নাইট ডিউটিতে সাহস জোগাবে নতুন পদক্ষেপ, আশাবাদী স্বাস্থ্যমহল
এই সময় | ১৯ আগস্ট ২০২৪
এই সময়: শুধু মহিলাদের নিরাপত্তাই নয়, রাতের হাসপাতালে লিঙ্গ নির্বিশেষে সব স্তরের স্বাস্থ্যকর্মীরই নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় মদ্যপ পরিজনের আচমকা হামলায়। তাই রাজ্য সরকারের তরফে শনিবার ঘোষিত 'রাত্তিরের সাথী' নামের সরকারি প্রকল্পে ইমার্জেন্সিতে ঢোকার ক্ষেত্রে 'ব্রেথ অ্যানালাইজ়ার' পরীক্ষাকে স্বাগত জানাচ্ছেন চিকিৎসক থেকে শুরু করে নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।তাঁদের মতে, রাতে হাসপাতাল ভাঙচুরের অধিকাংশ ঘটনার নেপথ্যেই যেহেতু মদ্যপ ব্যক্তিদের ভূমিকা থাকে প্রায়শই, তাই তাঁদের আটকানো গেলে সামগ্রিক ভাবে গোটা স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানই উপকৃত হবে। পাশাপাশি, মহিলাদের নাইট ডিউটির ক্ষেত্রে একসঙ্গে অন্তত দু'জন মহিলার ডিউটি করার নির্দেশিকাকেও মহিলা কর্মীদের মনোবল বাড়ানোর সহায়ক বলে মনে করছে স্বাস্থ্য মহলের একটি বড় অংশই।
শনিবার এই প্রকল্পের কথা নবান্নে ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। এ নিয়ে আজ, সোমবারই সরকারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হতে পারে। আরজি করে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের পর মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার বিষয়টি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে নবান্নের কাছে।
তাই এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে শনিবার বৈঠক করেন রাজ্যের মুখ্যসচিব ভগবতীপ্রসাদ গোপালিকা, স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তী, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার, মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকের পর আলাপন জানান 'রাত্তিরের সাথী- হেল্পার্স অফ দ্য নাইট' প্রকল্পের সূচনার কথা।
এর পরেই মহিলাদের জন্য সুস্থ ও নিরাপদ কর্মস্থল সুরক্ষিত করার উদ্দেশ্যে ১০ দফা নির্দেশিকা প্রকাশ করে রাজ্য সরকার। তাতে সরকারি হাসপাতালে যথাসম্ভব মহিলাদের নাইট ডিউটি থেকে অব্যাহতি দেওয়া, কোনও ভাবেই ১২ ঘণ্টার বেশি ডিউটি না দেওয়ার পাশাপাশি মহিলা স্বেচ্ছাসেবক, সিসিটিভি-র আওতায় থাকা সেফ জ়োন, সুরক্ষা অ্যাপ, হেল্পলাইন নম্বর ইত্যাদি চালুর কথাও বলা হয়।
নির্দেশিকায় আরও বলা হয়, রাতের হাসপাতালে যাঁরা ঢুকবেন, তাঁরা কেউ মদ খেয়ে আছেন কি না, তা বুঝতে তাঁদের ব্রেথ অ্যানালাইজ়ার দিয়ে পরীক্ষা করা হবে। তাতে যদি দেখা যায়, কেউ মদ খেয়ে আছেন, তা হলে তাঁকে আর ঢুকতে দেওয়া হবে না। এতে অহেতুক ঝামেলা এড়ানো যাবে। তবে বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েও চিকিৎসক সংগঠন সার্ভিস ডক্টর্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাসের প্রশ্ন, এ ভাবে কতজনের ব্রেথ অ্যানালাইজ়ার দিয়ে পরীক্ষা করা সম্ভব?
স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, গোটা হাসপাতাল চত্বরের মধ্যে রাতে রোগী আসেন কেবলমাত্র ইমার্জেন্সিতে। তাই সেখানে ঢোকার মুখে নিশ্বাস পরীক্ষা করলেই চলবে। এতে রোগীর চিকিৎসায় কোনও অবহেলা করা হবে না। তাঁর চিকিৎসা হবে যথাযথই। শুধু সঙ্গে আসা মদ্যপ ব্যক্তিদের ঢুকতে দেওয়া হবে না।
একই ভাবে জোড়া মহিলা কর্মীর একসঙ্গে ডিউটির ব্যাপারটিকেও সমর্থন করছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একসঙ্গে দুই মহিলা কর্মী রাতে কাজ করলে যেমন একে অন্যের উপর তাঁরা নজর রাখতে পারবেন, তেমনই উভয়েরই মনোবল বৃদ্ধি পাবে রাত হওয়া সত্ত্বেও। যদিও চিকিৎসক সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টর্সের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটার প্রশ্ন, এত মহিলা চিকিৎসক পাওয়া যাবে তো জোড়ায় ডিউটি রস্টার তৈরির জন্য?
স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ মনে করছেন, নির্দিষ্ট একটি বিভাগে সংখ্যার কারণে সমস্যা তৈরি হলেও, একই বা পাশাপাশি ওয়ার্ডে কর্মরত দু'টি আলাদা বিভাগের মহিলা কর্মীদের নাইট ডিউটির সময়ে একসঙ্গে ডিউটি দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। তাই সরকারি উদ্যোগকে মোটের উপর সাধুবাদ জানাচ্ছেন অধিকাংশই। ১৪ অগস্ট 'মেয়েদের রাত দখল'-এর ডাক দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী রিমঝিম সিনহা।
তাঁদের সমাবেশ থেকে বেশ কিছু দাবিদাওয়া উঠে আসে। সরকারি নির্দেশিকা প্রকাশের পরে রিমঝিমরা মনে করছেন, সার্বিক ভাবে না হলেও কিছু ক্ষেত্রে 'জয়' আসতে শুরু করেছে। তাঁর কথায়, 'টয়লেট সমেত নিরাপদ রেস্টরুম রাখার বিষয়টি ১০ দফা নির্দেশিকায় রেখেছে সরকার। তবে এখনও কিছু দাবি মেনে নেওয়া বাকি আছে।'