• পূর্ণিমার কোটাল, নিম্নচাপের জোড়া আতঙ্কে ঘুম উড়েছে সুন্দরবনবাসীর
    বর্তমান | ২০ আগস্ট ২০২৪
  • সংবাদদাতা, কাকদ্বীপ: চলছে পূর্ণিমার ভরা কোটাল। তার উপর তৈরি হয়েছে গভীর নিম্নচাপ। এই জোড়া ফলা নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন সুন্দরবনবাসী। রবিবার রাত থেকেই নদী ও সমুদ্রে জল বাড়তে শুরু করেছে। এখনও পর্যন্ত সাগর, পাথরপ্রতিমা, নামখানা ও কাকদ্বীপ এলাকার বহু নদীর বাঁধ বেহাল অবস্থায় রয়েছে। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরি ভিত্তিতে নদীবাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। তা সত্ত্বেও রাতের ঘুম উড়েছে এলাকাবাসীর। স্বাভাবিকের তুলনায় নদীর জল বেশি বাড়লে বিপদ ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। কাছাকাছি এলাকার বাসিন্দারা তাই বেহাল নদীবাঁধের উপর নজর রেখেছেন।

    এ বিষয়ে নামখানা ব্লকের বুধাখালির সাতের ঘেরি এলাকার বাসিন্দা চঞ্চল মণ্ডল বলেন, কিছুদিন আগেই এই এলাকায় সেচদপ্তরের পক্ষ থেকে বেহাল নদীবাঁধ মেরামত করা হয়েছে। কিন্তু বাঁধের সামনের দিকের অংশে নদীর গভীরতা রয়েছে। এছাড়াও নদীতে প্রবল স্রোত থাকায় বাঁধ রক্ষা করায় সমস্যা হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কে। রবিবার রাতেও নদীবাঁধের কিছুটা অংশে ধস নেমেছে। জরুরি ভিত্তিতে তা অবশ্য  মেরামতও করা হয়েছে। কিন্তু পূর্ণিমার কটালে জল বেশি বাড়লে এবং নিম্নচাপের জেরে বেশি বৃষ্টি হলে নদীবাঁধ ভাঙার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন এলাকাবাসীরা।

    সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা বলেন, বেহাল নদীবাঁধগুলিকে জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করা হয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েত ও সেচদপ্তরের আধিকারিকরা সেগুলির উপর নজর রেখেছেন। আর সেচদপ্তরে সকলের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। 

    দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। ইতিমধ্যেই সমুদ্র থেকে বহু ট্রলার উপকূলে ফিরে এসেছে। আজ, ২০ আগস্ট পর্যন্ত সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কারণ পূর্ণিমার কোটাল ও নিম্নচাপের কারণে সমুদ্র এখন উত্তাল। 

    এ বিষয়ে সুখেন দাস নামে এক মৎস্যজীবী বলেন, এই আবহাওয়ার কারণে সমুদ্রে মাছ রয়েছে। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া যাচ্ছে না। এই বছর মৎস্যজীবীদের বারবার ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। আগে মাছ ধরার মরশুমের প্রথম দুই মাসে প্রায় দশবার সমুদ্র থেকে মাছ ধরে ফেরা হয়ে যেত। কিন্তু এবার মরশুমের প্রথম দুই মাসে মাত্র ছ’বার সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া হয়েছে। তাও আবার অনেক সময় মাঝপথে সমুদ্র থেকে ট্রলার নিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। এইসব কারণেই ক্ষতির মুখে পড়েছেন মৎস্যজীবীরা।

    অন্য দুই মৎস্যজীবী সতীনাথ পাত্র ও বিজন মাইতি বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বেশির ভাগ ট্রলার গোবর্ধনপুর, বাঘের চর ও কালীস্থান দ্বীপের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। দুর্যোগ কাটলে ট্রলারগুলি ফের মাছ ধরার জন্য সমুদ্রে পাড়ি দেবে। তবে এখন সমুদ্রে ইলিশ মাছ রয়েছে। তেমন বড় মাছ না পাওয়া গেলেও, সাড়ে তিনশো থেকে চারশো গ্রাম ওজনের ইলিশ বেশি জালে আসছে। দুর্যোগ কেটে গেলে বড় ইলিশ মাছ পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)