সংবাদদাতা, বিষ্ণুপুর: গ্রামবাংলায় স্বনির্ভরতার অন্যতম মাধ্যম প্রাণিপালন। তাই রাজ্য সরকার প্রতিবছরই গ্রামের মহিলাদেরকে হাঁস, মুরগি এবং ছাগল বিনামূল্যে দেয়। এবারই প্রথম গোটা রাজ্যে পাইলট প্রকল্প হিসাবে ভেড়া পালনের উদ্যোগ নিয়েছে প্রাণিসম্পদ বিকাশ দপ্তর। গোটা রাজ্যে ১৫টি জেলায় ১১৬টি ব্লকের ২৩২ জন মহিলাকে ১ ইউনিট করে মোট ১ হাজার ১৬০টি ভেড়ার শাবক বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। তার জন্য খরচ হবে ৪৫ লক্ষ টাকা। ইতিমধ্যে দপ্তরের পক্ষ থেকে অর্থ মঞ্জুরও হয়ে গিয়েছে। ভেড়া পালন করে একদিকে মাংসের চাহিদা মিটবে। অন্যদিকে ভেড়ার চামড়া ও লোম বিক্রি করে বাড়তি রোজগার হবে। গ্রামীণ মহিলাদের স্বনির্ভরতার লক্ষেই প্রাণিসম্পদ দপ্তর ভেড়া পালনে উদ্যোগী হয়েছে। এপ্রসঙ্গে জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, রাজ্যে এই প্রথম সরকারি উদ্যোগে ১৫টি জেলায় ভেড়া পালনের একটি নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। আপাতত প্রতিটি ব্লকে পরীক্ষামূলক ভাবে কয়েকজনকে পাঁচটি করে ভেড়া দেওয়া হবে। তাতে সফলতা আসলে আগামী দিনে তার আরও প্রসার ঘটানো হবে। দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বিহার ঝাড়খণ্ড থেকে দলে দলে ভেড়ার পাল পশ্চিমবঙ্গের চারণভুমিতে বড় করে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী লক্ষ লক্ষ টাকা মুনাফা লুটছে। তাই ২০১৯ সালে ২০তম প্রাণী সুমারিতে গ্রাম বাংলায় ভেড়া পালনের সম্ভাবনার কথা বলা হয়। সেই মতো প্রাণিসম্পদ দপ্তর বিষয়টি নিয়ে ভাবনা চিন্তা করে। করোনা পর্বে তা থমকে যায়। চলতি মাসে এ ব্যাপারে দপ্তরের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তাতে পাইলট প্রকল্প চালু করার কথা বলা হয়। প্রাথমিকভাবে ১৫টি জেলায় ১১৬টি ব্লকে প্রকল্প চালু করার কথা বলা হয়। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য এমন মোট ২৩২ জন মহিলাকে চিহ্নিত করে প্রতিজনকে এক ইউনিট ভেড়ার শাবক বিনামূল্যে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতি ইউনিটে ১টি পুরুষ এবং চারটি স্ত্রী শাবক থাকবে। মূলত তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং অনগ্রসর শ্রেণি সম্প্রদায়ভুক্ত মহিলাদেরই তা দেওয়া হবে। প্রাণী পালনের জন্য নিজেদের শেড রয়েছে এমন মহিলাদের আগামী তিনমাসের মধ্যে চিহ্নিত করার জন্য দপ্তরের পক্ষ থেকে প্রতিটি ব্লক প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, গাড়োল, বনপালা এবং ছোটনাগপুরি এই তিনধরনের শাবক দিতে হবে। উপভোক্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কৃমিনাশক ওষুধ এবং প্রতিষেধক নির্দিষ্ট সময় অন্তর দেওয়ার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ব্লক প্রাণিসম্পদ আধিকারিক সহায়তা করবেন। দপ্তরের পক্ষ থেকে প্রতিটি ভেড়ার বিমা করিয়ে দেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, ভেড়া পালকরা আগামী দিনে ইউনিট বাড়ানোর জন্য কেসিসি লোনও নিতে পারবেন। ভেড়ার মাংস, চামড়া এবং লোম ভাল দামে বিক্রি হয়। তাই গ্রামীণ মহিলারা বাড়তি আয় করতে পারবেন। আলিপুরদুয়ার, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভুম, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, নদীয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মালদা এবং মুর্শিদাবাদ। এই ১৫টি জেলায় পাইলট প্রকল্প হিসাবে ভেড়া পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।