• পিজি-এনআরএস-মেডিক্যাল, অসুস্থকে পরপর ফেরাল শহরের তিন হাসপাতাল
    বর্তমান | ২১ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বিধাননগর: তীব্র শ্বাসকষ্ট। সঙ্গে জ্বর। ঠান্ডা হয়ে আসছিল হাত-পা। হাড়োয়া থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ভোররাতেই রওনা দিয়েছিলেন পরিবারের সদস্যরা। গন্তব্য—পিজি। তাঁদের অভিযোগ, ইমারজেন্সিতে জানিয়ে দেওয়া হয়, এইসব রোগের জন্য এখানে কেন? এনআরএস কিংবা কলকাতা মেডিক্যালে যান। পিজি ফিরিয়ে দেওয়ার পর অ্যাম্বুলেন্স রওনা দেয় এনআরএস হাসপাতালের দিকে। ‘এত মুমুর্ষু রোগী’, এই কথা বলে এনআরএসের জরুরি বিভাগ জানায়, এখানে হবে না। কলকাতা মেডিক্যালে নিয়ে যান। এরপর অ্যাম্বুলেন্সের তৃতীয় গন্তব্য—কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। ‘স্যার নেই’, ভর্তি করলেও চিকিৎসা হবে না, বক্তব্য হাসপাতালের। 

    সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটে। টানা আট ঘণ্টা এক হাসপাতালের ইমারজেন্সি থেকে আর এক হাসপাতালের ইমারজেন্সিতে দৌড়ল রোগীর পরিবার। কিন্তু ভর্তি না করে অসুস্থকে ফিরিয়ে দিল শহরের তিন হাসপাতাল। বাড়ি ফেরার আগে কলকাতা মেডিক্যালে দাঁড়িয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন রোগীর পরিবারের সদস্যরা। এই রোগীর নাম ইশাহক মোল্লা। বয়স ৬৫ বছর। বাড়ি হাড়োয়ায়। তাঁর মেয়ে সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ভোর চারটের সময় বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম। প্রথমে পিজির ইমারজেন্সিতে যাই। ওরা বলল, এখানে কেন নিয়ে এসেছেন? এইসব রোগের জন্য এনআরএস বা কলকাতা মেডিক্যালে যান। তারপর আমরা এনআরএসে গেলাম। সেখানেও ভর্তি নিল না। বলল, খুব অসুস্থ। মেডিক্যালে নিয়ে যান। কলকাতা মেডিক্যালে আসতে জরুরি বিভাগের ভিতরে নিয়ে গেলাম। ঘণ্টা দু’য়েক রাখল। তারপর একজন এসে বললেন, স্যার নেই। ভর্তি করলেও চিকিৎসা হবে না। তারপর ফিরিয়ে দিল। তিনি বলেন, তিনটি হাসপাতালের একটিও ভর্তি নিল না। এখনও এত দুর্ভোগ কেন? বাবার কিছু ঘটে গেলে তার দায় কে নেবে?

    কলকাতা মেডিক্যালেই দেখা গেল আরও এক রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়ার চিত্র। এক যুবক অসুস্থ এক বৃদ্ধকে ট্যাক্সিতে তুলছিলেন। কী হয়েছে? সত্যজিৎ প্রামাণিক নামে ওই যুবক বলেন, বৃদ্ধের নাম অমর রায়। ওঁর কেউ নেই। ফুটপাতের ধারে থাকেন। ভবঘুরে। চারমাস আগে কোমর ভেঙেছে। দাঁড়াতে পারছেন না। পুলিস ওঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। স্থানীয় হিসেবে আমাকেও সঙ্গে পাঠাল। কিন্তু হাসপাতালের ইমারজেন্সিতে বলল, পুরনো কেস। এখন আর ভর্তি হবে না। তাই ফিরিয়ে নিয়ে চলে যাচ্ছি। কোথায় যাবেন? যুবকের উত্তর, আবার ফুটপাতেই রেখে দেব। পুলিসকে বলি। ওঁরা যদি অন্য জায়গায় ব্যবস্থা করে দেন।

    কনক বাহাদুর নামেও অন্য এক রোগী শ্বাসকষ্ট নিয়ে এদিন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে এসেছিলেন। পরিবারের সদস্যরা অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে ভিতরে নিয়ে যান। কিছুক্ষণ পরই আবার অ্যাম্বুলেন্সে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। কী হল? পরিবারের সদস্যদের কথায়, ভিতর থেকে বলল, ভর্তি করার মতো কিছু হয়নি। বাড়িতে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করুন। তাই ফিরে যাচ্ছি। 
  • Link to this news (বর্তমান)