সময় যত গড়াচ্ছে, চাপ বাড়ছে সিবিআইয়ের উপরেও। আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনার তদন্তভার কলকাতা হাইকোর্ট সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার পর এক সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। কিন্তু লালবাজারের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায় ছাড়া এই মামলায় নতুন করে একজনকেও পাকড়াও করতে পারেনি তারা।অথচ আন্দোলনকারী চিকিৎসক থেকে শুরু করে আমজনতা — প্রত্যেকেই চান, দ্রুত তদন্ত শেষ করে যে বা যারা প্রকৃত দোষী, তাদের গ্রেপ্তার এবং কঠোরতম সাজা হোক। মামলার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে যাওয়ার পরে গত বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও টাইমফ্রেম বেঁধে দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে।
বলেছিলেন, রবিবারের (১৮ অগস্ট) মধ্যে মূল অভিযুক্তকে চিহ্নিত করে কড়া শাস্তি দিতে হবে। সেই সময়সীমা ইতিমধ্যেই পেরিয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সিবিআইয়ের তদন্ত কতদূর এগিয়েছে, তা নিয়ে আগামিকাল বৃহস্পতিবার স্টেটাস রিপোর্ট দিতে হবে সুপ্রিম কোর্টে।
মঙ্গলবারই আরজি কর সংক্রান্ত যাবতীয় মামলা চলে গেল দেশের শীর্ষ আদালতের নজরদারিতে। আপাতত সুপ্রিম কোর্টেই এই সংক্রান্ত যাবতীয় মামলার শুনানি হবে। সিজেআই ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চের নির্দেশ, বৃহস্পতিবার সিবিআইকে স্টেটাস রিপোর্ট দিতে হবে। সিবিআই এখনও পর্যন্ত তদন্ত কতদূর এগিয়েছে, ওই দিনই তার আঁচ মিলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ওই দিনই আরজি কর মামলার পরবর্তী শুনানি হবে শীর্ষ আদালতে।
আরজি করের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর যে বিজেপি সিবিআই তদন্ত চেয়ে জোরালো দাবি তুলেছিল, সেই পদ্ম-ব্রিগেডও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ‘নীরবতা’ দেখে প্রমাদ গুণতে শুরু করেছে। তাদের আশঙ্কা, অতীতের বিভিন্ন সিবিআইয়ের ‘নীরবতা’ বহাল থাকলে সাধারণ মানুষের ক্ষোভের তির ঘুরে যেতে সময় লাগবে না।
এখনও পর্যন্ত সিবিআই তদন্তে নতুন কোনও গ্রেপ্তারি বা তথ্য সামনে না-আসায় এর মধ্যে গভীর রাজনৈতিক অভিসন্ধির গন্ধ পেতে শুরু করেছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। দলের রাজ্যসভার সাংসদ সাকেত গোখলে এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, ‘আরজি করে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় বিজেপিকে সাহায্য করার জন্য সিবিআই একটা চক্রান্তের তত্ত্ব খাড়া করতে চাইছে। ছ’দিন পরেও সিবিআই সম্পূর্ণ নীরব। এই নোংরা খেলা এখনই বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।’
রাজ্যসভায় প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষের কথায়, ‘তদন্ত দীর্ঘায়িত করে বিজেপি-বামকে অক্সিজেন দেওয়া এবং বাংলায় নৈরাজ্য তৈরি করার খেলা আমরা চালাতে দেবো না।’ কুণালের আশঙ্কা, কোনও ভাবে ইস্যুটিকে ঝুলিয়ে রেখে বিরোধীদের রাজনৈতিক ফায়দা লোটার সুযোগ করে দিতে চাইছে সিবিআই।
তাঁর দাবি, ‘আমরা খুব স্পষ্টভাবে বলছি, উই ওয়ান্ট জাস্টিস ফ্রম সিবিআই। সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছে, বৃহস্পতিবারের মধ্যে তাদের কাছে সিবিআইকে রিপোর্ট দিতে হবে। ঘটনা ঘটার ১২ ঘণ্টার মধ্যে কলকাতা পুলিশই গ্রেপ্তার করেছিল প্রথম অভিযুক্তকে।’
তাঁর আরও প্রশ্ন, ‘আরজি করের ঘটনায় ধৃতের বিরুদ্ধে এখনও চার্জশিট দেওয়া হলো না কেন? তদন্ত চলতেই পারে। আরও কেউ এই ঘটনায় যুক্ত থাকলে পরবর্তীতে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেওয়ার পথ তো খোলাই থাকছে।’ রাজ্যের শাসক দলের তরফে এ দিন তাদের নতুন রাজনৈতিক স্লোগানও ঘোষণা করা হয়েছে— ‘নির্যাতিতার বিচার চাই, বিচার দাও সিবিআই।’
রাজ্যসভায় বিজেপির সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের অবশ্য দাবি, ‘সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে কোনও প্রশ্ন নেই। এই প্রশ্নটা তুলে তৃণমূলই সাধারণ মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে।’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘উপরতলার নির্দেশে পুলিশ প্রমাণ লোপাট করার জন্য যা যা করার সব কিছু করেছে আরজি করে। এখন একা সঞ্জয়কে ধনঞ্জয় বানানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল।’