• শিক্ষার মানে এগিয়ে, জনপ্রিয়তা পাচ্ছে দাসপুরের চাঁ‌ইপাট হা‌ইস্কুল 
    বর্তমান | ২০ আগস্ট ২০২৪
  • কাজলকান্তি কর্মকার, ঘাটাল: শুধুমাত্র বিদ্যালয়ের অবস্থানই যথেষ্ট নয়, শিক্ষার গুণগত মানও গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষকদের যোগ্যতা, শিক্ষা-উপকরণ, শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ, সবকিছু মিলেমিশেই তৈরি হয় বিদ্যালয়। এইসমস্ত মানদণ্ড দিয়ে মাপলে দাসপুর-২ ব্লকের চাঁইপাট হাইস্কুল ঘাটাল মহকুমার অন্যতম সেরা স্কুলের তালিকাতেই থাকবে, অভিভাবকদের এমনটাই অভিমত। 


    ১১৪বছর আগে চাঁইপাট জনপদটি ছিল একেবারে অজ পাড়া-গাঁ। ১৯১০সালে ওই এলাকার ফকিরচন্দ্র মণ্ডল, ভূপতিচরণ মাজি, মন্মথনাথ মণ্ডল, ঈশ্বরচন্দ্র জানার মতো কয়েকজন শিক্ষাদরদী দূরদর্শী মানুষের উদ্যোগে কতিপয় পড়ুয়া নিয়ে চাঁইপাট হাইস্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মাটির বাড়িতেই স্কুলের সূচনা হয়। বর্তমানে স্কুলের গেটের সামনে পিচ রাস্তা, তৈরি হয়েছে তিনতলা ভবন। স্কুলের সুবাদেই পরিচিতি বেড়েছে গ্রামের। দুই মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি জেলার সংযোগস্থলে স্কুলটি অবস্থিত। তাই চার জেলার ছাত্রছাত্রীই ওই স্কুলে পড়াশোনা করে। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে কলা, বাণিজ্য এবং বিজ্ঞান তিনটি বিভাগই রয়েছে। এই স্কুল এখন মহীরুহের আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১১৫০, মোট ২৯ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও চারজন শিক্ষাকর্মী রয়েছেন।


    পড়াশোনার পাশাপাশি বিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল এবং খেলাধুলোর পরিবেশও ভালো। প্রায় প্রতি বছর বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা সরকারিভাবে জেলা ও রাজ্যস্তরে বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। বরাবরই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল ভালো হয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহনকুমার মাইতি বলেন, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান, কলা ও বাণিজ্য বিভাগ মিলিয়ে মোট ২১৪জন পরীক্ষার্থী ছিল। তিনটি বিভাগেই উল্লেখযোগ্য ফলাফল করেছে ছাত্রছাত্রীরা। মাধ্যমিকে ১০২জন পরীক্ষার্থীর সকলেই পাশ করেছে। মাধ্যমিকে সর্বোচ্চ নম্বর ৬৭। ছ’জন পরীক্ষার্থী ৬০০-র উপর নম্বর পেয়েছে। প্রথাগত শিক্ষা ছাড়াও বিদ্যালয়ে বৃত্তিমূলক শিক্ষার বিভাগ রয়েছে। ওয়েল্ডার, ইলেক্ট্রিক্যাল, আমিন সার্ভে, টেলারিংয়ের মতো বেশ কয়েকটি ট্রেডে প্রতি বছর অনেক ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। কোর্স শেষ করে অনেকেই স্বনির্ভর হয়েছেন। 


    বিদ্যালয়ের প্রাক্তন সম্পাদক তথা চাঁইপাট গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রবোধ আলু বলেন, স্কুলের প্রাক্তনীদের কথা মনে পড়লে বুকটা গর্বে ভরে যায়। প্রাক্তনীদের মধ্যে অ্যাস্ট্রোফিজিক্স ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে রিসার্চ স্কলার, ল্যাপারোস্কোপিক সার্জেন অ্যান্ড কনসালটেন্ট গাইনোকোলজিস্ট, সেনা বিভাগের চিকিৎসক(মেজর) যেমন আছেন, তেমনই অর্জুন পুরস্কারপ্রাপ্ত রাইফেল শ্যুটারও রয়েছেন। যাঁরা কর্মসূত্রে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে থাকেন। তাঁরা এখনও স্কুলের সাথে নাড়ির টান অনুভব করেন। এছাড়াও অসংখ্য প্রাক্তনী শিক্ষাক্ষেত্র, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে, চিকিৎসা জগতে, শিল্পকলায় নিজ-নিজ কর্মস্থলে দেশবিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিষ্ঠিত।


    ছাত্রছাত্রীরাই জাতির ভবিষ্যৎ। তাই সাহিত্য, সংস্কৃতি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চার বিষয়টিও গুরুত্ব দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রধান শিক্ষক এবার স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান পালনের ঘটনাটি বর্ণনা করে বলেন, ছাত্রছাত্রীদের প্রবল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে আমাদের বিদ্যালয়ে ৭৮তম  স্বাধীনতা দিবস পালিত হল। 


    পড়ুয়াদের আঁকা বিপ্লবী-মনীষী ও জাতীয় পতাকার ছবি, স্বাধীনতা সংগ্রামের ও সামাজিক বার্তার বিভিন্ন ছবি দিয়ে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ সাজানো হয়। ওইদিন সকালে ট্যাবলো, নিজেদের স্কুলের এনসিসি দল ও ব্যান্ড সহযোগে শোভাযাত্রা হয়। পরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, মনীষীদের আবক্ষ মূর্তি, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)