• গুজব! চিহ্নিত বাংলাদেশ-পাকিস্তানের ৩০ ভুয়ো অ্যাকাউন্ট 
    বর্তমান | ২০ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: এক মহিলার মৃতদেহ হাসপাতালের বেডে পড়ে রয়েছে। তাঁকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়লেন চিকিৎসক। ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এমনই একটি ভিডিও পোস্ট ঘুরছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই পোস্টে লেখা—‘আর জি কর কাণ্ডে নির্যাতিতার (নাম উল্লেখ করে) পোস্টমর্টেমের সময় ডাক্তাররাও চোখের জল আটকে রাখতে পারলেন না।’ পোস্ট হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই যে সেই ভিডিও ভাইরাল, তা বলাই বাহুল্য।

    ভালো করে ওই ভিডিওটি দেখলেই বোঝা যাচ্ছে সেটি চীনের। হাসপাতালের ফ্লোরেও চীনা হরফে লেখা রয়েছে। চিকিৎসকরাও চীনা। কলকাতা পুলিসের দাবি, এই ভিডিও ভিত্তিহীন, সম্পূর্ণ ভুয়ো। ধর্ষণ-খুনের মতো স্পর্শকাতর ঘটনায় এই সমস্ত ভুয়ো তথ্য প্রচার রুখতে আগেই মাঠে নেমেছিল পুলিস। সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব রটানোর অভিযোগে এখনও পর্যন্ত মোট ২৮০টি প্রোফাইল চিহ্নিত করেছে লালবাজারের সাইবার থানা। অনুসন্ধানে নেমে এই প্রোফাইলগুলির খোঁজ করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা। কলকাতা পুলিসের তথ্য বলছে, আর জি কর নিয়ে গুজব রটানো ওই প্রোফাইলগুলির মধ্যে ৩০টি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের। এখানেই শেষ নয়। ভুয়ো নাম, ভুয়ো ছবি দিয়ে তৈরি প্রোফাইল থেকে ছড়ানো ভুয়ো পোস্টে গুজবের ডানায় উড়ে বেড়াচ্ছে আর জি কর কাণ্ড। যা দেখে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন ‘হঠাৎ বিপ্লবী’ নেটিজেনদের একাংশ।  

    ইন্টারনেট প্রোটোকল (আইপি) অ্যাড্রেস খতিয়ে দেখে এই তথ্য পেয়েছেন সাইবার বিভাগের আধিকারিকরা। ভিন দেশ থেকে গুজব রটিয়ে আর জি কর কাণ্ডকে ‘ধর্মীয়করণ’ করার চেষ্টাও হচ্ছে বলে দাবি পুলিসের। শুধু ভিন দেশ নয়। এই গুজব রটছে, মধ্য ও পশ্চিম ভারতের একাধিক বিজেপি শাসিত রাজ্য থেকেও। সেই প্রোফাইলগুলিকেও চিহ্নিত করেছে পুলিস। অ্যাকাউন্টগুলিকে নোটিস পাঠানো হবে বলে লালবাজার সূত্রের খবর।  

    ঘটনার তদন্ত শুরু হওয়ার পর থেকেই ‘ট্রায়াল’ পরোক্ষভাবে চাপ সৃষ্টি করতে শুরু করেছে সোশ্যাল মিডিয়া। আর জি কর কাণ্ডে উত্তপ্ত রাজ্য থেকে দেশ। সেই আগুনে ‘ঘি’ ঢালছে সোশ্যাল মিডিয়ার গুজব, রটনা, ভুল তথ্য, যাচাই না করা খবর। কখনও প্রকাশ্যে এসেছে, ‘নির্যাতিতার শরীর থেকে মিলেছে ১৫০ গ্রাম সেমিনাল ফ্লুইড’। আবার কখনও চিকিৎসকের শরীরের আঘাতের সংখ্যা ও ধরণ নিয়ে একাধিক তথ্য ঘুরছে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপে। ঘটনাস্থলে একাধিক ব্যক্তি থাকার গুজবও উঠছে সেখানেই। যদিও এখনও পর্যন্ত পুলিস বা সিবিআই তদন্তে এমন কোনও তথ্য প্রকাশ্যে আসেনি। 

    এইসব রটনা রুখতে প্রথম থেকেই লালবাজারে সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং সেল ও সাইবার সেলের তরফে কড়া পদক্ষেপ শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে ২৫০টি প্রোফাইল চিহ্নিত হয়। ব্যক্তিগতভাবে প্রোফাইলের মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিস। তবে অনুসন্ধান যত এগিয়েছে, ততই ভিন দেশের গুজব রটানোর ঘটনায় ‘অন্তর্ভুক্তি’র গন্ধ পেয়েছে লালবাজার। কলকাতা পুলিসের সাইবার বিভাগের এক কর্তার কথায়, আইপি অ্যাড্রেস গুলি ট্র্যাক করে প্রোফাইলের মালিকদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁরা দেশে উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা করছে। দ্রুত যাতে পোস্ট ছড়িয়ে পড়ে,  সে কারণে ‘হ্যাশট্যাগ (#) আর জি কর’, ‘হ্যাশট্যাগ (#)জাস্টিস’, ‘হ্যাশট্যাগ (#) উইমেন’, ‘হ্যাশট্যাগ (#) রেপ’ লিখে দেওয়া হচ্ছে। 

    লালবাজার জানিয়েছে, ২০টি এমন ফেক প্রোফাইলও পাওয়া গিয়েছে, যেগুলি চালু করা হয়েছে মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ ও রাজস্থান থেকে। এই রটনা কি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত? এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে তথ্যাভিজ্ঞ মহলের মনে। 
  • Link to this news (বর্তমান)