• আঙুলের ছাপ নিয়ে রেশন লুট ডিলারের
    বর্তমান | ২১ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: আঙুলের ছাপ নেওয়া হচ্ছে। হাতে স্লিপও ধরানো হচ্ছে। কিন্তু রেশন সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে না পুরুলিয়া জেলার সিরকাবাদ পঞ্চায়েতের সেনাবনা গ্রামে। মাসের পর মাস ধরে এভাবেই গরিব মানুষদের বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ গ্রামের বাসিন্দাদের। এনিয়ে মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেন গ্রামের বাসিন্দারা। জেলাশাসকের সঙ্গে দেখাও করেন তাঁরা। বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন জেলাশাসক।

    গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, গ্রামে প্রায় তিনশোর বেশি পরিবারের বাস। রেশন গ্রাহকের সংখ্যা অন্তত দু’হাজার। জঙ্গলমহলের স্পেশাল প্যাকেজ মিলিয়ে বাসিন্দারা মাথাপিছু ১৫ কেজি করে চাল ও দু’কেজি করে আটা পান। অথচ, কয়েক বছর ধরে তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন স্থানীয় রেশন ডিলার। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই ডিলারের থেকে আজ পর্যন্ত কোনওদিনই সঠিক সময়ে ও সঠিক পরিমাণে রেশন পাননি গ্রাহকরা। দু’তিন মাস পর পর রেশন দেন তিনি। অথচ, ডিলারের কাছে এসে ই-পস যন্ত্রে আঙুলের ছাপ দিয়ে যেতে হয় প্রতি মাসেই। বাসিন্দারা দু’তিন মাস অন্তর যেটুকুও রেশন পেতেন, গত কয়েকমাস ধরে তাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ।

    বর্তমানে, রেশনে স্বচ্ছতা আনতে ইপস যন্ত্রের সঙ্গে ওজনযন্ত্র যুক্ত করা হয়েছে। ওজনযন্ত্রে সঠিক পরিমাণে রেশন সামগ্রী চাপালে তবেই বের হবে স্লিপ। কিন্তু অভিযোগ, ওজনযন্ত্রে ইট, পাথর দিয়ে স্লিপ বের করা হচ্ছে। সেই স্লিপই ধরিয়ে দেওয়া হয় প্রতি মাসে। সেনাবনার বাসিন্দা সুধাংশু মাহাত, ইন্দ্রজিৎ মাহাত, দীপঙ্কর গড়াইরা বলেন, গত কয়েকমাস ধরেই আমরা রেশন পাচ্ছি না। ডিলারের কাছে গেলে আমাদের স্লিপ কাটতে বাধ্য করা হচ্ছে। আমাদের বলা হচ্ছে, এমাসে স্লিপ কাটলে পরের মাসে রেশন দেওয়া হবে। এভাবে তিন চার মাসের রেশন বকেয়া হয়ে যায়। এবার সেই বকেয়া চাইতে গেলে ডিলার জানায় যে বকেয়া রেশন দেওয়া যাবে না।

    সম্প্রতি ব্লকের খাদ্য পরিদর্শককে বিষয়টি জানান গ্রামবাসীরা। যদিও তিনি কোনও সুরাহাই করতে পারেননি বলে অভিযোগ। এরপর মঙ্গলবার গ্রামবাসীরা জেলাশাসকের কাছে এসে অভিযুক্ত রেশন ডিলার ভবানী মাহাতর বিরুদ্ধে সম্মিলিত অভিযোগ করেন। জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতর সঙ্গেও দেখা করেন তাঁরা। 

    সভাধিপতি বলেন, জঙ্গলমহলের মানুষের যাতে দু’মুঠো ভাতের অভাব না হয়, সেই কারণে রেশনেও স্পেশাল প্যাকেজ চালু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। অথচ, এইসব ডিলার সরকারের বদনাম করছে। এটা বরদাস্ত করা হবে না। ওই ডিলারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এনিয়ে অভিযুক্ত ডিলার ভবানী মাহাতর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে রেশন দোকানটি সামলান তাঁর ছেলে পঞ্চানন মাহাত। তিনি বলেন, যাঁদের রেশন বকেয়া আছে, তাঁদের রেশন দিয়ে দেওয়া হবে।  জেলার খাদ্য নিয়ামক জহর আলম বলেন, বিষয়টি আমাদের কানে এসেছে। এনিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে। রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)