• শান্তিপুরের ঐতিহাসিক সুরধ্বনি নদীতে রাখি ভাসিয়ে বাঁচানোর দাবি পরিবেশকর্মীদের
    বর্তমান | ২০ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: একসময় বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে রাখিকে ‘অস্ত্র’ বানিয়েছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি বার্তা দিয়েছিলেন, রাখি কেবল দিদি আর ভাইয়ের মধ্যে বন্ধন নয়, দুটো আলাদা জাতি একত্রে মিলিয়ে দেওয়ার বাঁধনও তৈরি করতে পারে। এবার সেই রাখিকেই নদীতে ভাসিয়ে শান্তিপুরের ঐতিহাসিক সুরধ্বনি বাঁচানোর ডাক দিলেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। দাবি তুললেন, নদী বাঁচানো এবং সংস্কারের।


    রানাঘাটের স্থানীয় ইতিহাসের সঙ্গে যেমন চূর্ণী নদী সম্পৃক্ত হয়ে গিয়েছে, শান্তিপুরের ক্ষেত্রেও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ সুরধ্বনি নদী। ইতিহাস বলে, প্রায় ৫৫০ বছর আগে এই নদীপথে অদ্বৈত আচার্যের আশ্রমে আসতেন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু। আধ্যাত্মিক পড়াশোনা ও চর্চার অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল এটি। কিন্তু সময়ের ফেরে ক্রমশ হারিয়ে যেতে শুরু করে সুরধ্বনি নদী। আজ প্রবাহ প্রায় নেই বললেই চলে। অধিকাংশ জায়গায় নদীটি খালের রূপ নিয়েছে। বহু দশক আগে থেকেই বিভিন্ন জায়গায় পলি জমে উর্বর চর তৈরি হয়ে যায়। যেগুলি পরবর্তীতে চাষের জমিতে রূপান্তরিত হয়ে ওঠে। এছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় দখল সমস্যা আরও রুগ্ন করেছে নদীটিকে। বছরখানেক আগে সুরধ্বনি সংস্কারের কাজে হাত দেয় রাজ্য সরকার। তার উদ্যোগ নিয়েছিলেন শান্তিপুরের বর্তমান বিধায়ক তথা অদ্বৈত আচার্যের ১৫ তম বংশধর ব্রজকিশোর গোস্বামী। তাঁর কথায়, প্রাচীন নদীটির অদ্বৈত পাঠ মন্দির এলাকা থেকে বেলঘরিয়া-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা পর্যন্ত সংস্কার করেছিল সেচদপ্তর। আমি একাধিকবার দরবার করে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সেই কাজ করিয়েছি। যতটা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব আমরা চেষ্টা করেছি। তবে অনেক জায়গায় দেখা গিয়েছে বহু যুগ আগে থেকেই নদীর চর পড়ে যাওয়া অংশে চাষবাস হচ্ছে। অনেকের ব্যক্তিগত জমি হিসেবে তার রেকর্ড তৈরি হয়ে গিয়েছে। রাজ্য সরকার সচেষ্ট রয়েছে। যতটা সম্ভব হয়েছে, ততটা সংস্কার করা গিয়েছে। 


    যদিও রাখি পূর্ণিমার দিন প্রাচীন ওই নদী বাঁচানোর পুনরায় আর্জি জানিয়েছেন পরিবেশপ্রেমীরা। কারণ দিনের পর দিন নতুন করে বিভিন্ন জায়গা দখল হচ্ছে বলে অভিযোগ। তাই সেই প্রবণতা ঠেকাতে ও দখলদারদের হাত থেকে সুরধ্বনি উদ্ধার করতে এদিন তাঁরা ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ নেন। নদীর জলে ভেসে থাকা কচুরিপানা দিয়ে তৈরি করা হয় রাখি। পরে সেই রাখিই নদীর জলে ভাসিয়ে সুরধ্বনি পুনরুদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন আয়োজকরা। তাঁদের মতে, একসময় এই রাখি কবিগুরুর হাত ধরে সৌভ্রাতৃত্বের বন্ধন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। আজ এই রাখি ভাসিয়েই তাঁদের দাবি রাজ্য সরকারের কাছে তুলে ধরতে চাইলেন।  সুরধ্বনীতে ভাসানো হচ্ছে রাখি। 
  • Link to this news (বর্তমান)