এই সময়: ‘আর কত সময় চাই, জবাব দাও সিবিআই!’ আরজি কর হাসপাতালের এক তরুণী-চিকিৎসকের মর্মান্তিক পরিণতি নিয়ে এ বার আন্দোলনকারী ডাক্তারদের স্লোগানের মুখে পড়তে হলো কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই-কেও। রবিবার বৃষ্টিস্নাত কলকাতার বুকে মিছিল করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। কলেজ স্কোয়ার থেকে এই মিছিলের অভিমুখ ছিল শ্যামবাজার। বৃষ্টি উপেক্ষা করে, জল থইথই শহরের রাস্তায় পায়ে পা মিলিয়ে সিবিআইয়ের কাছে জবাব চাইলেন জুনিয়র ডাক্তাররা।গত মঙ্গলবার সিবিআইয়ের হাতে আরজি কর হাসপাতালের ঘটনার তদন্তভার তুলে দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। পাঁচদিন কেটে গিয়েছে। জুনিয়র ডাক্তারদের অনেকেই সিবিআই তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে অখুশি। টলিপাড়ার কলা-কুশলীদের মিছিল থেকে পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ও বলেন, ‘এই ঘটনায় রাজ্য শুধু নয়, রাষ্ট্রকেও ধরতে হবে। কারণ এতে সিবিআই-ও জড়িত। কলকাতা পুলিশ তাও এক দিনের মধ্যে গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু এতদিন হয়ে গেল সিবিআই কোনও খবর দিতে পারছে না। এটা খুবই আশ্চর্য!’
অসংখ্য ছোট-বড় মিছিলের সাক্ষী থাকল রবিবারের কলকাতা। খেলার মাঠ থেকে রাজপথ দাপিয়ে বেড়ানো এই আন্দোলনে যাতে কোনও রাজনৈতিক রঙ না-লাগে তার জন্য সতর্ক করে দিয়েছেন মৃতা চিকিৎসকের মা-বাবা। নির্যাতিতার বাবার বক্তব্য, ‘মুখ্যমন্ত্রী এত কথা বলছেন। তিনি নিজে রাস্তায় নামছেন, আন্দোলন করছেন, বলছেন নির্যাতিতার বিচার চাই। আবার এ দিকে তিনি আন্দোলন যাতে না হয় সেটা বন্ধ করারও চেষ্টা করছেন।’
বাবার প্রশ্ন, ‘এই দ্বিচারিতা কেন করছেন উনি? তা হলে কি তিনি সাধারণ জনগণকে ভয় পাচ্ছেন?’ একই সঙ্গে খানিকটা কটাক্ষের সুরেই বলেন, ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী নেওয়ার আগে নিশ্চিত করে নিন আপনার ঘরের লক্ষ্মী নিরাপদ আছে কি না!’ আজ সোমবার রাখী পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করেও উঠতে চলেছে নানা প্রতিবাদী স্বর। গৃহীত হয়েছে প্রতিবাদী কর্মসূচিও।
বিকেল চারটেয় ‘এ বার রাস্তার দখল নাও মেয়েরা’ বলে একটি মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার এবং যাদবপুর থেকে। এই মিছিলে রাখী বন্ধনের কর্মসূচিও থাকছে। জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস সকাল ১১টা থেকে রাজ্যের নানা প্রান্তে মানববন্ধন এবং রাখী বন্ধনের কর্মসূচি করবে। রাখী বন্ধনের পরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে সিনিয়র ডাক্তারদের অনেকে জমায়েত করবেন।
ভুয়ো খবর ছড়ানোর অভিযোগে চিকিৎসক কুণাল সরকার ও সুবর্ণ গোস্বামীকে লালবাজার তলব করেছে। সেই তলবে দুই সহকর্মীর সঙ্গী হবে ডাক্তারদের মিছিল। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী সংসদের ডাকেও রাখী বন্ধন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। প্রাক্তনীদের পাশাপাশি থাকবেন বর্তমান পড়ুয়া থেকে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরাও।
ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিসিয়ান্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার ডাকে সকাল ১১টা থেকে টলি পাড়ার বিভিন্ন স্টুডিয়োতে কর্মক্ষেত্রে নারীদের নিরাপত্তা ও আরজি কর হাসপাতালের ঘটনার বিচার চেয়ে জমায়েত হবে। গৌরীবেড়িয়া সর্বজনীন পুজো কমিটির উদ্যোগে রাখী বন্ধনে পুরুষরা মহিলাদের রাখী পরাবেন।
রবিবারই টলি পাড়ার অভিনেতা-অভিনেত্রী, পরিচালক থেকে টেকনিশিয়ানরা রাস্তায় নেমে মিছিল করেছেন। মিছিলে মুখ চেনা মুখের পাশাপাশি ক্যামেরার পিছনে থাকা বহু মানুষও ‘জাস্টিস’-এর দাবিতে স্লোগান তুলেছেন। খান্না মোড় থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত এই মিছিল হয়। ছিলেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, অঙ্কুশ হাজরা, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, ঐন্দ্রিলা সেন, সৌরসেনী মৈত্র, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, অনির্বাণ চক্রবর্তী, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, অরিন্দম শীল, রাহুল অরুণোদয় বন্দোপাধ্যায়, রাজ চক্রবর্তী, শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়-সহ একগুচ্ছ তারকা।
সৃজিত বলেন, ‘এই ইস্যুতে সবাই ইউনাইটেড। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান যেমন ইউনাইটেড তেমনই আমরাও তাই। এখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক মতামতের মানুষকে দেখা যাচ্ছে।’ এ দিন শহরের বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রী থেকে প্রাক্তনীরাও মিছিল করেন। সাউথ পয়েন্ট স্কুলের প্রাক্তনী ও ছাত্রছাত্রীদের মিছিল হয় সিটিজ়েনস পার্ক থেকে বালিগঞ্জ ফাঁড়ি পর্যন্ত।
দমদম গার্লস হাইস্কুলের তরফেও আজ সোমবার এই ঘটনার বিচার চেয়ে ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রধান শিক্ষিকা জমায়েত করার কথা বলেছেন। দুপুর সাড়ে সাড়ে ১২টায় ওই মিছিল শুরু হবে। দমদমেরই কিশোর ভারতী স্কুলের প্রাক্তনীরা মতিঝিল থেকে দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ একটি মিছিলের ডাক দিয়েছেন। আশুতোষ কলেজের প্রাক্তনীরা অ্যাকাডেমির সামনে থেকে রবিবার রাতে একটি মিছিল করেন।