক অত্যাচার করেছে বিজেপির (BJP) নেতা-কর্মীরা, সেসব শুনে আঁতকে ওঠেন প্রতিনিধিরা। এর পর হাসপাতাল থেকে প্রতিনিধি দলটি পায়ে হেঁটে এক কিলোমিটার দূরে নন্দীগ্রাম থানায় গিয়ে হাজির হয়। সেই সময় তৃণমূল কংগ্রেসের তমলুক (Tomluk) সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি শেখ সুফিয়ানের নেতৃত্বে প্রচুর তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী মিছিল করেন। সেই মিছিল থেকে তাঁরা নন্দীগ্রামের বিধায়ক, তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর পদত্যাগ দাবি করেছেন। নন্দীগ্রাম থানার পুলিশের সঙ্গে শুক্রবার রাতে ঘটনার বিষয়ে কথা বলেন কুণাল ঘোষ, দেবাংশু ভট্টাচার্য, সায়নী ঘোষরা।
কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) জানিয়েছেন, “তৃণমূল কংগ্রেস করার অপরাধে গোকুলনগরে গৃহবধূকে নির্মমভাবে মারধর করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, তার উপরে পাশবিক অত্যাচার করেও বিজেপির নেতা-কর্মীরা ক্ষান্ত থাকেননি। তাকে রাত ৩০০ মিটার রাস্তার উপর টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁর বাড়ির ছোট্ট মেয়েটির উপরেও অত্যাচার করা হয়েছে। বাড়িতে একটি অ্যালসেশিয়ান কুকুর ছিল। কুকুরের চোখ নষ্ট করা হয়েছে। প্রমাণ লোপাটের উদ্দেশ্যে ভাঙা হয়েছে বাড়ির সিসি ক্যামেরা। এই সমস্ত ঘটনার রিপোর্ট আমরা আমাদের নেত্রী, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে, দলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানাব। আর জি করের ঘটনার জন্য মুখ্যমন্ত্রী দোষীদের ফাঁসি চেয়েছেন। আমরা কোনওভাবে দোষীদের আড়াল করতেও চাই না। নন্দীগ্রামে বিজেপি যে ঘটনা ঘটিয়েছে, তা কোনও অংশে কম নয়। ভয়ংকর, লজ্জাজনক ঘটনা। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি আমরা। দোষীদের চিহ্নিত করে কঠিন সাজা দাবি করছি।”