• তদন্ত কতদূর, কাল রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ সিবিআইকে
    বর্তমান | ২১ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: আর জি কর কাণ্ডে সিবিআই তদন্তভার নেওয়ার পর একসপ্তাহ পেরিয়ে গিয়েছে। কত দূর এগল কেন্দ্রীয় এজেন্সি? আগামী কাল, বৃহস্পতিবারের মধ্যেই জানাতে হবে সুপ্রিম কোর্টকে। আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় সর্বোচ্চ আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা গ্রহণ করেছে। মঙ্গলবার ছিল প্রথম শুনানি। সওয়াল-জবাব শেষে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সিবিআইকে তদন্তের ‘স্টেটাস রিপোর্ট’ জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। গত ১৩ আগস্ট মামলাটি সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তদন্ত কতদূর এগিয়েছে, তা জানা যায়নি। দেশের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় অবশ্য এদিন মামলার পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘বিষয়টি স্পর্শকাতর। তাই আপাতত সিবিআই তার স্টেটাস রিপোর্ট আমাদেরই দেবে।’ অর্থাৎ তা প্রকাশ্যে আনা হবে না। তবে এদিনের নির্দেশে সিবিআইয়ের উপর চাপ আরও বাড়ল বলে মনে করা হচ্ছে। 

    গোটা মামলায় কলকাতা পুলিস এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে এদিন ভর্ৎসনা করেছে সর্বোচ্চ আদালত। একের পর এক প্রশ্ন তুলেছেন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জে বি পার্দিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্র—ভোরে দেহ উদ্ধারের পরও এফআইআর করতে এত বিলম্ব কেন? মৃতার পরিবারের হাতে মরদেহ তুলে দেওয়া হয়েছিল রাত সাড়ে আটটার সময়, তাহলে এফআইআর রাত ১১-৪৫ মিনিটে কেন? নির্যাতিতা খুন হয়েছেন জেনেও কলেজের প্রিন্সিপাল বিষয়টিকে আত্মহত্যা বললেন কেন? কেনই বা ইস্তফা দেওয়ার পরেও  অন্য হাসপাতালে তাঁকে দ্রুত পোস্টিং দেওয়া হল? ১৪ আগস্ট মধ্যরাতে আর জি করে একদল তাণ্ডব চালালেও পুলিস কেন আটকাতে পারল না? ভাঙচুরের ঘটনার তদন্তে পুলিস কী করছে, বৃহস্পতিবারের মধ্যে তার রিপোর্টও সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্যকে।

    এদিনের শুনানিতে রাজ্য সরকারের আই‌নজীবী কপিল সিবালকে চেপে ধরেন বিচারপতি জে বি পার্দিওয়ালা। প্রশ্ন করেন, কে প্রথম খবরটা দিল? কে প্রথম এফআইআর করল? কখনই বা হল? সিবাল জানান, প্রথমে অস্বাভাবিক মৃত্যুর কেস রেজিস্টার করা হয়। তারপর মেয়েটির বাবা এফআইআর করেন। তা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি। বলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে খুন। আর এফআইআর রেজিস্টার হচ্ছে রাত ১১-৪৫ মিনিটে? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কী করছিল? সিবাল জবাবে জানান, আনন্যাচারাল ডেথ কেস রিপোর্ট করা হয়েছিল দুপর সওয়া তিনটেয়। মেয়েটির পরিবার মানসিক বিপর্যস্ত ছিল। তাই এফআইআর করতে দেরি করেছে। আর ভাঙচুরের ঘটনায় রাজ্য পুলিস মোটেই বসে নেই। ৩৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআইকে পুরো কেস ডায়েরি তুলে দিয়েছে পুলিস। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো প্রচার প্রসঙ্গও তোলেন সিবাল। বলেন, বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। ময়নাতদন্ত থেকে শুরু করে মৃতার ছবি, ভিডিও আপলোড করা হচ্ছে। এটি বন্ধ হওয়া উচিত। যদিও সুপ্রিম কোর্ট এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কোনও নির্দেশ দেয়নি। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টে আগে মামলার রায় মোতাবেক গাইডলাইন রয়েছে যে, ধর্ষিতার কোনও ছবি বা নাম প্রকাশ করা যাবে না। ফলে বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।’ ময়নাতদন্তে ঠিক কী রয়েছে, তা জানতে চান বিচারপতিরা। রাজ্য সরকার মুখবন্ধ খামে তিন বিচারপতিকে ময়নাতদন্তের তিনটি কপি তুলে দেয়। শুনানি থামিয়ে তা খুঁটিয়ে পড়েন বিচারপতিরা।
  • Link to this news (বর্তমান)