• ​​প্রমাণ লোপাটের আশঙ্কা, আরজি কর কাণ্ডে সুয়োমোটো মামলা নিল সুপ্রিম কোর্ট
    এই সময় | ১৯ আগস্ট ২০২৪
  • এই সময়: আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় তোলপাড় গোটা দেশ। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ঘটনার তদন্তভার নিয়েছে সিবিআই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রবিবারের মধ্যে এই ঘটনায় তদন্ত শেষ করে মূল অভিযুক্তকে চরম শাস্তি দেওয়ার জন্য টাইমফ্রেম বেঁধে দিয়েছিলেন তদন্তকারী এজেন্সি। তদন্তে নেমে বেশ কয়েকজনকে সিবিআই জেরা করলেও রবিবার পর্যন্ত তারা নতুন কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।শুধুমাত্র কলকাতা পুলিশ সঞ্জয় রায় নামে যে সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেপ্তার করেছিল, তাকেই নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে সিবিআই। এই পরিস্থিতিতে আরজি করের ঘটনায় এ দিন স্বতঃপ্রণোদিত হস্তক্ষেপ করল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ সুয়োমোটো মামলা গ্রহণ করেছে। রাখি পূর্ণিমা উপলক্ষে আজ, সোমবার সরকারি ছুটি। আগামিকাল, মঙ্গলবার কোর্ট খুললে প্রথমেই এই মামলা শুনবে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ।

    আইনজ্ঞদের একাংশের মত, তদন্তের গতিপ্রকৃতি থেকে শুরু করে সার্বিক ভাবে মহিলাদের নিরাপত্তার বিষয়টিও খতিয়ে দেখবে শীর্ষ আদালত। এ দিনই আবার পুলিশ-প্রশাসনের একাংশের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রমাণ লোপাটের মতো গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন নির্যাতিতার বাবা-মা। বিষয়টি তাঁরা সিবিআইয়ের কাছেও জানাবেন বলে দাবি করেছেন।

    ডায়েরির একটা পাতাই সূত্র?

    নিহত তরুণী চিকিৎসক যে নিয়মিত ডায়েরি লিখতেন এবং আরজি করের সেমিনার রুমের অকুস্থলে যে সেই ডায়েরিটি পাওয়া গিয়েছিল— শনিবারই তা জানিয়েছিলেন নির্যাতিতার বাবা-মা। কলকাতা পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল সেই ডায়েরিটি তুলে দিয়েছে সিবিআইয়ের হাতে। ওই ডায়েরির তিন-চারটি পাতা ছেঁড়া ছিল বলেও জানিয়েছেন নির্যাতিতার বাবা-মা। রবিবার তরুণীর বাবা বলেন, ‘মেয়ের ডায়েরি লেখার অভ্যাস ছিল ক্লাস নাইন থেকেই। কখন বাড়ি আসবে, কখন কী বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছে— সবকিছুই লিখে রাখত। ওই ডায়েরির তিন-চারটি পাতা নেই।’

    এতে তাঁদের সন্দেহ, কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে সেটা ছিঁড়ে ফেলতে পারে। তবে ওই ছেঁড়া পাতার একটির ছবি তাঁদের কাছে রয়েছে বলে এ দিন জানিয়েছেন তরুণীর বাবা। সেটা তাঁরা কী ভাবে পেলেন, তা অবশ্য তাঁরা স্পষ্ট করেননি। তরুণীর মায়ের অভিযোগ, ‘একটা কথা শুনেছি, মেয়ের দেহ যে অবস্থায় পড়েছিল আর যেটা আমাদের বলা হয়েছে, সেটা এক নয়। প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করা হয়েছে বলে আমাদের সন্দেহ। সেটা আমরা সিবিআইকে জানাব।’ তাঁর সংযোজন, ‘এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে যারা প্রথমে আত্মহত্যা বলে চালাতে চেয়েছিল, তা-ও কম বড় অপরাধ নয়। আমরা চাই, তারও তদন্ত হোক।’

    ভয়ে ছিল মেয়ে?

