এই সময়: অল মেন আর পোটেনশিয়াল রেপিস্ট? অর্থাৎ পুরুষমাত্রই সম্ভাব্য ধর্ষক? আরজি কর হাসপাতালের ঘটে যাওয়া তরুণী-চিকিৎসকের মর্মান্তিক পরিণতির পর রাত দখলের ডাক দিয়েছিলেন মেয়েরা। সেই ডাকের অভাবনীয় সাফল্যের পর এখন সামাজিক মাধ্যম উত্তাল হয়েছে এই প্রশ্নে।অনেক নারীবাদী দাবি করেছেন, পুরুষ মাত্রই সম্ভাব্য ধর্ষক। যা নিয়ে বিতর্কের পারদ চড়ছে সামাজিক মাধ্যমে। অভিনেত্রী গুলশনারা খাতুন তাঁর ফেসবুকে এই বক্তব্যটি লিখে একটি পোস্ট করেন। ওই পোস্টের একেবারে শেষে তিনি এও লেখেন, ধর্ষক মানেই পুরুষ। ‘পুরুষ’ হলে ধর্ষক নন। আর এখান থেকেই বিতর্ক দানা বেঁধেছে।
আবার সম্প্রতি রাজ্য মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, যেখানে যেখানে সম্ভব, সেখানে পারলে মহিলাদের নাইট ডিউটি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক। সরকারের এই পরামর্শ নিয়েও বহু মানুষ এমনকী মেয়েরাও আপত্তি তুলেছেন।
পুরুষ মাত্রই সম্ভাব্য ধর্ষক কেন? গুলশনারা বলছেন, ‘এই রাত দখলের কর্মসূচিতেও আমি বহুবার পুরুষের কনুইয়ের গুঁতো খেয়েছি। ওঁরা আমার শরীর টার্গেট করেছিল। এমনকী, যাদবপুরে ভোরবেলা আমার দুই মহিলা কমরেডকে বাইকে চেপে থাকা এক যুবক কত টাকা লাগবে বলে কু-ইঙ্গিত করে। গত শনিবার রাতে যাদবপুরে এই কথা লেখার জন্য আমার ওপর কিছু ছেলে হামলা করে। আমি পুলিশেও অভিযোগ করেছি।’
আর এই সব কারণ দেখিয়েই গুলশনারা নিজের সিদ্ধান্তে এসেছেন। এ দিকে গুলশনারার পোস্ট শেয়ার করে বহু মহিলাই এর বিরোধিতা করেছেন। রাত দখল হোক বা ধর্ষণের বিচার চেয়ে নানা মিছিলে যে ভাবে পুরুষের যোগদান চোখে পড়ছে, তাতে অনেকেরই মনে হয় না সব পুরুষই ধর্ষক।
রাত দখলের অন্যতম আয়োজক শতাব্দী দাস বলছেন, ‘কোনও একটি লিঙ্গকে মানে এ ক্ষেত্রে মহিলাদেরই কেবল সচেতন করলে হবে না। একই ভাবে পুরুষকেও লিঙ্গ সাম্যের বিষয়ে সচেতন করতে হবে। তাই পুরুষ মানেই ধর্ষক বললে আমরা তাঁদের কৌশলগত ভাবেই হারিয়ে ফেলব।’
অন্যদিকে নিরাপদ রাতের দাবি জানিয়ে রাত দখলের ডাক দেওয়া মেয়েরা হতাশ সরকারি পরামর্শ নিয়েই। রাত দখলের ডাক প্রথম দিয়েছিলেন রিমঝিম সিনহা। তাঁর প্রশ্ন, ‘রাতকে নিরাপদ করতে আমরা দখল নিয়েছিলাম। আর সরকার আমাদেরই বলছে রাতে ডিউটি কোরো না? এটা কখনও হয়?’ মহিলা ডাক্তাররাও এই পরামর্শের বিরুদ্ধে।
নিউরোলজিস্ট যশোধরা চৌধুরীর কথায়, ‘ডাক্তার হিসেবে আমাদের প্রশিক্ষণের মধ্যেই নাইট ডিউটি রয়েছে। আর নার্স, ডাক্তাররাই তো শুধু নাইট ডিউটি করেন না। অনেক সাংবাদিক, পুলিশ, আইটি কর্মীকেও নাইট ডিউটি করতে হয়। তাই রাতটাকে নিরাপদ করা দরকার। এই ভাবে নাইট ডিউটি বন্ধ করে কোনও লাভ হবে না।’