সুন্দরবনের হোম থেকে নতুন বাবা-মার হাত ধরে সোজা আমেরিকা পাড়ি শিশুর
বর্তমান | ১৯ আগস্ট ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: তিন বছরের বাচ্চাটি আধো আধো বুলিতে কথা বলত। শুনতে বেশ মিষ্টি। ওর মা থেকেও নেই। বাবার খোঁজ কেউ জানে না। হোমে থাকে সে। একলা বলেই সম্ভবত মনমরা ভাব। তার সঙ্গে দেখা হয় এক প্রবীণ দম্পতির। তাঁরা আমেরিকায় থাকেন। নিঃসন্তান। বাঙালি। বাচ্চাটিকে দেখেন তাঁরা। দত্তক নেবেন বলে মনস্থির করেন। ভিডিও কলে প্রায়শই কথা হতো। হতে হতে শিশুটির আপনজন হয়ে ওঠেন। বিমানের শব্দ পেলে বাচ্চাটি আকাশের দিকে মুখ তুলে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকত। এবার সেই বিমানে চড়ে সে পাড়ি দিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। পঞ্চাশোর্ধ্ব দম্পতি খাতায় কলমে দত্তক নিয়ে তাকে নিয়ে গিয়েছেন। সেখানে পড়াশোনা শিখবে বাচ্চাটি। তার এখন চার বছর বয়স। সে এখন আর অনাথ নয়। দস্তুরমতো একজন মা আর একজন বাবা পেয়ে গিয়েছে সে।
গত বছর সোনারপুরে রাস্তা থেকে উদ্ধার হয়েছিল শিশুটি। পুলিস জানিয়েছিল, বাচ্চাটির কাছ থেকে যতটুকু তথ্য উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, তা থেকে জানা গিয়েছে, মা তাকে ফেলে চলে গিয়েছেন। পুলিস তাকে পাথরপ্রতিমার দিগম্বরপুরের একটি হোমে পাঠায়। নিয়ম অনুযায়ী, শিশুর কোনও আত্মীয়-স্বজন বা পরিবারের খোঁজ পেতে দেওয়া হয়েছিল বিজ্ঞাপন। তবে নির্ধারিত সময়ের পরও কেউ নিতে আসেনি তাকে। তখন দত্তক প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসা হয় শিশুটিকে।
সূত্রের খবর, মার্কিন প্রবাসী ওই দম্পতি ২০১৮ সালে শিশু দত্তক নেওয়ার আবেদন করেছিলেন। তারপর নথিপত্র পরীক্ষা ইত্যাদি হয়। আবেদন যাচাইয়ের কাজও শুরু হয়। ২০২৩ সালে যাচাই পর্ব শেষে দত্তক নেওয়ার প্রথম অপশন দেওয়া হয় তাঁদের। তাঁরা শিশুটিকে দেখেন। প্রথম নজরে ভালোবেসেও ফেলেন। আর দ্বিতীয় কোনও ভাবনাচিন্তা না করেই সন্তান হিসেবে গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। এরপর সমস্ত নথিপত্র ও সরকারি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে জুন মাসে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাশাসক সুমিত গুপ্তার অফিসে চূড়ান্ত শুনানি হয়। দত্তক নেওয়ার যাবতীয় কাজকর্ম শেষ হয়। আর তার দিন কয়েক বাদে মার্কিন মুলুকে উড়ে যায় জারিনা। জেলাশাসক বলেছেন, ‘এই জেলা থেকে প্রথমবার কাউকে বিদেশে দত্তক নেওয়া হল। আশা করব শিশুটি ভালো থাকবে। ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে ওর।’