ক্লাসরুমে রাখা গ্যাস সিলিন্ডার, ঝুঁকি নিয়ে চলছে প্রাইমারি স্কুল
বর্তমান | ১৯ আগস্ট ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: ক্লাসরুমেই রাখা হয়েছে গ্যাস সিলিন্ডার! পাশেই রান্না হচ্ছে মিড ডে মিল। যেকোনও মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। স্বীকার করে নিচ্ছেন শিক্ষিকারাও। কিন্তু, তাঁদেরও হাত-পা বাঁধা। কারণ জায়গাই তো নেই। স্কুল বলতে তো সাকুল্যে একটিই ঘর। সেখানেই চলে চারটি ক্লাস। ফলে সেই ঘরের মধ্যে যেমন গ্যাস সিলিন্ডার রাখতে হয়, তেমনই থাকে ঝাঁটা, বালতি এমনকী ডাস্টবিনও। এই ছবি কোনও প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুলের নয়, খোদ জলপাইগুড়ি শহরের সদাগরপট্টি আর আর প্রাইমারি স্কুলের।
খাতায়কলমে স্কুলের বয়স ৭৩ বছর। কিন্তু, আজও হাল ফেরেনি। বরং যত দিন যাচ্ছে ততই সঙ্কট হচ্ছে পরিস্থিতি। স্কুলের টিচার ইনচার্জ রীতা ঝা বলেন, খুবই সমস্যায় রয়েছি আমরা। সাকুল্যে একটা ঘর নিয়ে স্কুল চলছে। তার ভিতরেই পড়াশোনা, রান্না-খাওয়া। ক্লাসের মধ্যে ভর্তি গ্যাস সিলিন্ডার থাকে। ভয় তো লাগেই। কখন যে কী হয়!
স্কুলের অপর শিক্ষিকা চৈতালি মুখোপাধ্যায় বলেন, একঘরে একসঙ্গে চারটে ক্লাস চলে। তাহলে বুঝুন, কীভাবে কী হয়! জোরে পড়াতে গেলে আমরা শিক্ষিকারাই একজন অন্যজনের কথা শুনতে পাই না। তা হলে বাচ্চাগুলোর কী অবস্থা হয়। সেজন্য আমরা বেশিরভাগ সময় বোর্ডে লেখাই।
স্কুলটি কীভাবে চলছে, সবটাই জানেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের কর্তারা। কিন্তু, তারপরও সুরাহা হয়নি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান লক্ষ্যমোহন রায় বলেন, সদাগরপট্টি আর আর প্রাইমারি স্কুলের সমস্যা জানি। কিন্তু, ওই স্কুলের জমির কাগজপত্রই পাওয়া যাচ্ছে না। জমির কাগজ না পেলে কীভাবে কী করব। দেখছি, কী করা যায়।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ সূত্রে খবর, একসময় স্কুলটি প্রায় পড়ুয়াশূন্য হয়ে গিয়েছিল। সেসময় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সদাগরপট্টি আর আর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইংলিশ মিডিয়াম চালু করা হবে। সেইমতো চালুও হয়। বাড়তে থাকে পড়ুয়ার সংখ্যা। কিন্তু, এবার সমস্যা দাঁড়ায় অন্যরকম। চতুর্থ শ্রেণি পাশের পর পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য জলপাইগুড়িতে কোনও সরকারি ইংরেজিমাধ্যম স্কুল নেই। ফলে ফের কমতে থাকে পড়ুয়ার সংখ্যা। এখন স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৭ জন।
টিআইসি বলেন, শুধু কি ক্লাসরুমের সমস্যা? আমাদের স্কুলের উপরে বিল্ডিং হচ্ছে। কারা করছে জানি না। শিক্ষাদপ্তর, প্রশাসন সবাইকেই জানিয়েছি। স্কুলের গেট বলতে কিছু নেই। কতক্ষণ আর পড়ুয়াদের ঘরে আটকে রাখা যায়? বাথরুমে যাওয়ার নাম করে কে কখন রাস্তায় চলে যাচ্ছে, আমাদের পিছন পিছন ছুটতে হয়। একটা অঘটন ঘটলে তখন কী হবে! শিক্ষিকা চৈতালি মুখোপাধ্যায়ের দাবি, হামেশাই বাইরের লোক ঢোকে। দু’দিন স্কুল ছুটি থাকলে ভাঙা মদের বোতলও পড়ে থাকতে দেখেছি। সেসব আমাদেরই পরিষ্কার করতে হয়েছে।