• ট্যুরিস্ট পার্টি ধরতে মাঝরাস্তায় টোটো চালকদের দাদাগিরি, যানজটে অবরদ্ধ শান্তিনিকেতনের হেরিটেজ বাফার জোন
    বর্তমান | ১৯ আগস্ট ২০২৪
  • সংবাদদাতা, বোলপুর: লালটা আমার, ঠিক আছে তাহলে নীলটা আমার। এই সাদাটা তুই ধর। শান্তিনিকেতন রোডে যাতায়াত করলে বিশ্বভারতীর ফার্স্ট গেটে এই সংলাপ কানে আসবেই‌‌। কিন্তু এরা কারা? এদের কাজই বা কী? এরা প্রত্যেকেই টোটো চালক। কাজ, মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে ট্যুরিস্ট গাড়ি আটকানো। তারপর গাড়ি পার্ক করিয়ে ভ্রমণার্থীদের শান্তিনিকেতন ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় নিজেদের টোটোয় ঘোরানো। প্রশ্ন উঠতে পারে, এতে সমস্যা কোথায়? সমস্যা এদের কার্যকলাপে। প্রতিদিন মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে এই দাদাগিরির ফলে যানজট মারাত্মক আকার নিচ্ছে। নিত্যদিন দুর্ঘটনা ঘটছে। জায়গাটি শান্তিনিকেতনে হেরিটেজ কোর এরিয়া থেকে মাত্র ২০০ মিটার দূরে তথা বাফার জোনে রয়েছে। এলাকাটি বোলপুর পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড তথা শান্তিনিকেতন থানার অন্তর্গত। সংশ্লিষ্ট রাস্তায় যানজট যাতে না হয় সেজন্য বিশ্বভারতী ইতিমধ্যেই প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে। 


    কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে তারপরেও থানা ও পুর প্রতিনিধির নজরদারি একেবারেই নেই বলে অভিযোগ। সেই সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করছেন এই টোটো চালকরা। তাদের দাদাগিরির জন্য সমস্যায় পড়েছেন বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। কড়া পদক্ষেপ নিয়ে অবিলম্বে টোটো চালকদের এই দৌরাত্ম্য কমানোর দাবিতে সরব হয়েছেন অনেকে। এমতাবস্থায় পুলিস ও প্রশাসন সক্রিয় হয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কবে ব্যবস্থা নেয়, সে দিকেই তাকিয়ে সকলে। 


    রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে শান্তিনিকেতন উজ্জ্বল নাম। রবি ঠাকুরের ঐতিহ্যবাহী বিশ্বভারতী, সোনাঝুরি খোয়াইয়ের হাট, সতীপীঠ কঙ্কালীতলা ঘুরে দেখতে সারা বছরই পর্যটকের ঢল নামে। সেজন্য শান্তিনিকেতন রোডে যানজট সাধারণ বিষয়। বিশেষত শনি ও রবিবার জ্যামের কারণে স্থানীয়দের চলা দায় হয়ে ওঠে। এই রাস্তার পাশেই রয়েছে মৃণালিনী আনন্দ পাঠশালা, পাঠভবন সহ বিশ্বভারতীর অন্যান্য ভবন। ছাত্রছাত্রীরা এই রাস্তায় চলাচল করেন বলে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে ফার্স্ট গেট ও থার্ড গেটে স্পিড বাম্প করা হয়েছে। শান্তিনিকেতনের ফার্স্ট গেটেই রয়েছে একটি টোটো স্ট্যান্ড। চালকরা এই স্পিড বাম্পকে কাজে লাগিয়ে কার্যত মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে ট্যুরিস্ট গাড়ি ধরেন পার্কিংয়ের জন্য। আর তাতেই যানজট শুরু হয়। পথচলতি অনেক মানুষ এর প্রতিবাদও করেন‌। কিন্তু অধিকাংশ টোটো চালক স্থানীয় হওয়ায় দাদাগিরি করেন বলে অভিযোগ। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের স্বীকৃতির পর শান্তিনিকেতনের আশ্রম পরিবেশ সুরক্ষিত রাখতে ও যানজট কমাতে ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে বিশ্বভারতী। মহকুমা পুলিস প্রশাসন প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট রাস্তায় টোটো চালকদের দৌরাত্ম্য একটুও কমেনি, বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে। শ্যামবাটির বাসিন্দা অরূপ ঘোষ, সীমন্তপল্লির পরিতোষ মুখোপাধ্যায় অভিযোগের সুরে বলেন, ওই রাস্তায় নিত্যদিন যাতায়াত করতে হয়। টোটো চালকরা যেভাবে মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে গাড়ি আটকাচ্ছে তা অনৈতিক। এতে তারাও যে কোনও সময় দুর্ঘটনায় পড়তে পারে। পুলিসের উচিত এই সমস্যাটির প্রতিকার করা। বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ বলেন, যে যে কারণে যানজট হচ্ছে পুলিস ও প্রশাসনকে তা জানানো হয়েছে। কবে সেই সমস্যার সমাধান হবে, আমরা সেদিকেই তাকিয়ে।
  • Link to this news (বর্তমান)