• ধামাচাপার চেষ্টা-সংবেদনশীলতার অভাব এবং... মমতা ও পুলিশের ১০ দিনে ১০ 'ভুল'
    আজ তক | ১৯ আগস্ট ২০২৪
  • আরজি কর কাণ্ডে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। গোটা দেশে প্রতিবাদের হাওয়া ছড়িয়ে পড়েছে। ৯ অগাস্টের সেই নৃশংতার পর থেকে কেটে গিয়েছে ১০ দিন। এই ১০ দিনে পশ্চিমবঙ্গে একাধিক নজিরবিহীন আন্দোলনের সাক্ষী হয়েছে দেশ। তার মধ্যে অন্যতম 'মেয়েরা রাত দখল করো'। ভাঙচুর হয়েছে আরজি কর হাসপাতালে, ডাক্তাররা দেশব্যাপী কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন। আরজি কর সহ বাংলার সরকারি হাসপাতালগুলিতে পরিষেবা শিকেয় উঠেছে। আন্দোলন বিরাট আকারে সর্বভারতীয় রূপ নিয়েছে। আন্দোলনকারীদের একাংশের আবার দাবি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগও। স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন অচিরেই রাজনৈতিক আন্দোলনের রূপ নিয়ে নিয়েছে। ঢুকে পড়েছে রাজনীতির কারবারিরা। কিন্তু প্রশ্ন হল, আরজি কর হাসপাতালে তরুণী ডাক্তারকে খুন ও ধর্ষণের নৃশংসতা ঘিরে যে চরম বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তার পিছনে ১০টি ভুল খুঁজল bangla.aajtak.in। এই ১০ ভুল করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ও কলকাতা পুলিশ।

    ১. ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা: প্রথম ভুল হল ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা। যে রাতে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে সেমিনার হলে ওই তরুণী ডাক্তারের অর্ধনগ্ন দেহ পাওয়া গেল, সেই রাতেই এই নৃশংস ঘটনার ধামাচাপা দেওয়ার মরিয়া চেষ্টা ধরা পড়েছে। আরজি কর হাসপাতালের চেস্ট মেডিসিন বিভাগের প্রধান অরুণাভ দত্ত চৌধুরী ত়ড়িঘড়ি তরুণী ডাক্তারের পরিবারকে ফোন করে বলেন, তরুণী আত্মহত্যা করেছেন। প্রশ্ন হল, এত তাড়াহুড়ো কেন? কী ধামা চাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছিল? আত্মহত্যা বলাটা ভুল ছিল, ইতিমধ্যে প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন ডাক্তার অরুণাভ দত্ত চৌধুরী।

    ২. সংবেদনশীলতার অভাব: নৃশংস ঘটনার পরে রাজ্য প্রশাসন, বিশেষ করে কলকাতা পুলিশের সংবেদনশীলতার অভাবও ভীষণ ভাবে লক্ষ্যণীয়। প্রথমত, আগেই সিদ্ধান্তে পৌঁছে, আত্মহত্যা বলে দেওয়া। তারপর পরিবার যখন মেয়ের দেহ দেখতে হাসপাতালে, তখন তাঁদের ৩ ঘণ্টার পর অপেক্ষা করানো। বারবার বলা সত্ত্বেও মা-বাবা সহ পরিবারকে বাইরে বসিয়ে রাখা হয় ওই রাতে। মেয়ের দেহ দেখতে মা-বাবাকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ৩ ঘণ্টার উপর।

    ৩. তদন্তে গাফিলতি: এই ঘটনার তদন্তে প্রথম থেকেই কলকাতা পুলিশের গাফিলতি চোখে পড়েছে। আইনজীবী জানাচ্ছেন, কলকাতা পুলিশ ঠিক মতো তদন্তই শুরু করেনি। তদন্ত যখন চলছে, তখনই তড়িঘড়ি দেহ দাহ করে দেওয়া হল। ওই তরুণী ডাক্তারের পরিবার প্রথমে কলকাতা পুলিশ ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরেই ভরসা করেছিলেন। কিন্তু এখন তরুণী ডাক্তারের বাবা দাবি করছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বিচারিতা করছেন। 

    ৪. অধ্যক্ষের পুনর্বহাল: আরজি কর কাণ্ডে একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষ। তাঁকে ইতিমধ্যেই মেরাথন জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে সিবিআই। সন্দীপের বিরুদ্ধে ঘটনার পর থেকেই একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন আরজি কর-এর জুনিয়ার ডাক্তাররা। এহেন অবস্থায় ঘটনার পরেই যখন সন্দীপ ঘোষ ইস্তফা দিলেন, তার ঠিক ৩ দিনের মধ্যেই ফের সেই সন্দীপকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ করে দিল রাজ্য সরকার। হাইকোর্ট তীব্র ভর্ত্‍‍‌সনা করেছে। এবং সন্দীপ ঘোষকে ছুটিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