    নির্যাতিতার পরিবার এ দিন অভিযোগ করে, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের এক শীর্ষ আধিকারিক মেয়েকে খুব চাপে রাখতেন। এমনকী জ্বর হলেও ছুটি দিতে চাইতেন না। তরুণীর বাবার কথায়, ‘এই ঘটনার কিছুদিন আগে মেয়ে একটা মোটরবাইক দুর্ঘটনায় পড়ে। তারপরেও তাকে ছুটি দেওয়া হয়নি। শুধু বলত, আমি যে আরজি করে পড়ছি, সেটা পরিচিত কাউকে বোলো না। তা হলে আমাকে ফেল করিয়ে দেবে। এই ভয়টা ওর ছিল।’

    তরুণীর বাবা-মার অভিযোগ, এমডি-তে গোল্ড মেডেল পাওয়াই লক্ষ্য ছিল মেয়ের। যাতে সেই লক্ষ্যে মেয়ে এগোতে না পারে, সেই জন্য তাঁকে টার্গেট করা হয়েছিল কি না, তা নিয়েও সন্দিহান তাঁরা। বিষয়টি সিবিআইকেও জানিয়েছেন তরুণীর বাবা-মা।

    রহস্যভেদে সঞ্জয়ের মনস্তত্ব বিশ্লেষণ

    সিবিআই সূত্রের খবর, তাদের হেফাজতে থাকা সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায় এখনও তদন্তে সে ভাবে ভাঙছে না। বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ সামনে তুলে ধরে তাকে জেরা করা হলেও খুব একটা সাড়া দিচ্ছে না সে। তাই এ বার তার ‘ফরেন্সিক সাইকোলজিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট’ করাতে চান কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। অর্থাৎ, জেরার সময়ে কোন প্রশ্নে কী ভাবে রিঅ্যাক্ট করছে সঞ্জয়, সেই মনোভাব খুঁটিয়ে পরীক্ষা করতে চান তদন্তকারীরা। সূত্রের খবর, এর আগে বীরভূমের বগটুই গণহত্যার তদন্তেও অভিযুক্তদের ‘ফরেন্সিক সাইকোলজিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট’ পরীক্ষা হয়েছিল।

    তদন্তকারীরা এখনও পর্যন্ত জানতে পেরেছেন, ঘটনার রাতে সে যৌনপল্লিতে গিয়েছিল। একাধিক বার মদ্যপানও করে। তা ছাড়া সে নিজের মা-দিদিদেরও বেশ কয়েক বার মারধর করেছিল বলে জেনেছেন তদন্তকারীরা। কলকাতা পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর সঞ্জয় ভাবলেশহীন গলায় তদন্তকারীদের বলেছিল, ‘আমাকে ফাঁসি দিলে, দিয়ে দিন।’ সিবিআই বোঝার চেষ্টা করছে, সে ইচ্ছাকৃত ভাবে সব দায় নিজের উপর নিতে চাইছে, নাকি ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় তাকে অন্য কেউ ব্যবহার করেছিল!

    তরুণীর উপর কারও আক্রোশ?

    শুক্র ও শনিবার— দু’দিনে প্রায় ২৩ ঘণ্টার পরে রবিবার ফের সিবিআই দপ্তরে হাজিরা দেন আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। সিবিআই সূত্রের খবর, হাসপাতালের অভ্যন্তরে কোনও দুর্নীতির কথা তরুণী জেনে ফেলেছিলেন বলে তাঁকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে বলে বিভিন্ন মহলে যে সব অভিযোগ উঠছে, সেই ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয় সন্দীপের কাছে। পাশাপাশি তরুণীর উপর কোনও চাপ ছিল কি না, সেই ব্যাপারে তিনি কখনও কর্তৃপক্ষকে কিছু জানিয়েছিলেন কি না, তরুণীর সঙ্গে আগে কারও ঝামেলা হয়েছিল কি না, সঞ্জয়কে আগে থেকে চিনতেন কি না সন্দীপ— এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হচ্ছে প্রাক্তন অধ্যক্ষের কাছে।

    শনিবার সিজিও কমপ্লেক্সে ঢোকার সময়ে সন্দীপ বলেছিলেন, ‘আমি তদন্তে সহযোগিতা করছি। দয়া করে গুজব ছড়াবেন না।’ এ দিন অবশ্য সাংবাদিকদের একাধিক প্রশ্নের উত্তরে নিশ্চুপই ছিলেন সন্দীপ। রবিবারও আরজি কর হাসপাতালে গিয়ে থ্রি-ডি স্ক্যানারের সাহায্যে অকুস্থল খতিয়ে দেখে সিবিআই। বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথাও বলেছে তারা।
  • Link to this news (এই সময়)