• ডাক্তারের দেখা নেই, ফিরলেন গর্ভবতীরা
    বর্তমান | ২১ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, মালদহ: চিকিৎসক নেই। রোগীর মৃত্যু হলে আমরা দায়িত্ব নেব না। নিজের দায়িত্বে রাখতে পারলে রাখুন। নাহলে ফিরিয়ে নিয়ে যান। এমন কথা শুনে চিকিৎসা পরিষেবা না পেয়ে অগত্যা এক এক করে ফিরে গেলেন গর্ভবতীরা। মঙ্গলবার এমনই অমানবিক চিত্র ধরা পড়ল মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।  প্রসব যন্ত্রণা উঠেছে এমন মহিলাদেরও কেন পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে না জানতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, কোনও অভিযোগ জমা হয়নি।

    তবে, এদিন ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়ার পর ক্ষোভ কয়েকগুণ বেড়েছে রোগী ও পরিজনদের মধ্যে। তাঁদের দাবি, দিনের পর দিন কর্মবিরতি চলতে থাকায় ভুগতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকেই। জনগণের সমস্যার কথা ভেবে অবিলম্বে কাজে যোগ দেওয়া উচিত্ চিকিত্সকদের।

    এদিন মালদহ মেডিক্যালের আউটডোরের সামনে উদভ্রান্তের মতো ছোটাছুটি করতে দেখা যায় সাহাপুরের বাসিন্দা কাঞ্চন চৌধুরীকে। কারণ জিজ্ঞেস করতেই কাঁদতে কাঁদতে অসহায় ওই ব্যক্তি বললেন, আমার মেয়ের ডেলিভারি হবে। তাকে নিয়ে এসেছিলাম ডাক্তার দেখাতে। প্রথমে মাতৃমা, তারপর আউটডোরে ছুটে বেড়াচ্ছি। কিন্তু এখানে চিকিৎসক নেই। ভিড়ের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার পর বলা হল চিকিৎসক নেই। কখন আসবেন কেউ বলতে পারছেন না। নার্সিংহোমে মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই আমাদের। 

    মঙ্গলবার দুপুর একটা নাগাদ আউটডোরে দেখা হয় ইংলিশবাজারের বাসিন্দা কালীদাসী সরকারের সঙ্গে। তিনি গর্ভবতী পুত্রবধূকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু চিকিৎসক কোথায়? চিৎকার করে কালীদাসী বলছিলেন, যে কোনও মুহুর্তে প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়ে যেতে পারে। তাড়াতাড়ি চিকিৎসক ডাকুন। খানিকক্ষণ পর বাইরে বেরিয়ে এসে কালীদাসীর মন্তব্য, সকাল ১১টা নাগাদ পুত্রবধূকে নিয়ে এসেছি। কিন্তু চিকিৎসক না থাকায় তাকে ভর্তি নেওয়া হল না। স্বাস্থ্যকর্মীরা জানান, তাঁরা কোনও দায়িত্ব নিতে পারবেন না। রোগীর মৃত্যু হলে হাসপাতালের কোনও দায় নেই। পুত্রবধূকে নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়ার মতো টাকা কোথায় পাব? জানি না শেষপর্যন্ত কী পরিণতি হবে।

    চিকিৎসকের অভাবে গর্ভবতীদের ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয় নিয়ে জানতে চাওয়া হলে মেডিক্যাল কলেজের এমএসভিপি ডাঃ প্রসেনজিৎ বরের মন্তব্য, চিকিৎসকেরা কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন, সেটা সকলেই জানেন। এসবে হয়তো কিছু সমস্যা হচ্ছে, কিন্তু সেটা রাজ্যজুড়েই। কোনও রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়া বা পরিষেবা না পেয়ে চলে যাওয়ার ঘটনার লিখিত অভিযোগ আসেনি। সেরকম কিছু ঘটে থাকলে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। বিষয়টি তদন্ত করে দেখব। 

    এদিন ইংলিশবাজারের আরেক বাসিন্দা কবিতা মণ্ডল প্রসব যন্ত্রণায় কাতর পুত্রবধূকে নিয়ে মেডিক্যালে এসেছিলেন। তাঁকেও অন্যদের মতো একই সমস্যায় পড়তে হয়েছে। কবিতার কথায়, চিকিৎসক নেই বলে বউমাকে ভর্তি নিতে চাইছে না। এই অবস্থায় অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়াও সম্ভব নয়। আমরা জোর করে ভর্তি করাতে চাইলে বলা হয় তারা কোনও দায়িত্ব নেবে না। রোগীর কিছু হলে দায় পরিজনদেরই। হাসপাতাল থেকে একবার একথা বলার পর কি গর্ভবতীকে এখানে রাখা যায়? 

    শুধুমাত্র গর্ভবতী নয়, মঙ্গলবার অনেক রোগীকেই আউটডোর থেকে এভাবে পরিষেবা না পেয়ে ফিরে যেতে হয়।
  • Link to this news (বর্তমান)