বেআইনি বালির লরির ধাক্কায় ছিঁড়ল ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের তার
বর্তমান | ২০ আগস্ট ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: বালির লরির ধাক্কায় ভেঙে পড়ল একের পর এক বিদ্যুতের খুঁটি। ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের তার ছিটকে পড়ল রাস্তায়। সোমবার দুপুরে জামুড়িয়া থানার চুরুলিয়ার তালডাংরায় ঘটে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, তালডাংরা গ্রামে একটি পারিবারিক অনুষ্ঠান চলছিল। ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের তারটি তার অদূরে ছিটকে পড়ে। অল্পের জন্য প্রাণ রক্ষা হয়েছে অনেকের। এই বিদ্যুৎ সংযোগ থেকেই চুরুলিয়ার তালডাংরা ঘাটের জল প্রকল্পের বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় জল পরিষেবা স্বাভাবিক থাকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভরা বর্ষায় সম্পূর্ণ অবৈধভাবে নদী থেকে বালি তুলে পাচার করা হচ্ছে। ডালা তুলেই অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ডাম্পারটি নদী থেকে বালি তুলতে যাচ্ছিল। তখনই ঘটে যায় বিভ্রাট।
দ্রুত ঘটনাস্থলে হাজির হয় চুরুলিয়া ফাঁড়ির পুলিস। তড়িঘড়ি লরিটি বাজেয়াপ্ত করে নিজেদের হেফাজতে নেয় তারা। প্রশ্ন উঠছে পুলিসের নাকের ডগায় এই কারবার কীভাবে চলছে? ডব্লিউবিএসইডিসিএলের রিজিওনাল ম্যানেজার বিশ্বজিৎ বাগদি বলেন, বালির ডাম্পারটি তিনটি বিদ্যুতের খুঁটিকে উপড়ে ফেলেছে। গোটা এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। চুরুলিয়ার পঞ্চায়েত প্রধান প্রদীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, এ ধরনের ঘটনা মাঝেমধ্যেই হচ্ছে বাসিন্দাদের ভোগান্তি চরমে। জামুরিয়ার বিডিও অরুণালোক ঘোষ বলেন, পঞ্চায়েত বা পুলিসের পক্ষ থেকে এ বিষয়টি তাঁকে জানানো হয়নি। নদী থেকে এখন কোনওভাবেই বালি তোলা যায় না। বিষয়টি খতিয়ে দেখব। বিজেপি নেতা গোপী পাত্র বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা সর্বস্তরে অভিযোগ জানিয়েও সুরাহা পাইনি। সবাই সবকিছু জেনেও কোনও পদক্ষেপ করে না।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বর্ষাকালে বালি পাচারের নতুন ফন্দি এসেছে বালির কারবারিরা। নিয়ম অনুযায়ী, বর্ষাকালে কোনওভাবেই নদী থেকে বালি তোলা যায় না। বর্ষাকালের আগেই নদী থেকে বালি তুলে, স্টক পয়েন্টে বালি মজুত করতে হয়। নিয়মমাফিক চালান কেটে সেই বালি পরিবহণ করা যায়। চুরুলিয়ার তালডাংরায় বালির কারবারিরা নদীর অদূরে স্টক পয়েন্ট করেছে। নদী থেকে ১০ চাকার ছোট লরি বা ডাম্পারে করে বালি তুলে স্টক পয়েন্টে ফেলছে। সেখান থেকে ১৬ চাকা ১৮ চাকার দৈত্যাকার লরি, ডাম্পারে করে বালি দূর দূরান্তে যাচ্ছে। চালান অনুযায়ী বালি যাচ্ছে স্টক পয়েন্ট থেকে। কিন্তু প্রতিনিয়ত নদী থেকে বালি চুরি করে সেই স্টক পয়েন্টে বালি মজুত করা হচ্ছে। নদী থেকে স্টক পয়েন্ট খুব অল্প রাস্তা তাই দ্রুত যত ট্রিপ বালি পরিবহণ করতে পারবে পরিবহণ ব্যবসায়ীদের ততই লাভ। সেই অনুযায়ী ঝড়ের গতিতে লরি, ডাম্পারগুলি যাতায়াত করে। সেদিনও তেমনি একটি ডাম্পার স্টক পয়েন্টে বালি খালি করে, ডালা না নামিয়ে নদীতে বালি তুলতে ছুটেছিল। তখনই ঘটে যায় দুর্ঘটনা। পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। বাসিন্দারা রাস্তায় নেমে এর প্রতিবাদ জানান।-নিজস্ব চিত্র