আরজি করে তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনায় গোটা রাজ্য তোলপাড়। সুবিচারের দাবিতে প্রতিবাদ করছেন চিকিৎসকরা। অনেকেই কর্মবিরতির পথে হাঁটছেন। ব্যাহত পরিষেবা। এই পরিস্থিতিতে আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের 'হুঁশিয়ারি' দেওয়ার অভিযোগ উঠল বাঁকুড়ার সাংসদ অরূপ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে। চিকিৎসা পরিষেবা পেতে সাধারণ মানুষের সমস্যা হলে জনরোষ তৈরি হবে, এই মন্তব্য করেন তিনি। অরূপ বলেন, 'ডাক্তাররা যদি অবরোধের নাম করে বাড়ি চলে যান, পুরুষবন্ধু নিয়ে ঘুরতে যান, তাহলে কি মানুষ ছেড়ে দেবে?' তাঁর এই মন্তব্য নিয়ে সুর চড়িয়েছেন বিরোধীরা। তৈরি হয়েছে বিতর্ক। যদিও বাঁকুড়ায় আন্দোলনরত চিকিৎসকরা কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি। তাঁদের স্পষ্ট দাবি, আরজি করের ঘটনায় তাঁরা সুবিচার চান।ঠিক কী বলেছেন অরূপ চক্রবর্তী?
তিনি বলেন, ‘যারা মিথ্যা-অপ্রচার করে বাংলার নেত্রীর নামে, সরকারের নামে, তৃণমূল নেত্রীর নামে কুৎসা রটাবে তাদের আর রেহাই নয়। আর রবীন্দ্র সঙ্গীত বাজবে না। যারা মানুষকে লেলিয়ে দিয়ে অপ্রচার করবে তাদের রুখতে হবে।’ তাঁর সংযোজন, ‘আমার কাছে খবর আছে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তারবাবুরা ধর্নার নাম করে বেড়াতে যাচ্ছেন। ডাক্তারি না করে বাড়ি চলে যাচ্ছেন। দয়া করে এসব করবেন না। রোগীদের কাছে যান। মানুষ এখনও আপনাদের ভগবান ভাবেন। ডাক্তাররা চিকিৎসা না করে বয়ফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরতে গেলে জনরোষ তৈরি হবে।’
নিজের বক্তব্যে পুলিশকেও একহাত নেন তিনি। সাংসদ বলেন, ‘পুলিশ নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে না বলে জানতে পারছি। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানাব। আমি সতর্ক করতে চাই যে আইনমাফিক কাজ করুন।'
অরূপ চক্রবর্তীর এই মন্তব্যের পর তুঙ্গে বিতর্ক। সিপিআই(এম) নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, 'কে বন্ধুকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন, তা তৃণমূল ঠিক করবে? এটা মধ্যযুগীয় বর্বরতা। সকলের নিরাপত্তার দিকে নজর দেওয়া উচিত।' বিজেপি নেতা রাহুল সিনহাও তৃণমূল সাংসদের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সুর চড়িয়েছেন। চিকিৎসকদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
এদিকে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের আন্দোলনরত চিকিৎসকরা অরূপ চক্রবর্তীর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে কোনও জবাব দেননি। তাঁরা জানিয়েছেন, কোনও রাজনৈতিক কারণে কর্মবিরতি করছেন না। বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসকরা সমস্ত পরিষেবা দিয়ে চলেছেন।
যদিও অরূপ চক্রবর্তীর মন্তব্য প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা ঋজু দত্ত বলেন, 'আমার মনে হয় যখন এই ধরনের নৃশংস ঘটনা ঘটেছে সেই সময় এই ধরনের মন্তব্য করা উচিত। চিকিৎসকদের কাছে হাতজোড় করে অনুরোধ করব আপনারা আন্দোলন করুন। কিন্তু, কর্মবিরতি তুলে নিন। কারণ, প্রচুর মানুষ অসুবিধায় পড়ছেন। তাঁরা পরিষেবা পাচ্ছেন না।'