• পাটপচা জল মিশছে গঙ্গায় সরবরাহ বন্ধ কৃষ্ণনগরে
    বর্তমান | ২০ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: ফের জলযন্ত্রণা শহরজুড়ে। কল খুললেই ঘোলা কাদা মিশ্রিত জল পড়ছে। তাতে নোংরাও থাকছে। বাধ্য হয়ে সেই জল ব্যবহার করতে হচ্ছে শহরবাসীকে। ব্যাপক ক্ষুব্ধ শহরবাসী। কারণ প্রতিবছর জুলাই আগস্ট মাসে গঙ্গার জলের সরবরাহ বন্ধ থাকে। তার পরিবর্তে ভূগর্ভস্থ জল বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়‌। কিন্তু তাতেও সমস্যার সমাধান হয় না। ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহারের অযোগ্য হওয়ায় বিপাকে পড়তে হয় শহরের বাসিন্দাদের। বিগত চার-পাঁচদিন ধরে গঙ্গার জলে সরবরাহ বন্ধ। ভূগর্ভস্থ জল সরবরাহ শুরু করছে কৃষ্ণনগর পুরসভা। সব মিলিয়ে ফের প্রশ্নের মুখে কৃষ্ণনগর শহরের ২০০ কোটি টাকার জলপ্রকল্প। যা দিয়ে সারা বছর গঙ্গার জল সরবরাহ করা হয়। পুরসভার দাবি, এই সময়ে গঙ্গার মাঝখান থেকে জল তুললে পাট পচা দুর্গন্ধযুক্ত জল আসে না। কিন্তু তা করার জন্য কেন্দ্র সরকারের অনুমতি প্রয়োজন। 

    পুরসভার চেয়ারম্যান রীতা দাস বলেন, কৃষ্ণনগর শহরে ভূগর্ভস্থ জলের সরবরাহ চালু করা হয়েছে। পাট পচা জল মিশে যাওয়ায় গঙ্গার জল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। গঙ্গার মাঝখান থেকে ভেসেলের মাধ্যমে জল তুললে এই সমস্যা হতো না। তার জন্য আমরা চারমাস আগেই কেন্দ্র সরকারের অধীনস্থ নির্দিষ্ট বোর্ডের কাছে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু তার কোনও উত্তর এখনও পর্যন্ত পাইনি। 

    প্রসঙ্গত, বিগত কয়েকদিন ধরেই শহরের জলে পাট পচা গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। মূলত বাড়ি বাড়ি যে গঙ্গার জল সরবরাহ করা হয় তাতেই এই সমস্যা দেখা দেয়। যার ফলে সেই জল ক্রমশ ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে ওঠে। এমনকী সেই জল স্নানের কাজে ব্যবহার করলেও গায়ে চুলকানির সমস্যা দেখা দেয়। কারণ জুলাই-আগস্ট মাস নাগাদ জলঙ্গি নদীতে পাট পচানো হয়। এই সময়ে গোটা নদীজুড়েই বিভিন্ন জায়গায় পাট পচান চাষিরা। যার ফলে জলঙ্গি নদীর জল কালো হয়ে ওঠে। সেই জল নবদ্বীপের কাছে গঙ্গায় গিয়ে পড়ে। যার ফলে জলঙ্গির পাট পচা জল সরাসরি গঙ্গায় মিশে যায়। নবদ্বীপের স্বরূপগঞ্জ ঘাটের কাছে কৃষ্ণনগর শহরের জন্য গঙ্গার জল তোলার মেশিন রয়েছে। সেখান থেকেই জল তুলে কৃষ্ণনগর শহরে বাড়ি বাড়ি সরবরাহ করা হয়। পুরসভার সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরে মোট ৪৮ হাজার হোল্ডার রয়েছে। যার মধ্যে ২৫ হাজার বাড়িতে আগেই গঙ্গার জলের কানেকশন পৌঁছে গিয়েছে। আরও কুড়ি হাজার বাড়িতে গঙ্গার জলের কানেকশন দেওয়ার টার্গেট রয়েছে। কিন্তু চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত ৩ হাজার বাড়িতেই গঙ্গার জলের কানেকশন দেওয়া গিয়েছে পুরসভার তরফ থেকে। ‌অর্থাৎ বর্তমানে প্রায় ২৮ হাজার বাড়িতে গঙ্গার জল পৌঁছচ্ছে। যদিও বর্তমানে সেই জল সরবরাহের কাজ বন্ধ। 

    কিন্তু শহরবাসীর অভিযোগ, গঙ্গার জলের পরিবর্তে বিকল্প ভূগর্ভস্থ জল দেওয়া হলেও তা একবারেই ব্যবহারযোগ্য নয়। কল খুললেই ঘোলাটে জল পড়ছে। শহরের নিচু এলাকাগুলোয় জলের অবস্থা আরও খারাপ। দেখলে মনে হবে যেন কাদা জল। শহরের বাসিন্দা দীপ দাস বলেন, ভূগর্ভস্থ জল পান করা তো দূর, গৃহস্থালীর কাজেও ব্যবহার যোগ্য নয়। বাধ্য হয়েই আমাদের জল কিনে ব্যবহার করতে হচ্ছে।‌  কয়েকদিন আগেই নবদ্বীপে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে শহরে গঙ্গার জল সরবরাহ বিঘ্নিত হয়েছিল। নবদ্বীপে পুজোর মরশুম উপলক্ষ্যে বিভিন্ন জায়গায় গাছ কাটা হচ্ছিল। যার জন্য সকাল থেকে কারেন্ট বন্ধ রাখা হয়। বিদ্যুৎ না থাকার জন্য গঙ্গা থেকে মেশিন দিয়ে জল তুলতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয় কৃষ্ণনগর পুরসভাকে।‌  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)