দুর্নীতি ঢাকতেই টার্গেট তরুণী ডাক্তার? সন্দেহ প্রাক্তন কর্তার
এই সময় | ১৯ আগস্ট ২০২৪
এই সময়: আরজি কর হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের পিছনে ঠিক কী কারণ, তা খুঁজে বের করতে তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই। তবে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তার থেকে শুরু করে নির্যাতিতার পরিবার— প্রত্যেকেরই সন্দেহ, এর পিছনে কোনও বড় ষড়যন্ত্র থাকার সম্ভাবনা বেশি। হাসপাতালের ভিতরে কোনও ভয়ঙ্কর অনিয়মের কথা জেনে ফেলাতেই কি ধর্ষণ-খুন করা হয়েছে তরুণী চিকিৎসককে, এমনও আশঙ্কা অনেকের।আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের কেউ কেউ এমনও মনে করছেন, এক বছর আগে আরজি কর হাসপাতালেরই এক ডেপুটি সুপার যে সব বেআইনি কারবারের কথা প্রকাশ্যে এনে কর্তৃপক্ষের কোপের মুখে পড়ে বদলি হয়ে গিয়েছিলেন, সেই সব অনিয়মের মধ্যে অনেকগুলিই রয়েছে যা কেউ জেনে ফেলে প্রতিবাদ করে উঠলে বিপদে পড়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।
সেই সব অনিয়মের মধ্যে অন্যতম হলো— বড় অঙ্কের বরাতকে ছোট ছোট বরাতে ভেঙে অনলাইন টেন্ডার এড়িয়ে পছন্দের সংস্থাকে খারাপ গুণমানের ওষুধের অর্ডার দিয়ে লাভবান করে দেওয়া কিংবা কোভিড ফান্ড ব্যবহার করে চেয়ার-সোফা-আসবাব কেনা অথবা হাসপাতালের চিকিৎসা-বর্জ্য মোটা টাকার বিনিময়ে নিয়মবিরুদ্ধ ভাবে পাচার করে দেওয়ার মতো কারবার।
মূলত আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে তোলা সেই সব অভিযোগ একত্রিত করে ২০২৩-এর ১৪ জুলাই রাজ্য ভিজিলেন্স কমিশনে চিঠি দিয়েছিলেন আরজি করের তৎকালীন ডেপুটি সুপার আখতার আলি। বর্তমান আবহে সেই অভিযোগগুলি নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।
রবিবার আখতার আলি ‘এই সময়’কে বলেন, ‘ভিজিলেন্স কমিশন কয়েক বার আমাকে ডেকেছিল অভিযোগগুলো বিশদে জানার জন্য। ব্যাস, ওই পর্যন্তই! তার পর আর কিছু হয়নি। বরং কিছু দিন পরে আমি মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে বদলি হয়ে যাই। তৎকালীন অধ্যক্ষও (সন্দীপ) বদলি হয়েছিলেন মুর্শিদাবাদে। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ওঁর বদলির অর্ডার বাতিল হয়ে যায়।’
আখতার জানান, সন্দীপের হরেক দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি সরব হওয়ার পর তিনি প্রাণনাশের আশঙ্কাও করেছিলেন একসময়ে। তখন তিনি পুলিশের দ্বারস্থ হন। তাই তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর নেপথ্যেও আরজি করের কোনও দুর্নীতি ফাঁস হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তিনিও। আখতারের বক্তব্য, ‘সদ্যপ্রাক্তন অধ্যক্ষ সব জানেন বলেই আমার বিশ্বাস। আশা করি, সিবিআই তাঁকে জেরা করলে অনেক তথ্য জানতে পারবে।’
ইতিমধ্যে সন্দীপকে তিন দিন ধরে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। তবে কয়েক দিন আগে সন্দীপ নিজে দাবি করেছিলেন, ‘আমি স্পষ্টবক্তা। তার উপর আবার আরজি করে এসে ঘুঘুর বাসা ভেঙেছি। ফলে আমার শত্রু অনেক। নানা অভিযোগ তো উঠবেই।’ রবিবার সন্দীপের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তাঁকে ফোনে ও মেসেজ মারফৎ যোগাযোগের চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।
যদিও সন্দীপের আইনজীবী বিশ্বরূপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘কলকাতা হাইকোর্টের মাননীয় প্রধান বিচারপতির নির্দেশে একটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার তদন্ত করছে সিবিআই। সেই তদন্তেই সিবিআই ওঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এর সঙ্গে ওঁর বিরুদ্ধে ওঠা হাসপাতাল পরিচালনা সংক্রান্ত পুরোনো অভিযোগের কোনও যোগাযোগ আছে বলে আমি মনে করি না। তাই এ ব্যাপারে আমি আর কোনও মন্তব্য করব না।’
ভিজিলেন্স কমিশনে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, সবচেয়ে বড় অভিযোগ আর্থিক নয়ছয়। স্বাস্থ্যভবন ও কলেজ কাউন্সিলকে এড়িয়ে হাসপাতাল চত্বরে ফুডস্টল, ক্যাফে, ক্যান্টিন ইত্যাদি চালানোর সুযোগ করে দেওয়ার মাধ্যমে স্বজনপোষণের অভিযোগও উঠেছে। রয়েছে পূর্ত দপ্তরকে এড়িয়ে বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে সিভিল ও ইলেকট্রিক্যাল কাজ করার বরাত দেওয়া ও সরকার নির্ধারিত সংস্থার বদলে বিপজ্জনক চিকিৎসা-বর্জ্য পছন্দের লোককে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগও। কোভিড পরিষেবা এবং অ্যাকাডেমিক কাজকর্মের জন্য বরাদ্দ অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগও রয়েছে তৎকালীন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।