নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: মহিলা চিকিৎসকের খুন-ধর্ষণের প্রতিবাদে উত্তাল গোটা দেশ। অজস্র সাধারণ মানুষের পাশাপাশি প্রতিবাদ-আন্দোলনের পুরোভাগে রয়েছেন চিকিৎসকরা। আর জি করের ঘটনা সামনে আসার পর থেকে দফায় দফায় ধর্মঘট, কর্মবিরতি চালাচ্ছেন তাঁরা। এর প্রভাব পড়েছে সার্বিক চিকিৎসা ক্ষেত্রে। হাসপাতালে এসে বহু রোগীকে ফিরে যেতে হচ্ছে বিনা চিকিৎসায়। অসহায়ভাবে মৃত্যু ঘটছে অনেকের। সপ্তাহখানেক ধরে চলছে এই পরিস্থিতি। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রোগী ও তাঁদের পরিজনের দুর্ভোগ। ক্ষোভ বাড়ছে ভুক্তভোগীদের মধ্যে। ডাক্তারদের আন্দোলনের ন্যায্যতা নিয়ে দ্বিমত না হয়েও তাঁদের প্রশ্ন, ন্যায়বিচারের দাবিতে আন্দোলন চলুক। কিন্তু তার জন্য কেন বিনা চিকিৎসায় মানুষ মরবে?
সোমবার দুপুর। ফাঁকা ফাঁকা এসএসকেএম হাসপাতাল চত্বর। গত কয়েকদিন ধরেই অবশ্য হাসপাতালের পরিচিত সেই ভিড় উধাও। সাদা পাঞ্জাবি গায়ে একটি ছোট্ট ছেলে একটি স্ট্রেচার টেনে নিয়ে যাচ্ছে। স্ট্রেচারে শুয়ে তার দিদা। কষ্ট হচ্ছে একা টানতে। কিন্তু দিদাকে সুস্থ করে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য নাছোড়বান্দা সে। সকাল থেকে দিদা পেটের ব্যথায় কাতর। তাঁকে নিয়ে মা ও সে মিনাখাঁ থেকে ছুটে এসেছে পিজিতে। কিন্তু ভর্তি নেয়নি হাসপাতাল। প্রেসক্রিপসনের উপর হাসপাতালের স্ট্যাম্প, বেড খালি নেই। মৌখিকভাবে বলে দেওয়া হয়েছে, ‘পরিস্থিতি ভালো নয়। শম্ভুনাথ পণ্ডিতে নিয়ে যান।’ ইমার্জেন্সির সামনে দাঁড়িয়ে এনিয়ে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছিলেন বৃদ্ধার মেয়ে রোজিনা বিবি (নাম পরিবর্তিত)। তাঁর দাবি, ‘বেড খালি ছিল। প্রথমে বলল, হয়ে যাবে। এখন বলছে হবে না।…ডাক্তারবাবুদের আন্দোলন চলুক। কিন্তু একজনের জন্য বিচার চাইতে গিয়ে আমাদের কেন এভাবে মরতে হবে!’ তাঁর অভিযোগ, ‘বেড যে খালি নেই, তা নয়। হাসপাতাল তো ফাঁকা। লোকজনই নেই। তবুও এমন করছে! কোথায় যাব বলুন তো!’ বলতে বলতে তাঁর চোখের কোণ চিকচিক করে উঠল।
একই অভিযোগ দীপক মজুমদারের (নাম পরিবর্তিত)। শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে রোগীকে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স চালকের সঙ্গে দর কষাকষি করছিলেন। কী হয়েছে? ‘এখন খুব ইমার্জেন্সি অবস্থা। কিছু বলতে পারব না। হাসপাতাল থেকে বলল, ভর্তি নেওয়া যাবে না।’ কার্ডিওলজির ইমার্জেন্সি একেবারে শুনশান। সেখানকার নিরাপত্তারক্ষী জানালেন, মূল ইমার্জেন্সি থেকে রেফার করলে তবেই এখানে রোগী আসছে। বলতে বলতে হাতে কাগজ নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে ঢুকলেন সুধন্য পাত্র। তাঁর স্ত্রী’র ইসিজি করাতে হবে। নিরাপত্তারক্ষী তাঁকে জানিয়ে দিলেন, ‘পরিস্থিতি ভালো না। আগামী সোমবার আসুন।’
এদিন পিজি হাসপাতাল ওপিডি অবশ্য চালু ছিল। প্রতিটি বিভাগেই স্বল্প সংখ্যক সিনিয়র চিকিত্সক রোগী দেখেছেন। রোগীর সংখ্যাও ছিল হাতে গোনা। শহরের সব সরকারি হাসপাতালেই কমবেশি একই চিত্র। আর জি কর হাসপাতালে এদিন কয়েকজন ভর্তি হয়েছেন। অনেক রোগীকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেক রোগীকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গিয়েছেন বাড়ির লোকজন।