• যুধিষ্ঠির-ধৃতরাষ্ট্রর পথে নিজেকে শেষ করতে গঙ্গায় ভাসলেন স্প্যানিশ বৃদ্ধ
    এই সময় | ২০ আগস্ট ২০২৪
  • সূর্যকান্ত কুমার, কালনা

    ব্রহ্ম মুহূর্তই সুইসাইডের জন্য আদর্শ। এমনই মনে করে গঙ্গায় নিজেকে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন বছর ৭০-এর স্প্যানিশ বৃদ্ধ। তার আগে আত্মহত্যার সময় তরান্বিত করতে নিজের শরীর ধারালো অস্ত্রে ফালাফালা করেছিলেন। কিন্তু, গঙ্গায় ভাসার সময়ে সঙ্গে নিয়ে নেন একটি টিউব। সেই টিউবেই বৃদ্ধকে ভাসতে দেখে নাদনঘাটের জালুইডাঙায় তাঁকে উদ্ধার করেন সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা।কিন্তু, বৃদ্ধের ‘সুইসাইড অ্যাটেমপ্টের’ ধরন বুঝে উঠতে পারছেন না কেউ। বিদেশি বৃদ্ধ যদি আত্মহত্যাই করতে চান তা হলে টিউব নিয়ে গঙ্গায় ভেসে পড়বেন কেন? কারও কারও মন্তব্য, বাংলার বহুশ্রুত জোকসের কথা মনে পড়িয়ে দিয়েছেন বৃদ্ধ। আত্মহত্যা করতে গিয়ে ভোররাতে টর্চ হাতে বেরোনো ব্যক্তিকে কারণ জানতে গেলে যিনি উত্তরে বলেছিলেন, যদি সাপে কামড়ে দেয়? তাই সজাগ থাকার জন্য টর্চ সঙ্গে নিয়ে বেরিয়েছিলেন তিনি।

    জলে ভাসতে থাকা স্প্যানিশ আলভারোকে উদ্ধারের পরে কালনা মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসে নাদনঘাট থানার পুলিশ। কেন এমন ঘটনা ঘটালেন তিনি? হাসপাতালের বেডে শুয়ে বৃদ্ধের মুখে তখন মহাভারতের কাহিনি। বলেন, ‘পৃথিবী নিয়ে আমি আপসেট। যুধিষ্ঠির, ধৃতরাষ্ট্রর পথে নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলাম। লোভ, ঈর্ষায় ভরে গিয়েছে পৃথিবী। মানুষের মধ্যে ঐশ্বরিক গুণও কমছে। তাই অনুসরণ করেছিলাম যুধিষ্ঠির, ধৃতরাষ্ট্রর পথ।’

    মহাভারত পড়া রয়েছে কিনা জানতেও চান পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে চাওয়া বৃদ্ধ। বলেন, ‘তাঁরা হিমালয়ে গিয়ে দেহত্যাগ করেছিলেন। পৃথিবীতে তাঁদের যাত্রা শেষ করেছিলেন। আমিও পৃথিবীতে আমার মিশন শেষ করতে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। দেখেছিলাম, ভোর চারটের সময় ব্রহ্ম মুহূর্ত। আমিও ওই সময়ে গঙ্গায় দেহ বিলীন করে দিতে যাই।’ তবে তাঁর হিসেবে কিছু ভুলচুক হয়ে যায়। বলছেন, ‘সেই ভুলের কারণে আমার সুইসাইড অ্যাটেমপ্ট সম্পূর্ণ হলো না। জানি না কী ভাবে বেঁচে গেলাম।’

    হাসপাতালের বেডে শুয়ে শরীরের কাটা অংশ দেখিয়ে জানান, খুব যন্ত্রণা হচ্ছে। তিনি পেইনকিলার দেওয়ার অনুরোধ করেন নার্সদের। মুখে একটু জল দেওয়ার কাতর আর্জিও জানান। শরীরে এত কাটাকাটি কেন? শুধু শুধু এত রক্ত বেরোল। কারণ জানাতে গিয়ে বিদেশি বলেন, ‘তাড়াতাড়ি মরতে চেয়েছিলাম। এই পাপের পৃথিবীতে নিজেকে বেশিক্ষণ রাখতে চাইনি।’

    সোমবার সকালে নাদনঘাটের জালুইডাঙার কাছে ভাগীরথীর পাড়ে একটি টিউবে একজনকে ভেসে যেতে দেখেন সেখানে নজরদারিতে থাকা সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা। পায়ে মোজা, পরনে টি-শার্ট থাকা বৃদ্ধকে দেখেই তাঁরা বুঝতে পারেন ইনি বিদেশি না হয়ে যান না। খবর পাঠানো হয় নাদনঘাট থানায়। পুলিশ জানতে পারে, স্পেনের নাগরিক ওই বৃদ্ধ থাকেন নদিয়ার একটি আশ্রমে।

    প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বৃদ্ধ জানিয়েছেন, স্পেনে তিনি পশু চিকিৎসক ছিলেন। এ দেশেও গোরুর চিকিৎসা করেছেন। স্ত্রী ছাড়া তিন ছেলে রয়েছে তাঁর। কালনার এসডিপিও রাকেশ চৌধুরী বলেন, ‘উনি আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন বলে স্টেটমেন্ট দিয়েছেন। কিন্তু কেন, তার ডিটেলস জানা যায়নি। আপাতত ওঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শরীরে মাল্টিপল ইনজুরি রয়েছে। সুস্থ হলে তার পর দেখা যাবে।’
  • Link to this news (এই সময়)