• মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে পরিষেবা অনেকটাই স্বাভাবিক, ফিরছে স্বস্তি 
    বর্তমান | ২০ আগস্ট ২০২৪
  • সংবাদদাতা, বহরমপুর: স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্কট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। সোমবার একলাফে ওপিডি বিভাগে রোগীর সংখ্যা বেড়ে তিন হাজারের উপর পৌঁছল। রবিবার ছুটির পর সোমবার ওপিডির সব বিভাগেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক থাকায় রোগীরা পরিষেবা পেয়েছেন। চিকিৎসার পর রোগীদের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা হাসপাতাল থেকে সরাসরি মিলছে। অন্তর্বিভাগেও প্রায় ১১০০ রোগীর চিকিৎসা চলছে। মেল-ফিমেল, সার্জিক্যাল বিভাগ সহ সিসিইউ, আইসিইউ, এসএনসিইউ সব বিভাগে স্বাভাবিক পরিষেবা শুরু হয়েছে। 


    মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার অনাদি রায়চৌধুরী বলেন, আন্দোলনের পাশাপাশি স্বাস্থ্যে স্বাভাবিক পরিষেবা প্রদান চিকিৎসকদের দায়বদ্ধতার মধ্যেই পড়ে। খুবই সঙ্কটজনক অবস্থা কাটিয়ে আমরা অতি দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছি। এটা সিনিয়র চিকিৎসকদের সাফল্য। পরিষেবা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জায়গায় আনতে পেরে আমরা রোগীদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছি। কোথাও কোনও খামতি থাকছে কি না, ২৪ ঘণ্টা সেবিষয়ে নজরদারি চালানো হচ্ছে।


    জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতির জেরে শুরুতে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবায় চরম ঘাটতি দেখা দিতে শুরু করেছিল। এমনকী প্রথম দু’দিনে দু’জন রোগীর বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুরও অভিযোগ উঠেছিল। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, বুকের ব্যথা ও সর্পাঘাতে ভর্তি দুই রোগীর চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসায় কোনও গাফিলতি ছিল না। চিকিৎসক আন্দোলনের জেরে ইমার্জেন্সি ও ওপিডি বিভাগে ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল। গত শুক্রবার পর্যন্ত সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবায় মানুষের আস্থা প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছিল। ওপিডি বিভাগে যেখানে প্রতিদিন (রবিবার বাদে) ৪৫০০-৫০০০ রোগী চিকিৎসার জন্য আসতেন, শুক্রবার পর্যন্ত সেই সংখ্যা হাজারের নীচে নেমে এসেছিল। ওপিডি বিভাগ ও টিকিট কাউন্টার রোগীর অভাবে খাঁ খাঁ করছিল। টিকিট কাউন্টারের সামনে মশলা-মুড়ি বিক্রেতা সজল দাস বলেন, ক’দিন ধরেই রোগীর অভাবে ব্যবসায় ডামাডোল চলছিল। আজ রোগীর চাপ যথেষ্ট বেড়েছে। বিক্রিও মন্দ হচ্ছে না।


    মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার ওপিডি বিভাগে ৩২০০ জন রোগী টিকিট কেটে ডাক্তার দেখিয়েছেন। শিশু, মেডিসিন, চেস্ট, গাইনো, অর্থোপেডিক সহ সব বিভাগেই চিকিৎসক বসেছিলেন। কান্দি ব্লকের হাটপাড়া থেকে ষাটোর্ধ্ব ইসরাইল শেখ শিরার সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন। ইসরাইল সাহেব বলেন, মেডিক্যালে চিকিৎসা হচ্ছে না শুনে নার্সিংহোমে গিয়েছিলাম। স্বাথ্যসাথী কার্ডের পর নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ ৫০ হাজার টাকা দাবি করেছিল। মেডিক্যালে দেখিয়ে সব পরীক্ষা বিনা খরচায় মিলেছে। বেলডাঙা ব্লকের শঙ্করপুরের তৈসেদা খাতুন ওপিডির প্রসূতি বিভাগে দেখাতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, লাইন দেওয়া ছাড়া কোনও অসুবিধা হয়নি। খুবই ভালো পরিষেবা পেয়েছি। বহরমপুরের কাশিমবাজারের অরুণ হালদার শ্বাসকষ্টজনিত কারণে সোমবার সকালে জরুরি বিভাগে এসেছিলেন। অরুণবাবু বলেন, ইমার্জেন্সিতে দেখে অক্সিজেন, নেবুলাইজার দেওয়ার পর ওপিডি বিভাগে পাঠানো হয়েছিল। চিকিৎসক খুঁটিয়ে দেখে ওষুধ ও পরামর্শ দিয়েছেন। ইসরাইল শেখ, অরুণ হালদার, তৈসেদা খাতুনদের মতো বহু রোগী ফের মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতেলের উপর আস্থা ফিরে পেয়েছেন। রোগীর সংখ্যা বাড়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও খুশি। প্রসঙ্গত, সোমবারও একইভাবে কর্মবিরতি পালন করছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা।  ফাইল চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)