• প্রমাণ লোপাট? সিবিআই নজরে সন্দীপের ভূমিকা
    বর্তমান | ১৯ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আর জি করে চিকিৎকের মৃত্যুর ঘটনায় তথ্যপ্রমাণ লোপাট হয়নি তো? এই প্রশ্ন ঘিরেই প্রাক্তন প্রিন্সিপাল সন্দীপকুমার ঘোষের ভূমিকা এখন সিবিআইয়ের আতশ কাচের তলায়। সেমিনার রুমে তরুণীর দেহ পড়ে থাকার খবর জানার পরেও তিনি কীভাবে হাসপাতালের অন্য ডাক্তার ও কর্মীদের সেখানে ঢোকার অনুমতি দিলেন? এ নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে। ঘটনার পর তিনি এক শীর্ষ কর্তাকে ফোন করে কী জানিয়েছিলেন, তা বের করার চেষ্টা করছে সিবিআই। যদিও দীর্ঘ জেরায় সন্দীপবাবু বারবারই দাবি করেছেন, তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর খবর জানার পর যা যা করা দরকার, সবটাই তিনি করেছেন আইন মেনে। ন্যায়বিচারের দাবিতে এদিন রাতে বেলেঘাটায় তাঁর বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়রা।

    শনিবার দীর্ঘ ১২ ঘণ্টা জেরার পর প্রাক্তন অধ্যক্ষকে ছাড়া হলেও নোটিস দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়, রবিবার বেলা ১১টায় হাজির হতে হবে। সেইমতো রবিবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ হাজির হন সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে। প্রায় ১৪ ঘণ্টা জেরার পর এদিন রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ বের হন তিনি। আজ, সোমবার ফের তাঁকে তলব করা হয়েছে। তদন্তকারীরা ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে বুঝেছেন, মেয়েটির দেহ যে জায়গায় পড়েছিল, সেখানে নিয়মমাফিক সতর্কতা ও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অফিসাররা মনে করছেন, বিষয়টি ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে। সিবিআইয়ের বক্তব্য, এক্ষেত্রে প্রিন্সিপাল দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। আধিকারিকরা জেনেছেন, ঘটনার খবর আসার পর সেখানে হুড়মুড়িয়ে একাধিক ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী ঢুকে পড়েন। তাই ফুটপ্রিন্টের কোনও নমুনা পাননি সিবিআই অফিসাররা। তরুণী যেখানে পড়ে ছিলেন, সেই বিছানা সহ বিভিন্ন জায়গায় একাধিক ব্যক্তি হাত দিয়েছে। অথচ ঘটনাস্থল ঘিরে সেখান থেকে তথ্য-প্রমাণ নেওয়া হলে বোঝা যেত, অপরাধের সময় কতজন ঘরে ছিল। প্রাক্তন অধ্যক্ষের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সন্তোষজনক উত্তর মেলেনি। সেমিনার হলের ওই ঘরে কেন তালা দেওয়া হল? এজেন্সির দাবি, হাসপাতালের ওই কর্তার কাছে সকাল ৭টাতেই দেহ উদ্ধারের খবর পৌঁছে দিয়েছিলেন তাঁর এক বিশ্বস্ত সহযোগী। সূত্রের খবর ওই ব্যক্তি সেমিনার হলে গিয়ে ছবি তুলে পাঠান ‘বস’কে। এরপর সন্দীপবাবু হাসপাতালে হাজির হয়েছিলেন। সেখানে অনুগামীদের নিয়ে মিটিং করেন। তদম্তকারীদের অনুমান, কী কী প্রমাণ লোপাট করা হবে তার পরিকল্পনা ঠিক হয়ে থাকতে পারে। সিবিআই দাবি করেছে সাতটা থেকে একাধিক ব্যক্তির আনাগোনা শুরু হয় সেমিনার হলের ওই রুমে। ওই ঘরে সিসি ক্যামেরা না থাকায় কী কী তথ্য-প্রমাণ সরানো হয়েছে, তা চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। যদিও আর জি করের প্রাক্তন কর্তা সিবিআইয়ের কাছে দাবি করেছেন, কারা কারা এসেছিল, তিনি জানেন না। সকালে দেহ উদ্ধারের খবর আসার পরও পুলিসকে দু’ঘণ্টা পর কেন জানানো হল? এর উত্তর এখনও মেলেনি। তাতেই তদন্তকারীদের ধারণা, ওই সময় প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা হয়েছে। সিবিআইয়ের প্রশ্ন, সন্দীপবাবু এক্ষেত্রে কলকাঠি নাড়েননি তো? তাঁরই নির্দেশ মতো কি ধর্ষণের মামলার বদলে অস্বাভাবিক মৃত্যুর কেস রুজু হয়? যদিও এই অভিযোগ প্রাক্তন অধ্যক্ষ স্রেফ অস্বীকার করে গিয়েছেন। সেমিনার হলের দেওয়াল ভেঙে সংস্কার কাজের ব্যাপারে তাঁর সাফাই, এ নির্দেশ অন্য কেউ দিয়েছে। তিনি নন।
  • Link to this news (বর্তমান)