এই সময়, আলিপুরদুয়ার: না-মানুষদের নিয়ে দুই বিপরীত ছবি সামনে এলো রাজ্যের দুই প্রান্তে। সম্প্রতি ঝাড়গ্রামে জ্বলন্ত শলাকায় বিদ্ধ হয়ে এক সন্তানসম্ভবা হাতির মৃত্যুদৃশ্যে শিউরে উঠেছেন সবাই। আবার জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের নর্থ রেঞ্জে জলাভূমিতে আটকে পড়া অসুস্থ গন্ডার শাবককে বাঁচাতে এক অসম লড়াই করলেন জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের বনকর্মীরা।তাকে রীতিমতো ঘুমপাড়ানি গুলিতে বেহুঁশ করে বাঁশের মাচায় চাপিয়ে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে আসেন একদল বনকর্মী। যা এক কথায় অসাধ্য বলে মনে করছেন বনকর্তারা। জঙ্গলের ঠিক যে জায়গায় বছর পাঁচেকের গন্ডার শাবকটি আটকে পড়েছিল, সেখানে আর্থ মুভার ঢোকানো অসম্ভব।
ফলে রীতিমতো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাকে উদ্ধার করতে বানানো হয় এক পেল্লায় বাঁশের মাচা। কমপক্ষে ত্রিশ জন বনকর্মী তাকে কাঁধে চাপিয়ে নিরাপদ জায়গায় আনার পর, শাবকটিকে খাঁচাবন্দি করা হয়। তারপর আর্থ মুভারের সাহায্যে নিয়ে আসা হয় চিকিৎসার উপযুক্ত আরণ্যক পরিবেশে। যদিও চিকিৎসক ও বনকর্তারা জানান যে, পিছনের দু’টি পা অসাড় হয়ে যাওয়ার ফলে তার বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম।
বন্যপ্রাণী চিকিৎসক উৎপল শর্মা বলেন, ‘আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি। কিন্তু প্রাকৃতিক নিয়মে গন্ডার অথবা হাতির মতো বড় দেহের প্রাণী একবার বসে অথবা শুয়ে পড়লে তাদের বাঁচার সম্ভাবনা কমে আসে।’ যদিও শাবকটির দেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন মেলেনি।
দিন পনেরো আগে জলদাপাড়া নর্থ রেঞ্জের জঙ্গলে ঠিক একই উপসর্গের একটি গন্ডার শাবকের হদিশ মিলেছিল। শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো যায়নি। মৃতদেহের ময়নাতদন্তের সময় ওই শাবকটির পেট থেকে প্রচুর পরিমাণে কৃমি মিলেছিল। সদ্য উদ্ধার হওয়া শাবকটিও ওই একই রোগে আক্রান্ত কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তবে সে দিন সেই মৃত শাবকটির পাশে তার মাকে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেলেও, এই শাবকটি মা হারা বলে জানিয়েছে বন দপ্তর। জলদাপাড়া বনবিভাগের ডিএফও প্রবীণ কাসোয়ান বলেন, ‘অসুস্থ গন্ডার শাবকটিকে বাঁচাতে বনকর্মীরা যে নজির তৈরি করলেন, তা সত্যিই বিরল। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি। জানি না, শেষ পর্যন্ত কী হবে।’