জোগান কম, ভিনজেলা থেকে চড়া দামে শোলা কিনছেন মঙ্গলকোটের শিল্পীরা
বর্তমান | ২০ আগস্ট ২০২৪
সংবাদদাতা, কাটোয়া: বর্ষার শুরুতে পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে শোলার জোগানে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফলে মঙ্গলকোটের বনকাপাশির শোলাশিল্পীরা চিন্তায় পড়েছেন। অতিবৃষ্টিতে মজুত শোলা বৃষ্টিতে ভিজেছে। একের পর এক বরাত বাতিল করতে হচ্ছে। এর জেরে পুজোর আগে প্রতিমার শোলার গয়না তৈরিতে শিল্পীদের ঘাম ছুটছে। দ্বিগুণ দাম দিয়ে অন্য জেলা থেকে শোলা কিনতে হচ্ছে। এককথায়, বনকাপাশির শোলাশিল্প সঙ্কটে পড়েছে।
মাটির প্রতিমার গয়না, কাপড়ের আঁচল-সবই শোলা দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়। বনকাপাশির শোলাশিল্পীরা কয়েক দশক ধরে সেই কাজই করে আসছেন। এখন গ্রামের প্রায় ৪০০টি পরিবার শোলাশিল্পের সঙ্গে যুক্ত।
কয়েক বছর আগে গ্রামের নয়ানজুলি, পুকুরে শোলা উৎপন্ন হতো। কিন্তু গত দু’বছর মরশুমের শুরুতে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়নি। ফলে নয়ানজুলি বা ছোট পুকুরে আর শোলা উৎপন্ন হচ্ছে না। গ্রামের বড় পুকুরে মাছ চাষের জন্য জল পরিষ্কার রাখা হয়। তাই শোলার জোগানে ভাটা পড়েছে। তাই ভিনজেলায় কৃত্রিমভাবে চাষ করা শোলাই এখন শিল্পীদের ভরসা। এতে খরচ বেশি পড়ে। ফলে শিল্পীদের খুব একটা বেশি আয় হয় না। উত্তর ২৪ পরগনার জয়নগর, বিষ্ণুপুর এবং উত্তর দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় শোলার চাষ করা হয়। সেখান থেকেই শিল্পীদের চড়া দামে শোলা কিনতে হচ্ছে।অতিবৃষ্টিতে বনকাপাশিতে এবার বহু শোলাশিল্পীর বাড়িতে জল ঢুকেছিল। তাতে মজুত কাঁচামাল ভিজে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পুজো আসতে আর প্রায় দু’মাস বাকি। এরই মধ্যে গুজরাট, অসম, মুম্বই, দিল্লি প্রভৃতি জায়গা থেকে শিল্পীদের কাছে লক্ষ লক্ষ টাকার বরাত এসেছে। কোথাও প্রতিমার গয়না তৈরি করতে হবে। আবার কোথাও পুরো প্রতিমা শোলা দিয়ে সাজিয়ে তোলা হবে। কিন্তু কাঁচামাল না মেলায় শিল্পীরা হতাশ। অনেকে শুধু কাঁচামাল না মেলায় উত্তরবঙ্গের লক্ষ লক্ষ টাকার বরাত ছেড়ে দিচ্ছেন।
শোলাশিল্পী অভিজিৎ সাহা বলেন, শোলার জোগান কম হওয়ায় অর্ডার নেওয়ার সাহস পাচ্ছি না। গত বছর যে শোলা ৬০ টাকা বান্ডিল হিসেবে পাওয়া গিয়েছিল, এবার সেটার দাম ২০০তে ঠেকেছে। দিনাজপুরের পাইকাররাও সেভাবে শোলা পাচ্ছেন না। বেশি টাকা দিয়েও শোলা পাওয়া যাচ্ছে না।
বনকাপাশির শোলাশিল্পী বরুণ মালাকার বলেন, আমাদের দু’বছর ধরে ভিনজেলার শোলার উপরই ভরসা রাখতে হচ্ছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় শোলা উৎপাদন কমে যাচ্ছে। আগে এক পিস শোলা দেড় টাকা দামে কিনতাম। এখন পাঁচটি শোলা নিয়ে এক বান্ডিল অনেক টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। আগে শোলার যে অংশ আমরা ফেলে দিতাম, এখন সেটাও কাজে লাগাতে হচ্ছে।-নিজস্ব চিত্র