• পাড়ার ‘দুর্গা’ই নেই! কীসের পুজো?
    এই সময় | ২০ আগস্ট ২০২৪
  • অশীন বিশ্বাস, সোদপুর

    এই তো সে দিনের কথা। নিজে হাতে প্রতিমা সাজিয়ে পুজোর আয়োজন করত মেয়েটা। উৎসবের সেই প্রাণভোমরা নীরব হয়ে গিয়েছে চিরতরে। ফিকে হয়ে গিয়েছে আলোর রোশনাই। অন্ধকার রাতে তাঁর জন্য গর্জে উঠেছে দেশ। কিন্তু সোদপুরের সেই পাড়া? সেখানে থমকে গিয়েছে রাত। দিনের আলো যেন রাতের চেয়েও অন্ধকার।যাবতীয় শোক আর প্রতিবাদ নিংড়ে বেরিয়ে আসছে একটাই আওয়াজ— জাস্টিস! যত দিন না বিচার হচ্ছে, তত দিন কোনও সামাজিক উৎসব পালন করা হবে না এই পাড়ায়। মেয়ে ডাক্তার হওয়ায় বাবা-মায়ের গর্ব তো হবেই। কিন্তু আরজি করের তরুণী চিকিৎসক ছিলেন গোটা পাড়ারই গর্ব। অফুরন্ত ছিল তাঁর প্রাণশক্তি।

    যে কোনও সময়ে পাড়ার কেউ অসুস্থ হলে ভরসা ছিলেন তিনিই। সেই মেয়ের নৃশংস হত্যায় রাগে ফুঁসছে গোটা পাড়া। সোমবার রাখির দিন বন্ধ রইল উৎসব। অন্য বছরগুলোয় মেতে উঠতেন তাঁরা। আজ পাড়ার দেওয়ালে দেওয়ালে পোস্টার — ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’।

    তরুণীর বাড়ির পাশেই একটি ক্লাবের মাঠে বড় করে কালীপুজো হতো। উদ্যোক্তারা বললেন, যত দিন না ‘জাস্টিস’ মিলছে, তত দিন নেহাত পুজো বলে তা নমো-নমো করে সারা হবে। পোস্টার সাঁটাতে সাঁটাতে এলাকার যুবক পরিতোষ রায় বললেন, ‘মানতে পারছি না কিছুতেই। এই ভাবে মেয়েটাকে মেরে ফেলবে! কোনও মতে কালীপুজোটা সেরে দেবো।’

    তরুণীর একেবারে কাছের প্রতিবেশীর বাড়িতে প্রায় ৩২ বছর ধরে চলে আসা দুর্গাপুজোও এ বার হবে নেহাত নিয়ম রাখতে। পরিবারের সদস্য সুধাকৃষ্ণ ঘোষ বলেন, ‘জীবন্ত দুর্গাকেই তো হারিয়ে ফেললাম! মাটির দুর্গার উৎসব কী করে করব বলুন?’ সে কথা শুনে পরিতোষও বলেন, ‘যত দিন না বিচার পাচ্ছি, তত দিন সক্রিয় ভাবে কোনও উৎসবই করব না।’

    সোদপুরের বাসিন্দা টুয়া সাহা বলেন, ‘সোদপুরের মেয়ের উপরে এমন অত্যাচার মানতে পারছি না। ডাক্তার দিদির মৃত্যুতে ঠিক করেছি এ বার পুজোয় আর নতুন জামাকাপড় কিনব না।’ ওই পাড়ায় প্রতি বছর শীতে বড় করে রক্তদান শিবিরের আয়োজন হয়। সেটিও বন্ধ রাখা হচ্ছে।

    পাড়ার মেয়ের হত্যার বিচার চেয়ে সোমবার সন্ধেয় এলাকাবাসী একটি মিছিল বের করেন। সোদপুর কাঠগোলা মোড় এবং অমরাবতী মোড় থেকেও দু’টি মিছিল বেরোয়। সব মিছিলই শেষ হয় বিটি রোডে সোদপুর ট্র্যাফিক মোড়ে।
  • Link to this news (এই সময়)