চেম্বারের বাইরে টাঙানো চিকিৎসকদের তালিকা। সেখানে নেমপ্লেটে এখনও জ্বলজ্বল করছে আরজি করের নিহত চিকিৎসকের নাম। যে চেম্বারে বসে রোগী দেখতেন সেই চেম্বারের মালিক ও রোগীরা ঘটনার এতদিন পরেও মেনে নিতে পারছেন না সদাহাস্যময়ী তরুণী চিকিৎসকের এমন মর্মান্তিক পরিণতি। জাস্টিসের দাবিতে তাঁদের চোখেও জল।গত ৯ অগস্ট আরজি কর হাসপাতালের মধ্যেই ধর্ষণের পর নৃশংস ভাবে খুন হওয়া সোদপুরের তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়। ঘটনার পর কেটে গিয়েছে এগারো দিন। এখনও সোদপুর রাজা রোড এবং রহড়ার পাতুলিয়া পঞ্চায়েত মোড়ের কাছে দু’টি চেম্বারে জ্বলজ্বল করছে তাঁর নাম। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই চিকিৎসক হিসেবে সুনাম অর্জন করে নিয়েছিলেন ওই তরুণী।
গরিব কোনও পেশেন্ট এলে তাঁদের থেকে ভিজ়িটও নিতেন না তিনি। পাতুলিয়ায় একটি চেম্বারেই প্রথমে জেনারেল ফিজিশিয়ান হিসেবে রোগী দেখা শুরু করেন তরুণী। তিন বছর ধরে সেখানে চেম্বারে বসলেও কয়েক মাস হলো চেস্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হিসেবেই রোগী দেখা শুরু করেন তিনি। ফিজ় নিতেন ৫০০ টাকা।
সপ্তাহে দু’দিন রোগী দেখার জন্য পাতুলিয়ার ওই চেম্বারে যেতেন তিনি। ১৭ জুলাই শেষবার চেম্বার করেছিলেন তিনি। গত ৯ অগস্ট সন্ধ্যাতেও চেম্বারে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। সেই মতো সে দিন সকালে তিনজন রোগী তাঁকে দেখাবেন বলে নাম লিখিয়ে যান ওই ক্লিনিকে।
ক্লিনিকের কর্মী তুহিনা বিশ্বাস বলেন, ‘তিনজন নাম লেখানোর পর দিদির এক পরিচিতকে আমি ফোন করে জানতে চাই উনি আসবেন কিনা। তখন পরিচিত ওই ব্যক্তি আমাকে জানান, দিদি আর নেই। উনি আত্মহত্যা করেছেন বলে হাসপাতাল থেকে জানিয়েছে। আমার প্রথমে বিশ্বাস হয়নি। ফোন কেটে দিই। তার পর মোবাইল ও টিভি দেখে ভয়ঙ্কর ঘটনাটা জানতে পারি।’
তুহিনার কথায়, ‘এত হাসিখুশি, পজ়িটিভ মেয়ে আত্মহত্যা করবে এটা বিশ্বাস করতে পারিনি।’ পরে নিজে থেকেই ওই তিন রোগীকে ফোন করে তুহিনা জানিয়ে দেন ডাক্তার দিদি অসুস্থ, আসতে পারবেন না। সোদপুর রাজা রোডের কাছে একটি ওষুধের দোকানেও গত আড়াই বছর ধরে ২৫০ টাকা ভিজ়িটে রোগী দেখতেন তরুণী। চিকিৎসকের এমন ভয়াবহ মৃত্যুতে হতবাক তাঁর কাছে চিকিৎসা করানো অনুপ দাস নামে এক রোগী।
পেট ও বুকের সমস্যা নিয়ে নিয়মিত ওই তরুণীর কাছে চিকিৎসা করাতেন অনুপ। তাঁর ওষুধে ধীরে ধীরে সুস্থও হয়ে উঠছিলেন। ওষুধের দোকানের মালিক জয়দেব বসাক বলেন, ‘ম্যাডাম মারা যাওয়ার খবরে অনুপবাবু আমাকে ফোন করে কান্নাকাটি জুড়ে দেন। রোগীদের কাছে তাঁর ব্যবহারে অল্পদিনেই প্রিয় হয়ে উঠছিলেন উনি। তাঁকে নিয়ে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। কোনও গরিব মানুষ তাঁর কাছে দেখাতে এলে ভিজ়িট নিতেন না।’
জয়দেব জানান, কোনও কারণে চেম্বার করতে আসতে না পারলে প্রয়োজনে ফোনেই রোগীকে অ্যাডভাইস দিতেন। মৃত্যুর দু’দিন আগেও বুধবার চেম্বার করেছিলেন। আগে বাবার স্কুটিতে চেপে চেম্বার করতে গেলেও, কয়েক মাস আগে কেনা নতুন গাড়িতে করেই ইদানীং চেম্বারে যেতেন। প্রিয় চিকিৎসকের অপেক্ষায় থাকা ওই রোগীরাও তাই চাইছেন জাস্টিস।