নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: কুলটি থানার সবনপুরে অবৈধ কয়লা নিয়ে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর দরবারে জমা পড়ল অভিযোগ। ‘সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী’ নম্বরে ফোন করে এলাকার এক বাসিন্দা বিস্তারিতভাবে অভিযোগ করেন। তৎপর হয় নবান্ন। জেলা প্রশাসনকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে শীর্ষস্তর থেকে। অভিযোগকারীকে বিএলআরও অফিসে ডেকে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেছেন প্রশাসনিক কর্তারা। মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরের তৎপরতায় আশায় বুক বাঁধছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণভাবে দিনে দুপুরে জাতীয় সড়কের পাশে বেপরোয়াভাবে কয়লা লুট হলেও বিরোধীরা কেন চুপ? সেই প্রশ্ন জোরালভাবে উঠছে কুলটিতে। কুলটি বিধানসভা এলাকার বিধায়ক বিজেপির চিকিৎসক নেতা অজয় পোদ্দার। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে তাঁকে সরব হতে দেখা যায়নি। ভয়াবহ এই চুরির বিষয়টি তাঁর নজরে নেই বলেই জানিয়েছেন বিধায়ক। তিনি বলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারে অবৈধ কয়লা লুট নিয়ম হয়ে গিয়েছে। আমি অভিযোগ পেলেই বিসিসিএলকে জানিয়ে চোরাই কয়লাখাদ গুলি বন্ধ করিয়েছি। সবনপুরে কয়লা চুরির বিষয়টি আমার নজরে ছিল না। মঙ্গলবার থেকে এ নিয়ে সরব হব। জসিডি-আসানসোল মেমু প্যাসেঞ্জার কুলটির মানুষ ডিএম লোকাল হিসেবেই চেনেন। সকাল ছ’টায় সালামপুর স্টেশনে ডি এম লোকাল থামলে কয়লা মাফিয়াদের মুখের হাসি চওড়া হয়। ঝাড়খন্ড থেকে কয়লা কাটতে এই লোকাল ধরেই খনি অঞ্চলে হাজির হন দিনমজুররা। দিনে পারিশ্রামিক ৯০০ টাকা। সারাদিন ধরে চলে কয়লা কাটা। বর্ষাকালে বিরাম নেই। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কয়লা কাটার কাজ করেন তাঁরা। এভাবেই কুলটি থানার আসানসোল পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সবনপুরে চলছে অবৈধ কয়লা কারবার। ডে-শিফটের শ্রমিকরা সন্ধ্যা হলে ফিরে যান বাড়িতে। সন্ধ্যার সময়ে আরও একটি ডি এম লোকাল জসিডির দিক থেকে আসানসোল অভিমুখে এসে দাঁড়ায় সালানপুরে। তাতে করে এসে নাইট শিফটের মজুররা খাদানে নেমে পড়েন। ফলে, দিনরাত জাতীয় সড়কের পাশে লোকের জমিতে কয়লা কেটে বিক্রি করলেও নীরব প্রশাসন। অগত্যা এলাকার বাসিন্দা সব্যসাচী বন্দ্যোপাধ্যায় ‘সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী’ নম্বরে ফোন করে বিস্তারিত অভিযোগ জানান। ফোনের অপরপ্রান্তে থাকা মহিলা তার কাছে সমস্ত তথ্য খুঁটিয়ে জানেন। অভিযোগ লিপিবদ্ধ হওয়ার কথা অভিযোগকারীকে জানানো হয়। তারপরই গত সপ্তাহে অফিস থেকে অভিযোগকারীর কাছে ফোন আসে। তিনি ‘সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী’ নম্বরে ফোন করে অভিযোগ করেছেন কি না জানতে চাওয়া হয়। সব্যসাচীবাবু বিষয়টি স্বীকার করার পরেই তাঁকে বিএলআরও অফিসে এসে বিস্তারিত তথ্য জানাতে বলা হয়। সব্যসাচীবাবু বলেন, আমি সমস্ত তথ্য প্রশাসনের নজরে এনেছি।
তবে, কয়লার এই অবৈধ কারবার নিয়ে প্রশাসনের নিচু তলায় অদ্ভুত নীরবতা। এমন কি, বিষয়টি নিয়ে বারবার সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হলেও রমরমিয়ে চলছে কয়লা কারবার। উচ্চবাচ্য করে না বিরোধীরাও। অথচ এই কুলটিকে বিরোধীদের ঘাঁটি বলা হয়। ২০১৪, ২০১৯ ও ২০২৪ তিনটি লোকসভা নির্বাচনে কুলটি বিধানসভা এলাকা থেকে বিজেপি লিড পেয়েছে। ২০২১ সালে বিজেপি প্রার্থী অজয় পোদ্দার বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন। তারপরও কি করে চলছে এই কারবার? প্রশ্ন স্থানীয় বাসিন্দাদের।
তাঁদের একাংশের অবশ্য দাবি, এই কারবার নিয়ন্ত্রণ করছে দুই ‘কার্তিক’। এক মাফিয়া কার্তিক। সে কয়লার চোরা কারবারের ব্যবস্থা করে। আরেক কার্তিক প্রশাসনিকভাবে সবকিছু ম্যানেজ করে। তাদের মাথার উপর রয়েছে যুবনেতা ‘বিডি’। তিনি ঠিক করে দেন, কার কাছে উপঢৌকনের কোন প্যাকেট পৌঁছবে।-নিজস্ব চিত্র