    ৫. প্রতিবাদের নামে হাসপাতাল ভাঙচুর রুখতে ব্যর্থ: ১৪ অগাস্ট রাতে আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন কলকাতা সহ গোটা রাজ্যের মহিলারা। মেয়েরা রাত দখল করো প্রতিবাদের রাতে শান্তিপূর্ণ জমায়েত থেকে আরজি কর হাসপাতালে ভাঙচুর শুরু হয়। প্রায় ৪০ মিনিট ধরে ভাঙচুর চালানো হয় হাসপাতালে। অভিযোগ, ওই ভাঙচুর আটকানোর বদলে নিরাপত্তায় থাকা পুলিশও লুকিয়ে পড়ে আত্মরক্ষার্থে। ঘটনায় তীব্র বিক্ষোভের মুখে পড়ে কলকাতা পুলিশ। হাইকোর্টও পুলিশের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেছে। 

    ৬. মমতার পদযাত্রা কার বিরুদ্ধে: আরজি কর কাণ্ডে দোষীর ফাঁসি চেয়ে রাস্তায় নেমেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মৌলালি থেকে ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত মিছিল করেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশের বিরুদ্ধেই তদন্তে গাফিলতি ও ধামাচাপার অভিযোগ রয়েছে। তাহলে ঠিক কিসের বিরুদ্ধে মিছিল করলেন মমতা। বিরোধীদের কটাক্ষ, পুলিশমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে পথে নেমেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বস্তুত, পুলিশ দফতর মমতার হাতেই। স্বরাষ্ট্র দফতরও।

    ৭. ডাক্তারদের রোষ সামাল দিতে ব্যর্থ: আরজি কর কাণ্ডে প্রথম থেকেই ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে ডাক্তারদের। ওই রকম বিক্ষোভ দেখার পরেও ডাক্তারদের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার অভিযোগ করে, ডাক্তাররা কর্মবিরতি করে মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে। তাঁদের দীর্ঘ দিনের ক্ষোভের কথা না শুনে, সংবেদনশীলতা না দেখিয়ে অবিলম্বে ডিউটিতে যোগ দেওয়ার প্রচ্ছন্ন চাপ দিতে শুরু করে রাজ্য।

    ৮. সংবাদমাধ্যমকে দোষারোপ: আরজি কর হাসপাতালে ১৪ অগাস্ট রাতের ভাঙচুরের পর কলকাতা পুলিশের কমিশনার সোজা দোষ চাপিয়ে দেন সংবাদমাধ্যমের ঘাড়ে।  পুলিশ কমিশনার বলেন, 'আমি সত্যিই ক্ষুব্ধ । ডিসি নর্থ প্রতিবাদকারীদের রক্ষা করতে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছেন। এখানে যা হয়েছে তা সংবাদ মাধ্যমের দ্বারা ভুল খবর প্রচারের জন্যও কিছুটা হয়েছে। কলকাতা পুলিশ এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। আমরা কী করিনি ? সব করা হয়েছে ৷ যা যা পদক্ষেপ নেওয়ার পুলিশ সব করেছে ৷ তারপরও মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হয়েছে একশ্রেণির মানুষের দ্বারা ৷ এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই ৷ জোর করে রাজনীতিকরণ করানোর চেষ্টা হচ্ছে ৷'

    ৯. ডার্বি বাতিল করা: আরজি কর কাণ্ডে স্লোগান ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কায় রবিবার কলকাতা ডার্বি বাতিল করা হয়।  ডার্বি বাতিলের পাশাপাশি কলকাতা ডুরান্ড কাপের বাকি ম্য়াচগুলো জামশেদপুরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আরজি কর কাণ্ডে  ডুরান্ড কাপের ডার্বি বাতিল হওয়ার পর রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগানের সমর্থকেরা।

    ১০. তৃণমূল নেতাদের হুমকি: আন্দোলনে যখন ফুঁসছে সমাজের একটা বড় অংশ, তখন কয়েকজন তৃণমূল নেতা রীতিমতো হুমকি দিচ্ছেন আন্দোলনকারীদের। যেমন রাজ্যের মন্ত্রী উদয়ন গুহ বললেন, 'যাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে গালাগালি করছেন, যাঁরা মমতার দিকে আঙুল তুলে পদত্যাগ করছেন, সেই আঙুল গুলোকে চিহ্নিত করে ভেঙে দেওয়ার বন্দোবস্ত করতে হবে। না হলে এরা বাংলাকে বাংলাদেশ করার চেষ্টা করবে। কিন্তু ওরা জানে না, হাসিনা যে ভুল করেছে মমতা সেই ভুল করবে না।' আবার বাঁকুড়ার তৃণমূল সাংসদ বললেন, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি কারও দয়ায় ক্ষমতায় এসেছেন নাকি ? জনগণের আশীর্বাদ, ভালোবাসা নিয়ে তিনি তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন ৷ তাঁর গায়ে কালি লাগানোর চেষ্টা করবেন না ৷ হাতটা মুচড়ে দেবে তৃণমূল কর্মীরা ৷ মিথ্যে অপপ্রচার ছড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে যারাই অভিযোগ করবে, তাদের বিরুদ্ধে আপনাদের কঠোর হতে হবে ৷ আমরা কোনোদিন বলিনি, এবার বলতে বাধ্য হচ্ছি, বাংলার নেত্রী, বাংলার সরকার বা তৃণমূলের নামে যারা মিথ্যে অপপ্রচার করে, তাদের আর রেহাই মিলবে না ৷ আর রবীন্দ্র সংগীত বাজবে না ৷ একথা আপনাদের বুঝিয়ে দিতে হবে ৷'
  • Link to this news (আজ তক)