আরজি কর হাসপাতালের সেমিনার হলে নৃশংস ভাবে ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছিল ৩১ বছর বয়সি এক ট্রেনি চিকিৎসককে। সেই ঘটনার প্রতিবাদে গত ১৪ অগস্ট 'মেয়েদের রাত দখল' কর্মসূচি ঘিরে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল আরজি কর চত্বরে। অভিযোগ উঠেছিল, প্রমাণ লোপাট করতে হাসপাতালে হামলা চালানো হয়। তবে এরও আগে প্রমাণ লোপাট করার অভিযোগ উঠেছে আরও এক ঘটনা ঘিরে। আরজি করের যে সেমিনার হল থেকে পিজিটি মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়েছিল, তার খুব কাছেই ভাঙা হয়েছিল একটি ঘরের দেওয়াল। এই আবহে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে কেন এত তৎপরতার সঙ্গে এই কাজ শুরু হয়েছে। অভিযোগ ওঠে, আরজি কর হাসপাতালের সদ্য প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের নির্দেশেই ওই সংস্কারের কাজ শুরু হয়। এই পরিস্থিতিতে এবার গোটা বিতর্ক নিয়ে মুখ খোলেন পূর্ত ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মন্ত্রী পুলক রায়।
রবিবার উলুবেড়িয়ায় তৃণমূলের ধরনা মঞ্চ থেকে পুলক রায় বলেন, 'গুজব ছড়ানো হচ্ছে যে প্রমাণ লোপাটের জন্য ওই ঘর ভাঙা হচ্ছিল। কিন্তু, তা ঠিক নয়। আরজি করে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পূর্ত দফতরের। আমি সেই দফতরের মন্ত্রী হিসেবে বলছি, একটি পরিত্যক্ত ঘর সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছিল। এবং ওই ঘটনার অনেক আগে থেকেই সেই ঘর ভাঙা হচ্ছিল। পুলিশের নির্দেশে তা বন্ধ করা হয়েছে।'
এদিকে গত ১৪ অগস্ট রাতে আরজি কর হাসপাতালে হামলা চালিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। ভাঙা হয়েছিল প্রতিবাদী চিকিৎসকদের মঞ্চ। নষ্ট করা হয় কয়েক লাখ টাকার ওষুধ। ১৪টি বিভাগে ভাঙচুর করা হয়। পুলিশের ওপর হামলা হয়। উলটে দেওয়া হয় পুলিশের কিয়স্ক ও গাড়ি। সেই ঘটনাও ধর্ষণ ও খুনের প্রমাণ লোপটের জন্যেই হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই ঘটনায় একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে যেখানে হামলাকারীদের বলতে শোনা গিয়েছে, 'চল, সেমিনার হলে চল।' সেই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আছেন যারা তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত বলে দাবি করছে তাদেরই পরিবার বা প্রতিবেশী। এই আবহে আরজি কর কাণ্ডে শাসকদলের অস্বস্তি ক্রমেই বেড়ে চলেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই হামলার ঘটনার দায় বাম-বিজেপির ঘাড়ে চাপাতে চেয়েছেন। তবে ঘটনার পর প্রথম ৪৮ ঘণ্টায় তাঁরই পুলিশ যাদের ধরেছে, তাদের সঙ্গে বাম-রামের সম্পর্ক আছে বলে জানা যায়নি। তবে পুলিশের তরফ থেকে মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় সহ ৭ বাম নেতাকে তলব করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সেমিনার হলের পাশের দেওয়াল ভাঙার ঘটনায় নিজেদের দায় এড়াতে চাইছে শাসক গোষ্ঠী।