সংবাদদাতা, হলদিয়া: পড়ুয়া ও অভিভাবকদের নিয়ে রাখিবন্ধন উৎসবের আয়োজন করেছে হলদিয়ার বাড়সুন্দরায় শিবপ্রসাদ শিক্ষাকেন্দ্র ও পাঠাগার। আজ, সোমবার একইসঙ্গে নবীনবরণ, ৩১তম বার্ষিক মিলনোৎসব এবং পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানও হবে শিক্ষাকেন্দ্রে। শিক্ষাব্রতী বিদ্যুৎকুমার বেরা দাসের উদ্যোগে ও আর্থিক সহায়তায় ১৯৯৪ সালে শুরু হয়েছিল এই প্রতিষ্ঠান।
গ্রামের শিক্ষিত কর্মহীন তরুণ-তরুণীদের পাঠদানের সুযোগ তৈরি করতে বিদ্যুৎবাবু নিজের বাড়ির উঠানে গড়ে তোলেন ওই শিক্ষাকেন্দ্র। গরিব পরিবার ও অনাথ ছেলেমেয়েরা বিনামূল্যে বা সামান্য অর্থ দিয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। সেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই এখন দেশে ও বিদেশে নানা পেশায় কর্মরত এবং প্রতিষ্ঠিত। এবছর তাঁদের মধ্যে দশজনকে বিশেষ সম্মাননা প্রদানের আয়োজন করা হয়েছে।
রবিবার বিকেলে উৎসবের সূচনা করেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ সুজনকুমার বালা। তিনি বলেন, ভারতের সমস্ত জাতীয় উৎসবের ইতিহাস ও তাৎপর্য নবীন শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরতে হবে। না হলে দেশ ও জাতির গরিমা এবং পরম্পরা বজায় রাখা যাবে না।
এদিন উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শক্তিপ্রসাদ বেরা, প্রাক্তন শিক্ষক দীপক বেরা দাস সহ অন্যান্য শিক্ষক ও পড়ুয়ারা। দীপক বেরা দাস বলেন, আমরা কয়েকজন যুবক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ানোর মাধ্যমে নিজেদের চাকরিযোগ্য তৈরি করতে পেরেছিলাম। পরবর্তীকালে সরকারি কাজ পেতে সুবিধা হয়েছে। তাই এখানকার অবদান ভুলতে পারি না। কাজের ফাঁকেই পড়ুয়াদের সঙ্গে এসে অভিজ্ঞতা বিনিময় করি। স্থানীয় লক্ষ্মীজনার্দন ও পিনাকেশ্বর মন্দিরের পাশে শিক্ষাকেন্দ্রের পাঠাগার এলাকার পড়ুয়াদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। পাঠাগারে বিভিন্ন স্বাদের প্রায় এক হাজার বইয়ের সম্ভার রয়েছে। শিক্ষার্থীদের হাতে প্রতি বছর বিনামূল্যে পাঠ্যবই তুলে দেওয়া হয়। শিক্ষাকেন্দ্রের প্রাক্তন শিক্ষক, প্রাক্তনীদের সঙ্গে নতুন শিক্ষার্থীদের মেলবন্ধনের জন্যই রাখিবন্ধন অনুষ্ঠান হয় ঘটা করে।
প্রধান শিক্ষক শক্তিপ্রসাদ বেরা বলেন, রাখিবন্ধন ও নবীনবরণ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এলাকায় উৎসাহ এবং উদ্দীপনা তৈরি হয়। বর্তমানে ওই শিক্ষাকেন্দ্রে ১৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা চারশোর বেশি গরিব সাধারণ পড়ুয়াকে সামান্য পারিশ্রমিকে পড়াচ্ছেন। এবছর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল সন্তোষজনক। উচ্চমাধ্যমিকে ২৩জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাঁচজন স্টার, ন’জন প্রথম বিভাগ ও ন’জন দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে। সর্বোচ্চ নম্বর ৪৫১। মাধ্যমিক পরীক্ষায় ২১ জনের মধ্যে দু’জন স্টার, চারজন প্রথম বিভাগ ও ১৫জন দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে। শিক্ষাকেন্দ্র ও পাঠাগারের সভাপতি কার্তিকচন্দ্র বেরা দাস বলেন, গ্রামীণ পরিবেশে গড়ে ওঠা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি সমাজের অসহায় ও পিছিয়ে পড়া পরিবারের শিক্ষার্থীদের কাছে আশা ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছে।