এই সময়, ঝাড়গ্রাম: অন্তঃসত্ত্বা হাতিকে জ্বলন্ত শলাকা বিদ্ধ করে হত্যার ঘটনায় বিচার চেয়ে এ বার সরব হলো দেশের সর্ববৃহৎ পশু সুরক্ষা সংস্থা 'ফিয়াপো' (FIAPO)। অন্য দিকে, হাতিহত্যার সেই ঘটনায় জনতার হাতে মার খাওয়ার পর থেকে ঝাড়গ্রামে কাজ বন্ধ রেখেছেন হুলাপার্টির সদস্যরা। যার ফলে চিন্তার ভাঁজ বনকর্তাদের কপালে।ঝাড়গ্রামে হাতিহত্যার ঘটনার তীব্র নিন্দার পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গে হাতি-মানুষের সংঘর্ষের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সংঘর্ষ মোকাবিলায় বন দপ্তরের পদ্ধতিগত ভুল রয়েছে বলে 'ফিয়াপো' অর্থাৎ 'ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান অ্যানিমেল প্রোটেকশন অর্গানাইজেশন' জানিয়েছে। হাতি মৃত্যুর ঘটনায় বন দপ্তরের গাফিলতির কথা উল্লেখ করে রাজ্য সরকার এবং বন দপ্তরের কাছে তদন্ত কমিটি গঠনের আর্জিও জানিয়েছে 'ফিয়াপো'।
জ্বলন্ত শলাকা বা বর্শা হাতি তাড়ানোর ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এ ক্ষেত্রে ২০১৮ সালের সুপ্রিম কোর্টের একটি আদেশের অবমাননা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থা। মানবিক সমাধানে বনবিভাগের ব্যর্থতার ফলেই মানুষ ও হাতির মৃত্যু ঘটছে বলে দাবি করেছে 'ফিয়াপো'। পশু সুরক্ষা ওই সংস্থা তিনটে দাবি জানিয়েছে।
সেগুলি হলো - ১। পশ্চিমবঙ্গ সরকার অবিলম্বে একটি কমিটি গঠন করুক হাতি মৃত্যুর তদন্তের জন্য। ২। অন্যান্য রাজ্য যারা হাতি সমস্যার সমাধান করেছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিকে নিয়ে হাতি-মানুষের সংঘর্ষ মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞ সমন্বয় কমিটি গঠন করতে হবে। ৩। হাতি-মানুষের সংঘাত বন্ধের জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে নতুন প্রোটোকল তৈরি না হওয়া পর্যন্ত রাজ্যে হুলা টিমের কাজ স্থগিত রাখতে হবে। অবশ্য ঘটনার পর থেকেই কাজ বন্ধ রেখেছে হুলাপার্টি।
এ দিনও ঝাড়গ্রাম জেলার বিভিন্ন জায়গায় ১১০টি বুনো হাতি বিক্ষিপ্ত ভাবে ঘোরাফেরা করছে। বিকেলে ঝাড়গ্রাম শহর সংলগ্ন বৃন্দাবনপুর এলাকার খাস জঙ্গলে ১৪টি বুনো হাতি রাস্তায় বেরিয়ে এসে সাধারণ গ্রামবাসীদের মারমুখী হয়ে তাড়া করে। এক্ষেত্রে সাধারণত হুলা পার্টির সদস্যরা হাতি তাড়ানোর কাজ করেন। কিন্তু এ দিন কোনও হুলাপার্টিকে দেখা যায়নি। হাতি তাড়ানোর জন্য ঝাড়গ্রাম বনবিভাগে পর্যাপ্ত বনকর্মী নেই। যার ফলে হুলাপার্টির উপরই নির্ভর করতে হয় বন দপ্তরকে।
হাতি এলাকায় ঢুকলে হুলাপার্টির সদস্যদের দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির ভিত্তিতে কাজ দেওয়া হয়। এর বাইরে তেমন কোনও বাড়তি সুযোগ-সুবিধা নেই। অনেক সময় হাতি তাড়াতে গিয়ে হুলাপার্টির সদস্যেরও হাতির হানায় মৃত্যু হয়েছে। ঝাড়গ্রাম জেলার মানিকপাড়া, লোধাশুলি, ঝাড়গ্রাম, বেলপাহাড়ি, ভুলাভেদা, জামবনি, গিধনি, ছাতিনাশোল পড়িহাটি, শিলদা, হাতিবাড়ি রেঞ্জে প্রায় একশোটি হুলাপার্টির টিম রয়েছে।
হাতি তাড়ানোর জন্য হুলাপার্টির সদস্যকে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বিভিন্ন সেফটি কিটের জন্য ইতিপূর্বে তাঁরা বনবিভাগে দাবি জানিয়েছিলেন, কিন্তু তা পূরণ হয়নি। হুলাপার্টির সদস্য ভরতচন্দ্র মাহাতো, রবীন্দ্র বাস্কেরা বলেন, 'শহরে হাতি তাড়াতে গিয়ে উল্টে আমাদের সদস্যরা মার খেয়েছেন। তাই হাতি তাড়ানোর কাজ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে।'
হাতিমৃত্যুর ঘটনায় সোমবার অরণ্য ভবনে গিয়েছিলেন বাংলার জনপ্রিয় ইউটিউবার কিরণ দত্ত এবং কয়েক জন পশুপ্রেমী। তবে এ দিন অফিস বন্ধ থাকায় তাঁরা ডেপুটেশন জমা দিতে পারেননি বলে জানিয়েছেন। মঙ্গলবার তাঁরা ফের অরণ্য ভবনে আসবেন বলে জানিয়েছেন।