• গয়ার পথে এখনও মহানগরের বার্মিজ বুদ্ধ মন্দির স্পর্শ করেন মায়ানমারের পুণ্যার্থীরা
    বর্তমান | ১৯ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: নাজির বলতে শুরু করলেন, বাপ-ঠাকুরদার কাছে শোনা গল্প। কাহিনি ১৯৯৭ সালের। মায়ানমার থেকে এক ব্যক্তি সোনার তৈরি বুদ্ধ মূর্তি পাঠিয়েছিলেন। মূর্তি স্থাপন হল। তারপর এক কাণ্ড। তখন যিনি প্রধান ছিলেন তাঁর কাছে একের পর এক হুমকি ফোন আসা শুরু। প্রধান ভয় পেয়ে গেলেন। ফোন করলেন মায়ানমার দূতাবাসে। তারপর মূর্তি পাঠানো হল বৌদ্ধ গয়ায়। ধীরে ধীরে হুমকি ফোন আসা বন্ধ হল।

    আর চার বছর বাদে একশোতে পা দেবে এই বৌদ্ধ মন্দির। কলকাতার সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশন, তার কাছেই ১০এ ইডেন হসপিটাল রোড। সেখানে জীর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে মন্দিরটি। মায়ানমারকে তখন বার্মা বলে ডাকত  লোকে। সে দেশের কয়েকজন এসে মন্দিরটি তৈরি করেছিলেন। নাম দিয়েছিলেন ‘বার্মিজ বুদ্ধ মন্দির’। বুদ্ধ মূর্তিটি অপরূপ। এককালে এটি ছিল বৌদ্ধদের ধর্মশালা। বুদ্ধগয়াতে যাওয়ার সময় আজও মায়ানমার থেকে আসা পুণ্যার্থীরা এখানে দু-তিনদিন থেকে যান। এখনও এ রীতি রয়ে গিয়েছে। জীর্ণ দরজার ভিতরে সিঁড়ির নীচে একটি বিছানা পাতা। তাতেই দিনভর বসে থাকেন নাজির হুসেন। তাঁর পূর্বপুরুষ বেগুসরাই থেকে এসেছিলেন। তারপর এখানেই ঠাঁই নেন। নাজির তৃতীয় প্রজন্ম। এখন তিনি মন্দিরের দেখভাল করছেন। কড়া মেজাজের লোক। সকাল ন’টা থেকে একটা পর্যন্ত মন্দির দর্শনের সময়। এর সময়ের বাইরে কেউ প্রবেশাধিকার পায় না। নাজিরের উপর আসিন ডিকাসার অগাধ ভরসা। আসিন এই মুহূর্তে মন্দিরের দায়িত্বে রয়েছেন। নাজির মন্দির দেখানো শুরু করলেন। দেওয়ালে পূর্বতন মন্দির প্রধানদের ছবি টাঙানো। প্রথম প্রধান ছিলেন ইউ সান মিন। তিনি বারাসতের উদ্বাস্তু ক্যাম্পে থাকতেন। ব্রিটিশদের কাছ থেকে এই জায়গাটি কিনেছিলেন। তখন বহু মানুষ বুদ্ধগয়া যাওয়ার পথে মন্দিরে এসে থাকতেন। এখনও আসেন পুণ্যার্থীরা। আসিন একসময় এলেন। একগুচ্ছ গাছ দেখিয়ে বললেন, ‘এই গাছগুলোর নাম জ্যামপাত্রা। মায়ানমার থেকে আনা হয়েছে।’ ১৯২২ সালে মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল। ছ’বছর লেগেছিল কাজ শেষ করতে। কালের নিয়মে ভাঙছে বার্মিজ মন্দির। নানা ধর্মের মানুষজন তবু দেখতে আসেন। অবাক হয়ে দেখে যান অমিতাভ ঘোষের লেখা ‘দ্য গ্লাস প্যালেস’ উপন্যাসে উল্লেখিত এই বৌদ্ধ মন্দির।
  • Link to this news (বর্তমান)