• খাঁ খাঁ সরকারি হাসপাতাল, মানুষের আস্থা হারাচ্ছেন ডাক্তাররা, রোগীরা সব গেল কোথায়!
    বর্তমান | ১৯ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: শুনশান শহরের সরকারি হাসপাতাল। এসএসকেএম, এন আর এস, আর জি কর, চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল, মেডিক্যাল কলেজ একেবারে খাঁ খাঁ করছে। জরুরি বিভাগের সামনে দু’চারটি সারমেয় ছাড়া আর কিছুই নেই। এই চিত্র শুধু রবিবারের নয়, গত দু’-তিনদিনের। নজিরবিহীন। ব্যতিক্রমী। যে সব সরকারি হাসপাতালে একটি বেডের আশায় মাসের পর মাস অপেক্ষায় থাকতে হয়, একটি টেস্টের জন্য তারিখ মেলে তিনমাস পর... সেই আর জি কর বা পিজিতে হাজারো আসন ফাঁকা। আউটডোরে লাইন নেই রোগীদের। টিকিট কাউন্টার তালাবন্ধ। ইমার্জেন্সিতেও রোগী বেশ কম। কিন্তু হাজার হাজার মানুষের ভিড় আচমকা উধাও! কোথায় গেলেন রোগীরা? আর জি কর কাণ্ডে কর্মবিরতির জেরে জুনিয়র ডাক্তাররা পরিষেবা দিচ্ছেন না। তারপরও তো নিরুপায় ও অসহায় মানুষ ছুটে এসেছেন এইসব সরকারি হাসপাতালে। আজ তাঁরাও নেই কেন? তাহলে কি ডাক্তারদের উপর আস্থা হারাচ্ছে মানুষ? মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ঘুরে অসহায় শূন্যতা ছাড়া কিছু নজরে আসে না। একদিকে প্রতিবাদের গর্জন। অন্যদিকে হাসপাতালেই গরিব মুমূর্ষু মানুষের অনুপস্থিতি। কেউ ছুটছেন বেসরকারি নার্সিংহোমে। ভরসা? স্বাস্থ্যসাথী কার্ড। আবার কেউ জেলা হাসপাতাল বা স্থানীয় চিকিৎসকের প্রাইভেট চেম্বারে হত্যে দিচ্ছেন। এটাই এখন বাংলার চিত্র।

    পরিসংখ্যান বলছে, এসএসকেএমের উডবার্ন ওয়ার্ডে ৩৬টি বেড রয়েছে। সারা বছর মোটামুটি ২২ থেকে ২৪টি বেড ভর্তি থাকে। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে দশে। একই অবস্থা আর জি করের। রবিবার জরুরি বিভাগে মাত্র ৫ জন রোগী এসেছিলেন। সকলকেই প্রাথমিক চিকিত্সার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে ২ হাজার বেডের মধ্যে সিংহভাগ খালি। ন্যাশনাল মেডিক্যালেরও এক অবস্থা। হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীদের অনেকের মনে পড়ছে লকডাউনের কথা। জরুরি বিভাগের সামনে সারি দিয়ে পড়ে রয়েছে স্ট্রেচার। তার সামনেই অবস্থান পড়ুয়াদের। ফুলবাগানের শিশু হাসপাতাল বি সি রায়ের চিত্রও এক। আউটডোর বন্ধ। অগত্যা স্থানীয় চিকিত্সককে ফোন করে ছুটলেন রোগী। সল্টলেক স্টেডিয়ামের কাছে ফুলবাগানগামী অটোচালক বলছিলেন, ‘বি সি রায়ে কত রোগী আসতেন। এখন লোক নেই। সকলে জেনে গিয়েছেন এসে লাভ হবে না।’ শুধু তাই নয়, সরকারি হাসপাতালের উপর অনাস্থায় রোগীকে ছুটি করিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পরিজন। আর জি করে এমনই এক রোগীর আত্মীয়ের কথায়, ‘এখানকার ডাক্তার ভগবান। এখান থেকেই বাড়ির লোককে সুস্থ করে নিয়ে ফিরেছি। কিন্তু এখন তো ডাক্তারই নেই। ওঁদের আন্দোলনকে সমর্থন করি। কিন্তু আমাদের দিকটাও তো ভাবতে হবে!’ 

    এদিকে, চিকিত্সকরা নিজেদের ভরসাযোগ্য করে তোলার জন্য বদ্ধপরিকর। এদিন মেডিক্যাল কলেজে দেখা গেল, জুনিয়র চিকিত্সকরা ব্যানার লাগিয়েছেন। লেখা রয়েছে, গুজবে কান দেবেন না। জরুরি পরিষেবা চালু রয়েছে। আর জি করের পড়ুয়ারা কলেজ স্ট্রিট থেকে যে মিছিল করেছিলেন, সেখানেও এমন ব্যানার দেখা গিয়েছে। কিন্তু পড়ুয়ারা অনড়। আন্দোলন থেকে ওঁদের বার্তা, ‘আমরা কাজে ফিরতে চাই। কিন্তু নিরাপত্তা কে দেবে?’
  • Link to this news (বর্তমান)