• সুবিচার চান মৃতার পাড়াতুতো দাদা-ভাইরা, রাখি নয়, কালো ব্যাজ পরল নাটাগড়
    বর্তমান | ২০ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: তাঁকে কেউ ডাকতেন বোন বলে। কারও দিদি ছিলেন তিনি। রাখির দিন তাঁরা দলবেঁধে একসঙ্গে আনন্দ করতেন। ভাই-দাদাদের রাখি পরাতেন। এবার তিনি নেই। ফলে রাখির আনন্দও ম্লান। এক দশক ধরে এখানে রাখিবন্ধন উৎসব হচ্ছে। সেখানে ঝলমল করতেন চিকিৎসক তরুণী। আর জি করে সেই রাতে তাঁকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। তারপর থেকে নাটাগড় থমথম করছে। চোখের জলে ভেসে মৃতার ফটো ফ্রেমে মালা দিয়ে মোমবাতি জ্বালাচ্ছেন প্রতিবেশীরা। 

    সোমবার রাখি পূর্ণিমা ছিল। এদিন রাখিবন্ধন অনুষ্ঠান বাতিল করে বোনের নৃশংস খুনের প্রতিবাদে পথে পাড়াতুতো দাদা ও ভাইরা। রাখির বদলে তাঁরা হাতে বাঁধলেন কালো সুতো। পরলেন কালো ব্যাজ। এ শোক সহজে যাবার নয়। ফলে এ বছর দুর্গাপুজো, কালীপুজো ও অন্যান্য উৎসবও হবে নমোনমো করে। এ ছাড়া কীভাবেই বা শ্রদ্ধা জানাবেন প্রিয় দিদি ও বোনটিকে।

    সোমবার দুপুরে পাড়ার সবাই মিলে ব্যানার-পোস্টারে প্রতিবাদ লিখে টাঙিয়েছেন। সন্ধ্যায় মৃতা চিকিৎসকের বাড়ির সামনে জড়ো হন। রাখি নয় হাতে বেঁধেছেন কালো সুতো ও ব্যাজ। এরপর দোষীদের কঠোর সাজার দাবিতে পদযাত্রা বের করেন। যাত্রাশেষে সোদপুর ট্রাফিক মোড়ে পালন হয় বিক্ষোভ কর্মসূচিও। 

    ন্যায় বিচারের দাবিতে পোস্টার টাঙাচ্ছিলেন সুধাকৃষ্ণ ঘোষ। বললেন, ‘এক দশকেরও বেশি সময় ধরে পাড়ায় রাখিবন্ধন উৎসব হচ্ছে। সময় পেলেই আমাদের প্রিয় বোনটি যোগ দিত। গত বছর আর্থিক সাহায্যও করেছিল। তাঁর উপর নৃশংস অত্যাচার ও খুনের ঘটনায় আমরা স্তম্ভিত। নর পিশাচদের চরম শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই থামবে না।’ পাড়ার অন্যান্য বাসিন্দাদের বক্তব্য, ‘চরম শোকের আবহে এবার রাখিবন্ধন উৎসব বাতিল করা হয়েছে। আড়ম্বর ছাড়াই হবে ক্লাবের কালীপুজো। এমনকী পারিবারিক দুর্গাপুজোও হবে জাঁকজমক ছাড়া।’ পরিতোষ রায় নামে অন্য এক বাসিন্দা বলেন, ‘অপরাধীদের চরম শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত এই লড়াই চলবে। সবাইকে জাঁকজমকপূর্ণ সামাজিক অনুষ্ঠান থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।’ রূপক কর নামে আর এক বাসিন্দা বলেন, ‘ও নিজের বাড়িতে পুজো শুরু করেছিল। মনে হচ্ছে, এবার তো মায়ের বোধনের আগেই বিসর্জন হয়ে গেল। জীবন্ত দুর্গাকে হারিয়ে আমাদের কাছে সবই বিষাদময়।’ 

    এদিন সোদপুরের অমরাবতী ও কাঠগোলা থেকে দু’টি পৃথক প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। ট্রাফিক মোড়ে বিক্ষোভ প্রদর্শনও হয়। কর্মসূচিতে বিচার চাওয়া সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
  • Link to this news (বর্তমান)